মোঃ সবুজ হোসাইন:
শীতকালীন সময়ে অনূকুল আবহাওয়া আর সঠিক পরিচর্যায় সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে করলা চাষে।
হাইমচরের দুর্গম চর এলাকায় প্রচুর পরিমাণে ফলছে করলা ও মৌসুমি শীতকালীন সবজি।
পাশাপাশি, লাউ, কুমড়া, বরবটি, সিম চাষাবাদ হয়ে থাকে মাঁচা পদ্ধতিতে। নদীপথে যাতায়াত ব্যবস্থা আর ভালো বাজারদর পাওয়ায় বর্ষায় জোয়ারের পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া ক্ষতি এবার পুষিয়ে নিচ্ছেন চরাঞ্চলের অনেক কৃষক। করলা চাষাবাদের জন্য জমি তৈরি, বীজ বপন, কীটনাশক ও মাঁচা তৈরি এবং শ্রমিকদের পারিশ্রমিকসহ এক বিঘা জমিতে কৃষকের খরচ হয়েছে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। ফলন ও বাজারদর আশানুরূপ হলে ওই জমি থেকে প্রায় এক দেড় লাখ টাকার করলাসহ সবজি বিক্রি করা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চলতি মৌসুমে হাইমচর উপজেলার গাজীপুর, নীলকমল, বাহেরচর, ইশানবালা, সাহেবগঞ্জ, মিয়ার বাজার, মাঝির বাজার, বাগা সরদারকান্দি, নতুন বাজার, এলাকায় মাঁচা পদ্ধতিতে করলার চাষাবাদ হয়েছে। এসব এলাকায় বর্ষাকালীন ও শীতকালীন ফসল আবাদ হয়ে থাকে, করলা চাষে বেশ লাভবান চর এলাকার এসব কৃষক। এতে উপজেলার সদর আলগী বাজার, তেলীরমোড় লঞ্চঘাট, চরভৈরবী বাজার, হাইমচর বাজার ও ফরিদগঞ্জ, রায়পুরের দুই উপজেলার পাইকারেরা নদীরপাড়ে অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠা সবজির আড়তে। প্রতিদিন ভোরে ক্রেতা-বিক্রেতার হাক ডাকে সরগরম থাকে চর থেকে আশা সবজিতে।
হাইমচর উপজেলার নদীবেষ্টিত তেলীরমোড় বাজার, হাইমচর বাজার, চরভৈরবী লঞ্চঘাটের ৩টি স্থানে অস্থায়ী আড়তে প্রায় ২-৩ লাখ টাকার সবজি বিক্রি হয় প্রতিদিন। এখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী করলা ক্রয় করে চাঁদপুর, রায়পুর, উপজেলার আশেপাশের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যান পাইকারি ক্রেতারা। প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ২০০ জন পাইকারি ক্রেতার আগমন ঘটে নদীরপাড়ের এসব আড়তে।
সাহেবগঞ্জ বাজারের কৃষক চান্দু মোল্লা বলেন, বীজ বপনের ৪০ দিন পর থেকে পরবর্তী ৬০ দিন করলার ফলন পাওয়া যায়। চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে ও মাচায় চাষাবাদ করে এক লাখ টাকার করলা বিক্রি করেছেন তিনি। শ্রমিকের মজুরি ও কীটনাশক ব্যবহার করে পুষিয়ে নিয়েছি। করলার পাশাপাশি অন্যান্য ফসলেও বেশ লাভজনক। তবে কৃষি অফিসের আরও সহযোগিতা পেলে ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছি। আরও করলা অনায়াসে বিক্রি করা যাবে বলেও জানান তিনি।
ব্যবসায়ী তাহিদ বলেন, হাইমচরের চরাঞ্চল থেকে নদীপথে ট্রলার যোগে আসা সতেজ সবজি কিনে অল্প সময়ে হাট বাজারে বিক্রি করতে পেরে লাভবান হচ্ছি আমরা। তিনি আরো জানান, নদীরপাড়ের অস্থায়ী আড়ৎ থেকে সবজি নিয়ে নিজ উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে, জেলার বিভিন্ন বাজার গুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। যে কারণে চরের করলাসহ বিভিন্ন সবজির চাহিদাও অনেক বেশি।
হাইমচর এরিয়া উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মনির হোসেন বলেন, আমরা চর এলাকাগুলোতে ইউনিয়ন ভিত্তিক কৃষকের তালিকা করে উন্নত মানের সবজি বীজ দিয়েছি। বাকিদের সার, কীটনাশক, পরামর্শ দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মাচায় করলাসহ সবজি চাষে কৃষকদের চাষাবাদে আগ্রহী করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার দেবব্রত সরকার বলেন, হাইমচর উপজেলার মধ্যে চরের ৩টি ইউনিয়নে সবজির চাষাবাদ বেশী হয়। চলতি মৌসুমে উপজেলার প্রায় ৪০১ হেক্টর জমিতে করলাসহ বিভিন্ন ধরণের শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে। চরের জমিসহ রাস্তার পাশে থাকা উঁচু নিচু জায়গায় করলাসহ বিভিন্ন সবজির চাষাবাদে আগ্রহী করে তুলছি কৃষকদের। দু’দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলনে উপজেলার কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছে। সরকারি কৃষি সেবা কৃষকের মাঝে পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।