বিল্লাল ঢালী
জীবনের মায়া সবার আছে। সবাই দীর্ঘ বছর বেঁচে থাকতে চায়। কিন্তু বাঁচার জন্যে নিয়মের গন্ডিতে কতোদিন বেঁচে থাকা যায়? বাংলায় প্রবাদ আছে, অভাব যখন ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ায়, ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়। মানুষ বাঁচার জন্যে আয়-রোজগারের প্রয়োজন। ঘরে বসে বাঁচার জন্যে যুদ্ধ করে। আসলে কি বাঁচার উপায় আছে? আছে। যদি একজন মানুষ ঘরে বসে তার প্রয়োজনীয় সব কিছু পায় । তবে সে বেঁচে থাকতে পারে।
আমাদের দেশ উন্নয়নশীল দেশ। উন্নত নয়। মহামারি করোনার কারণে সারাবিশ্ব দিশেহারা। উন্নত দেশগুলো অবস্থা সবচে ভয়াবহ। উন্নত দেশগুলোর সামর্থ আছে নিজেদের জনগণকে বসিয়ে খাওয়ানোর। তারা করছেও তাই। দেখার বিষয় হচ্ছে, তারা কতোদিন তাদের এ কার্যক্রম ধরে রাখতে পারে। কারণ বসে খেলে একসময় রাজার গোলাও শেষ হয়। উন্নত দেশের কথা ভিন্ন। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের কথা আলাদা। আমাদের দেশের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে দিন এনে দিন খাওয়া ক্ষুদ্র শিল্প ইত্যাদির সাথে জড়িত। তাদের দিনের পর দিন ঘরে বসে খাওয়ার সামর্থ নেই। আমাদের সরকার যতোই বলুক আমাদের সব আছে। আমরা মানুষকে ঘরে রাখতে পারবো। আসলে বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে। করোনা ভাইরাসের কারণে গত মাসখানেক সারা দেশের মানুষ কর্মহীন হয়ে আছে। মানুষ কর্মহীন হলেও পেট কর্মহীন নেই। পেটের তিনবেলা খাবার প্রয়োজন। নয়তো সেও যন্ত্রণা দেয়। মৃত্যু যন্ত্রণা জানি না কেমন হয়; তবে ক্ষুধার যন্ত্রণা উপলদ্ধি করা যায়।
সারা দেশের মানুষ কিছুটা হলেও এখন ক্ষুধার যন্ত্রণা উপলদ্ধি করতে শুরু করেছে। মানুষের মাঝে একটা ধারণা আসতে শুরু করেছে, অসুখ হলেও মারা যাবো, ঘরে থাকলে না খেয়ে মারা যাবো। আল্লাহ কপালে লেখা যা রেখেছে তাই হবে। তাই ঘরে বসে ক্ষুধায় না কেঁদে খেয়ে মরবো সেটাই ভালো।
এ কথাগুলো সামনে আসার কারণ আছে। আমরা সামাজিক জীব। সমাজে আমরা পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকি। পরিবার বলতে আমরা একা একা থাকি সেটা নয়। মা বাবা ভাই বোন নিয়ে আমাদের পরিবার। একজন বাবা বা মা বা ভাই যখন ঘরে দেখে পরিবারের তাদের পরিবারের লোকজন না খেয়ে আছে এটা তাদের কাছে মেনে নেয়ার মতো নয়। কেউ মানতে পরবে না। মানা যেতো যদি সে জানতো আজ না খেয়ে থাকলেও কাল থেকে খাবার সমস্যা হবে না। তবে হয়তো মনকে বুঝানো যেতো একদিন বা দুই দিন কষ্ট করি।
মহামারি করোনা সারা বিশ্বকে যেভাবে বন্দি করে আছে। তাতে কেউ বলতে পারছে না কতোদিন পর মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে। একমাস লকডাউনে আমাদের দেশ। আমাদের দেশে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যারা কর্মরত আছেন তাদের প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ধীরে ধীরে হাত উপরে উঠাতে শুরু করেছেন। যেমন গার্মেন্টস মালিকরা এখনি বলছে, যারা পুরো মাস কাজ করেনি তাদের ৬০ভাগ বেতন প্রদান করা হবে। তাও ভালো, কিছু মানুষ কোনো মতে চলতে পারবে। কিন্তু বিপনী বিতানে চাকুরী করে অথবা যারা দিন আনে দিন খায় তাদের কী হবে? তারা কার কাছে যাবে? সরকার কতোটুকুই দিতে পারবে? করোনা ভাইরাসের প্রর্দুভাবে আমাদের দেশের মানুষ একটি চিন্তায় ধাবিত হচ্ছে। করোনা ভাইরাস না ক্ষুধার যন্ত্রণা। জানি না এর পরিত্রাণ কোথায়?
লেখক পরিচিতি: সাংবাদিক। শপথ নিউজ ডট কম ও সাপ্তাহিক শপথ।