বিল্লাল ঢালী :
চাঁদপুর মতলব উত্তর কলাকান্দা গ্রামের ছেলে মোহাম্মদ হোসেন। বাবার নাম তগদিল হোসেন সরকার। মায়ের নাম লুৎফুন নাহার। দুজনেই জীবিত নেই। বাবা পেশায় ছিলেন কৃষক ও সমাজসেবী। ছোটবেলার স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে শিক্ষক হবেন। সেই স্বপ্ন বুকে লালন করে বাস্তবে দিয়েছেন রূপ। কর্মরত আছেন চাঁদপুরের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে। সম্প্রতি তিনি মুখোমুখি হয়েছেন দৈনিক শপথ পত্রিকার। কথা হয় বিদ্যালয়টির ধারাবাহিক ভালো ফলাফল অর্জনের রহস্যসহ নানা বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিল্লাল ঢালী।
দৈনিক শপথ: কেমন আছেন স্যার?
মোহাম্মদ হোসেন: আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছো ?
দৈনিক শপথ: আপনার ছোটবেলা কোথায় কেটেছে?
মোহাম্মদ হোসেন: ছোটবেলায় মা-বাবার সাথে গ্রামের বাড়িতে থাকতাম। ছেংগারচর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় পড়াশোনা করেছি। সেখান থেকে এসএসসি পাস। তারপর ঢাকায়। আবুজার গিফারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেছি।
দৈনিক শপথ: ছোটবেলার কোন ঘটনা। যা এখনো মনে পড়ে?
মোহাম্মদ হোসেন: তখন দশম শ্রেণীতে পড়ি। একদিন ক্লাসে গণিত শিক্ষক বলল বেত নিয়ে আসতে। লাইব্রেরীতে গিয়ে দেখি বেত নেই। স্যার বেত নিতে বলছে, যেভাবেই হোক বেত নিতে হবেই। খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে অফিস থেকে দা এনে বেত বাণীয়ে আনলাম। দেরি হওয়াতে স্যার উল্টো আমাকে বেত দিয়ে মারলেন। মনে খুব রাগ হল। দুইটা বাড়ি দিয়েছেন। মনে মনে ঠিক করলাম তৃতীয় বাড়ি দেওয়ার সময় হাত দিয়ে বেত ধরবো। আল্লাহর অশেষ রহমত তিনি তৃতীয় বাড়ি দেননি।
দৈনিক শপথ:আপনি ছোটবেলায় কি হতে চেয়ে ছিলেন?
মোহাম্মদ হোসেন: শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। সরকারি হোক আর বেসরকারি। আমি শিক্ষক হবো শুধু এই একটা স্বপ্ন দেখতাম।
দৈনিক শপথ:কেন শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন?
মোহাম্মদ হোসেন: শিক্ষকদের আচার-ব্যবহার, মানবতা, তারা সমাজের জন্য যে কাজ করে তা দেখে আমি উদ্বুদ্ধ হয়েছি।
দৈনিক শপথ:শিক্ষকতা পেশা কখন থেকে শুরু করেছেন?
মোহাম্মদ হোসেন: ১৯৮৪ সালে। পাঁচআনী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় , মতলব উত্তর।
দৈনিক শপথ:শুরুর দিকে কর্মজীবন কেমন মনে হতো?
মোহাম্মদ হোসেন: এ পেশায় আমি নিজেকে ভালোভাবে জড়িয়ে নিয়েছি। বাচ্চাদের কাছে থেকে, তাদের কিছু শিখাতে পারা, এতে আমি আনন্দ পাই। এই পেশা সম্পর্কে আমার খারাপ কোন ধারণা নেই।
দৈনিক শপথ:স্যার হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবছর জেলায় ভালো ফলাফল করে, এর রহস্য কি?
মোহাম্মদ হোসেন: এটা এক ব্যক্তির কাজ না। সবাই মিলেমিশে এ কাজটি করে। এখানে শিক্ষক-ছাত্র অভিভাবক সবার সমন্বয়ে কাজটা হয়। আমি একটা কাজ করেছি শিক্ষকদের বলতে পেরেছি কিভাবে কি করবেন। তারা আমার কথা শুনেছেন। অভিবাবকদের ডেকে এনে তার সন্তানদের সম্পর্কে ধারণা দিয়েছি। সবসময় সুপার ভিশন মনিটরিং করতাম। আমরা ক্লাস মিস করতে দেই না। এটার ক্ষেত্রে কোন অজুহাত দিলেও আমরা শুনি না। শিক্ষকদের বিভিন্ন ভাবে কথা বলে তাদের উদ্ভুদ্ধ করি, ঠিকমতো ক্লাস নেওয়ার জন্য। তারাও কাজটা ঠিক মত করে। আমি প্রায় ক্লাসে গিয়ে বুঝাই। সময় এবং কালের পরিবর্তনে সাথে টেকনিক পরিবর্তন করতে হয়।
দৈনিক শপথ:বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে কতজন শিক্ষক এবং ছাত্র আছে?
