নজরুল ইসলাম আতিক
চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীতে এমভি ইকবাল হোসন-১ নামক বালুবাহী বাল্কহেড ও মাটি বহনকারী ট্রলারের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়েছে। গতকাল সোমবার ভোর সাড়ে ৬টায় সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের মমিনপুর এলাকায় স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরের শিলুন্দিয়া এলাকার বাসিন্দা মোঃ আওয়াল (৫০), সাহাপুর এলাকার বাসিন্দা মোঃ মোবারক (৪৫), মাধবপুর এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন (৩৫), মোঃ নাসির (৩২) ও কুমিল্লা জেলার তিতাস এলাকার রঘুনাথপুরের বাসিন্দা নজরুল (৩৫)। এ ঘটনায় ট্রলারের ছাদে থাকা আরও ছয়জন সাঁতরে নদী তীরে উঠতে সক্ষম হয়।
এদিকে ঘন কুয়াশায় বাল্কহেড চলাচলের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও এলাকাবাসীর। নৌপথে রাতে ও ঘন কুয়াশায় বাল্কহেড চলাচলের উপর বিআইডবিøউটিএ থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ মালিকপক্ষ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই প্রতিনিয়ত চাঁদপুরের বিভিন্ন নৌপথ চালাচ্ছে তাদের নৌযান। এতে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সর্বশেষ গতকাল ডাকাতিয়া নদীর মমিনপুরের দুর্ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবি নৌপথে রাতে ও ঘন কোয়াশায় এসব বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করা না হলে আরো দুর্ঘটনার শিকার হবে মানুষ।
স্থানীরা জানান, গভীর রাতে এসব বাল্কহেড নদীপথে বেপরোয়া ভাবে চলাফেরা করে। এতে অনেক সময় নদীতে স্থানীয় জেলেরা দুর্ঘটনার শিকার হয়। অনেক সময় নদীতে ছোট ছোট নৌকা দিয়ে মাছ ধরার সময় ওইসব বাল্বহেড তাদের নৌকার উপর দিয়ে উঠিয়ে দেয় বলেও দাবি করেন তারা।
এ বিষয়ে স্থানীয় ৮নং বাগাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন গাজী বিল্লাল জানান, নৌপথের দুর্ঘটনা রোধে প্রশাসনের আরো কঠোর হওয়ার প্রয়োজন। ঘন কুয়াশায় বাল্কহেড চলাচলের কারণে ৫টি তাজা প্রাণ চলে গেল। আমি যতটুকু জানি এসব বাল্কহেড রাতের বেলা বা ঘন কুয়াশায় চলাচলের অনুমতি নেই। তারপরও তারা কিভাবে চলে তা জানি না। তবে এ বিষয়ে প্রশাসনের আরো কঠোর নজরদারির প্রয়োজন। তা না হলে আরো প্রাণ ঝরে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ এর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোঃ রেজাউল করিম জানান, নৌ পথে চলাচলকারী বেশিরভাগ বাল্কহেড নির্ধারিত গ্রেডের কোন মাস্টার বা ড্রাইভার নেই। আমরা রাতে এবং ঘন কুয়াশায় যাতে বাল্কহেড চলাচল না করে সে বিষয়ে নৌ পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও কোস্টগার্ডের নিকট চিঠি ইস্যু করেছি। কিন্তু তারপরও কিছু অসাধু বাল্কহেড ব্যবসায়ী তাদের এমন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আর এতেই এসব দুর্ঘটনা ঘটছে।
নৌ পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, নৌপথের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে নৌ-পুলিশ। তবে তার মধ্যেও কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা এমন কার্যক্রম চালাচ্ছেন। যার কারণে সংগঠিত হচ্ছে এমন দুর্ঘটনা।
তিনি জানান, মেঘনার এই দুর্ঘটনায় ইতিমধ্যে বালুবাহী বাল্কহেড জব্দ করেছে পুলিশ। এ ছাড়াও বাল্কহেডের গ্রীজার ম্যান ইউনুস মিয়া ও সুকানীসহ মোট চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে হবে। তবেই দুর্ঘটনা প্রকৃত কারণ জানা যাবে।