স্টাফ রিপোর্টার:
বিভিন্ন জায়গা থেকে কুঁড়িয়ে আনা গাছের পরিত্যক্ত শেকড়, গুঁড়ি বা কাঠ দিয়ে চাঁদপুরের শাহরাস্তির শিল্পী সমীরণ দত্ত সৃষ্টি করছেন দৃষ্টিনন্দন সব শিল্প। পরিত্যক্ত শেকড়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে গড়ে তুলছেন এক ব্যতিক্রমী শিল্পকর্ম। শুধু মনের টানেই এ কাজ করেন তিনি। ভাড়া জায়গায় স্থাপিত তার এই সংগ্রহশালার নাম দিয়েছেন ‘মন বাগান’। তার এ কর্ম দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন ছুটে আসে দর্শনার্থীরা।
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ঘুঘুশাল গ্রামের সমিরন দত্ত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে একটি গার্মেন্টস কোম্পানিতে হিসাব রক্ষক হিসেবে যোগ দেন। একদিন রাস্তায় একটি গাছের গোড়ালি কুড়িয়ে পেয়ে তা দিয়ে তৈরি করেন বিশেষ অবয়। এরপর থেকেই পরিত্যক্ত কাঠ ও গাছের শিকড় দিয়ে সুনিপুন হাতে তৈরি করেছেন বিভিন্ন শিল্পকর্ম। কুড়িয়ে আনা কাঠের টুকরো, ছোট-বড় মৃত কিংবা কেটে ফেলা গাছের শিকড়-বাকড়, পরিত্যক্ত সামগ্রী নিয়েই শিল্পী সমীরণ সাজিয়েছেন তার স্বপ্নের এই বাগান। ব্যবসা নয় ভালোবাসার টানেই করেন এই শিল্পচর্চা।
এ বিষয়ে ভাস্কর শিল্পী সমীরণ দত্ত বলেন, ফেলে দেয়া কাঠ, শেকড়-বাকড় দিয়ে মূলত সাজানো মণ বাগান। শিরীষ কাগজ দিয়ে ঘষে তৈরি করা হয় অবয়ব শিল্পকর্ম। গত ২৪ বছরে প্রায় ৩ হাজারেরও বেশি ভাস্কর্য এবং ব্যবহারের শিল্পকর্ম তৈরি করা হয়েছে। এখন শিল্পকর্ম করছি, সামনে আরো করবো। মন বাগানে বাচ্চাদের জন্য আলাদা খেলার যায়গা রয়েছে। বর্তমানে ‘মন বাগানে’ প্রবেশ করতে কোন টাকা লাগে না। তবে সহসাই সাধারণের জন্য প্রবেশ ফি করা হবে।
জানা গেছে, চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ঘুঘুশাল গ্রামে নিজ এলাকায় ৫৭ শতক জমি ভাড়া নিয়ে শুরু করেন তার শিল্পকর্ম। তার শিল্পকর্মগুলোর সবই কুঁড়িয়ে আনা কাঠ আর শিকড় দিয়ে তৈরি। টেবিল-চেয়ার-সোফা, ডাইনিং টেবিল, বাচ্ছাদের নানা রকম খেলনা, কাঠের তৈরি হাতি, ঘোড়া, মাছ, পাখি ও অন্যান্য জীবজন্তু অবয়ব আকৃতি দিয়ে তৈরি করেছেন নান্দনিক এসব আসবাবপত্র।
এদিকে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শিশু থেকে কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীরা সেখানে আনাগোনা দেখা যায়। শখের বসে কেউ কেউ নিজের পছন্দের আসবাবপত্রটি কিনে নিয়ে যান। সবুজের মাঝে শিকড়ের আবিস্কার-দুয়ে মিলে গ্রামীণ জনপদের এক শৈল্পিকতা মন কড়ে নেয় সবার।
মণ বাগানে ঘুরতে আসা অভিজিত ও সায়মা বলেন, কাছের শেকড়-বাকড় দিয়ে যে এত সুন্দর ভাস্কর্য তৈরি করা যায়, তা এখানে না আসলে বুঝতে পারতাম না। সমীরণ তার শিল্পকর্ম দিয়ে সাজিয়েছেন মন বাগান। এখানে যে কেউ আসলে মুগ্ধ হবে। তার এই শিল্পকর্ম আন্তজার্তিক মানের। আশা করি একদিন দেশে ছেড়ে বিদেশেও তার শিল্পকর্ম পরিচিতি পাবে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, আমি নিজেও সমীরণ দত্তের মন বাগানে ঘুরে এসেছি। কাঠ, শেকড়-বাকড় দিয়ে ব্যতিক্রমী চিন্তা ভাবনা ফুঁটিয়ে তুলছেন তিনি। যারা শিল্প-সাহিত্য নিয়ে কাজ করেন, সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারাও যেনো এগিয়ে আসে। জেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন মেলা অনুষ্ঠানে সমীরণ দত্তের এই শিল্পকর্ম তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।