মোহাম্মদ হোসেন: বর্তমানে বিদ্যালয় শিক্ষক সংখ্যা কম। মোট ৩৬ জন শিক্ষক আছেন। পোস্ট খালি আছে ১৩ টি। তবে খুব সহসা সংকট কেটে যাবে। আর শিক্ষক নিয়োগের কাজ চলছে। বর্তমানে বিদ্যালয় ছাত্র সংখ্যা প্রায় ১২শ।
দৈনিক শপথ:বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। বিদ্যালয়ের ছাত্ররা কি ডিজিটাল সেবা পাচ্ছে?
মোহাম্মদ হোসেন : হ্যাঁ পাচ্ছে। আমাদের বিদ্যালয় করোনাকালীন সময় শুরু থেকে অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে। আমাদের ফেসবুকে একটা পেইজ আছে। আমরা ছাত্রদের সেখানে যুক্ত করে কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
দৈনিক শপথ:বিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিনোদনের জন্য কি কি ব্যবস্থা আছে?
মোহাম্মদ হোসেন: এখানে তারা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে। জেলা প্রশাসনে ব্যাপক কার্যক্রম আছে সবগুলোতে অংশ নেয়। বেশ কয়েকবার প্রাইজ পেয়েছে। জাতীয় দিবসে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করি। তারা সেখানে অংশগ্রহণ করে। বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক খেলাধুলায় অংশ গ্রহণ করে। তাছাড়া স্কাউট আছে, বিএনসিসি আছে এবং যুব রেড ক্রিসেন্ট এর কার্যক্রম হয়। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
দৈনিক শপথ: আগামী দিনে বিদ্যালয়টিকে কিভাবে দেখতে চান?
মোহাম্মদ হোসেন: আমাদের ছাত্র দের কাছাকাছি এসে শিক্ষকদের সমন্বয় আমরা তাদেরকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই তারা যাতে জীবনমুখী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। মানে শিক্ষার মধ্যে সামাজিক, নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা থাকবে। টেকনিক্যাল বিষয়গুলো থাকবে। একটা মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে তার মধ্যে সকলদিকের গুনাগুন বিদ্যমান থাকতে হবে। তাহলে সে মানুষ। আমাদের বিদ্যালয়ের একটা ছেলে নাসায় কাজ করে। এটা গৌরবের একটা বিষয়। আমরা চাই আমাদের আরও ছাত্র এরকম ভালো ভালো জায়গা কাজ করবে। মানবতার সেবা করবে। সারা বিশ্বের মানুষের সেবা হোক তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
দৈনিক শপথ:ছাত্র এবং অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?
মোহাম্মদ হোসেন: অন্যান্য জেলা থেকে জেলার মানুষ অনেক সহনশীল। ছাত্ররাও সহনশীল। তাদেরকে বুঝালে বুঝে। চাকরি জীবনে অনেক জেলায় চাকরি করেছি। নিজ জেলা বলে নয়, সারা দেশের মধ্যে শান্তির একটা জায়গা চাঁদপুর। অভিবাবকদের বলব আপনার সন্তান কোথায় যায় কার সাথে মিশে কি করে একটু নজর রাখবেন। অন্যের সন্তানকে নিজের সন্তান ভাববেন। কেউ অন্যায় করতে দেখলে প্রতিবাদ করবেন। অন্যায় প্রশ্রয় দেবেন না। আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিখবে আপনার কাছ থেকে। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলবো, এখন শেখার সময়, তোমরাই একদিন জাতির ভবিষ্যৎ। তোমাদের হাতেই দেশের সুখ শান্তি। খারাপ কর্মকাণ্ড কখনো ভালো কিছু উপহার দেয় না। সত্য ও ন্যায়ের পথে চলো। সাফল্য তোমার কাছে আসবে।
মোহাম্মদ হোসেন :স্যার দৈনিক শপথ পত্রিকাকে আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
প্রধান শিক্ষক: আপনাকে এবং আপনার পত্রিকার সকলকে ধন্যবাদ।