বিল্লাল ঢালী
সদা হাস্যজ্জল একজন মানুষ মোঃ জয়নাল আবেদীন। চাঁদপুর শহরে তাকে চেনেন না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। পেশায় একজন স্কুল দপ্তরি। তিনি তার কর্ম দিয়ে গড়ে তুলেছেন ভালোবাসার জগৎ। ভালোবাসার টানে প্রায় সময় দূর-দূরান্তে কর্মজীবনে ব্যস্ত থাকা স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা ছুটে আসে দেখা করতে।
মা ফাতেমা বেগম। একজন গৃহিনী। চার ভাই ও পাঁচ বোন নিয়ে পরিবার। ভাই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় মোঃ জয়নাল আবেদীন। চার ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই মারা গেছেন। তিনি পেশায় ছিলেন ড্রাইভার। বাকি দুই ভাইয়ের মধ্যে একজন চাকরি করেন অন্যজন করেন ব্যবসা। তিন ভাইয়ের মধ্যে মেজ ভাইয়ের সাথে বনিবনা নেই। তাই তিনি আলাদা থাকেন। খোঁজ রাখেন না সংসারের। মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন ছোটবেলা থেকে কষ্ট করে মানুষ করার চেষ্টা করেছেন সব ভাই-বোনকে। বিয়ে দিয়েছেন পাঁচ বোনকে। ধরে রেখেছেন সংসারের বন্ধন।
সংসার বাঁচাতে এগোতে পারেননি পড়াশোনায়। পড়াশোনা করেছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। খুব ছোটবেলা থেকেই কষ্ট করে যাচ্ছেন পরিবারের জন্য। কষ্টের পরও ভাগ্য বদল হয়নি তার। আজও কাজ করে যাচ্ছেন বাঁচার তাগিদে। বাবার নাম মোঃ দেলোয়ার হোসেন। পেশায় ছিলেন ব্যবসায়ী। ১৯৭১ সালে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিল শহরের ৫ নং ঘাটে। যুদ্ধের সময় প্রতিষ্ঠানের সবকিছু লুট করে নেয় ডাকাতরা। সেই ধাক্কা সামলে হয়নি ঘুরে দাঁড়ানো। বন্ধ হয়ে যায় আয় রোজগারের পথ। তখন বাবার সাথে সংসারের হাল ধরেন তিনি। যা আজও ধরে রেখেছেন।
জীবনের প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন কিংকং ফ্যাক্টরিতে। সেখানে কয়েক বছর কাজ করার পর কাজ নেন চাঁদপুর শহরের কালীবাড়ি একটি দোকানে। তখন তার খালাতো ভাই কাজ করতো চাঁদপুর প্রেসক্লাবে। একসময় খালতো ভাই প্রেসক্লাবের চাকরি ছেড়ে চাঁদপুরের মহিলা অধিদপ্তর শাখায় চাকুরি করেন। সেই সুবাদে মো: জয়নাল আবেদীন চাকরি পান প্রেসক্লাবে। বাড়তি আয়ের জন্য চাকরির পাশাপাশি করতেন হকারি। একসময় প্রেসক্লাবের উদ্যোগে তৈরি হয় আজকের উদয়ন স্কুল। স্কুল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার শুরু থেকেই কাজ করছেন সেখানে। বর্তমানেও কর্মরত আছেন এই প্রতিষ্ঠানে।
বিদ্যালয় ছোট থেকে বড় হয়েছে। নার্সারি ছাত্র-ছাত্রীরা আজ বড় হয়ে কর্মরত দেশের নানা প্রান্তে। প্রতিষ্ঠান আজও ভুলে যায়নি তাকে। ভুলে যায়নি এই স্কুলে পড়াশোনা করা প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীরা। যখনই সুযোগ পান চলে আসেন অনেকে তার সাথে দেখা করতে। ছোট ছোট বাচ্চাদের স্কুল শুরু থেকে ভালোবাসা দিয়েছেন অগাদ। আজও দিয়ে যাচ্ছেন নির্দ্বিধায়।
মোঃ জয়নাল আবেদীন কর্মজীবন নিয়ে বলেন, বাবার আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি। কাঁধে তুলে নিয়েছি সংসারের দায়িত্ব। চেষ্টা করেছি যথাসাধ্য সবাইকে ভালো রাখার। সংসার চালিয়ে রাখতে কষ্ট করতে হয়েছে অনেক। অনেক জায়গায় কাজ করেছি। উদয়ন স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে কাজ করে যাচ্ছি। আজও কাজ করছি এ প্রতিষ্ঠানে। বিদ্যালয়ে কাজ করার সময় চেষ্টা করেছি ছোট ছোট বাচ্চাদের যত্ন করতে। তাদের ভালোবাসা দিতে। অনেক সময় বিদ্যালয়ে বাচ্চারা বমি করে, প্রসাব করে দেয়। আমি চেষ্টা করেছি অভিভাবকের মতো তাদের দেখেশুনে রাখতে। সে পরিশ্রমের ফল এখন পাচ্ছি। অনেক সময় প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীরা এসে খোঁজ খবর নেয়। জীবনে কষ্টের মাঝে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এ ভালোবাসাটুকুই আমার প্রাপ্তি। ভালোবাসায় কষ্ট মনে থাকে না।