ইকবাল বাহার:
চাঁদপুরের ৮টি উপজেলায় গত ৪ মাসে সবমিলিয়ে প্রায় ২ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে যেখানে প্রতিদিন সারাদেশে প্রায় ২৫শ মানুষ মারা যান। এর মধ্যে প্রায় ৬৫ ভাগ বিভিন্ন অসংক্রামক ব্যধিতে মারা যান এবং প্রায় ২৫ ভাগ মানুষ মারা যান বার্ধ্যক্যজনিত কারণে।
চাঁদপুর স্থানীয় সরকার উপপরিচালক বিভাগের সুত্র মতে, গত চারমাসে চাঁদপুর সদর ও চাদঁপুর পৌরসভায়( ০-৪৫) মাসের ১০২ জন নবজাতকের মৃত্যু হয়, ৪৫ দিন থেকে ১ বছর বয়সি ১১৭জন শিশুর মৃত্যু হয় এবং ১ বছরের উর্ধ্বে ১৪ জন মানুষের মৃত্যু হয়। ফরিদগঞ্জ ও পৌরসভায় (০-৪৫) মাসের ৮০জন নবজাতক মৃত্যু হয়, ৪৫ দিন থেকে ১ বছর বয়সি ১৫৩ শিশুর মৃত্যু হয় এবং ১ বছরের উর্ধ্বে ১৪৫ মানুষের মৃত্যু হয়। হাজীগঞ্জ ও পৌরসভায় (০-৪৫) মাসের ৯৯ জন নবজাতকের মৃত্যু হয়, ৪৫ দিন থেকে ১ বছর বয়সি ১৩৩ জন শিশুর মৃত্যু হয় এবং ১বছরের উর্ধ্বে ১৩৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়। কচুয়া ও পৌরসভায় (০-৪৫) মাসের ৫৪ জন নবজাতকের মৃত্যু হয়, ৪৫ দিন থেকে ১ বছর বয়সি ৪৮ জন শিশুর মৃত্যু হয় এবং ১বছরের উর্ধ্বে ১২৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়। শাহরাস্তি পৌরসভায় (০-৪৫) মাসের ৯৯ জন নবজাতকের মৃত্যু হয়, ৪৫ দিন থেকে ১ বছর বয়সি ১৩৩ জন শিশুর মৃত্যু হয় এবং ১বছরের উর্ধ্বে ১৩৮ মানুষের মৃত্যু হয়।
হাইমচর পৌরসভায় ( ০-৪৫) মাসের ১৫ জন নবজাতকের মৃত্যু হয়, ৪৫ দিন থেকে ১ বছর বয়সি ১১জন শিশুর মৃত্যু হয় এবং ১বছরের উর্ধ্বে ১৯ জন মানুষের মৃত্যু হয়। মতলব উত্তর পৌরসভায় (০-৪৫) মাসের ৫১ জন মৃত্যু হয়, ৪৫ দিন থেকে ১ বছর বয়সি ৪৮ জন শিশুর মৃত্যু হয় এবং ১বছরের উর্ধ্বে ৫৯ মানুষের মৃত্যু হয়। মতলব দক্ষিণ পৌরসভায় (০-৪৫) মাসের ৩৯ জন নবজাতকের মৃত্যু হয়, ৪৫ দিন থেকে ১ বছর বয়সি ২৯জন শিশুর মৃত্যু হয় এবং ১বছরের উর্ধ্বে ১০ জন মানুষের মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২০ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি) তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পের আওতায় প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। গত ২৮ শে জুন সোমবার এটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে সংস্থাটি। সেখানে দেখানো হয়েছে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। ২০২০ সালে গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ বছর ৯ মাস ১৮ দিন। ২০১৯ সালের হিসাবে এটি ছিল ৭২ বছর ৭ মাস ৬ দিন। এ হিসাবে এক বছরের মধ্যে প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেড়েছে দুই মাস ১২ দিন। পুরুষের তুলনায় নারীর গড় আয়ু বেড়েছে। বর্তমানে নারীর গড় আয়ু ৭৪ বছর ৬ মাস আর পুরুষের ৭১ বছর ২ মাস ১২ দিন।
সেই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ৪৬ লাখ ৪০ হাজার এবং মহিলার সংখ্যা ৮ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার জন। দেশের মোট জনসংখ্যার ৮৮ দশমিক ৪ শতাংশ মুসলমান এবং হিন্দুসহ অন্যান্য হচ্ছে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে ছিল ৬৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এইচআইভি-এইডস সম্পর্কে জানে দেশের ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ, যা আগের বছর ছিল ৭০ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া দেখা যায়, পুরুষের বিয়ের গড় বয়স কমে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ১ বছর, যা ২০১৯ সালে ছিল ২৬ দশমিক ৩ বছর। এদিকে মহিলাদের বিয়ের গড় বয়স বেড়ে হয়েছে ২০ দশমিক ৮ বছর, যা আগের বছর ছিল ২০ দশমিক ৫ বছর। বলা হয়েছে, ভারত, পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেশি।
উল্লেখ্য বাংলাদেশ জনবহুল দেশ হওয়ার সত্ত্বেও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য আছে। একজন মা এখন গড়ে দুটি সন্তানের জন্ম দেন। এখন থেকে ৫০ বছর পেছনে তাকালে দেখা যাবে, তখন একজন মা গড়ে ছয়টি সন্তানের জন্ম দিতেন। দেশের মানুষ এখন শিক্ষিত ও সচেতন, এটি তারই প্রমাণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩০ শতাংশে, যা আগের বছরে ছিল ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এছাড়া মোট প্রজনন হার ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, প্রতি হাজারে মাতৃমৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৩ জন এবং ১৫ বছর ও তার ঊর্ধ্বে নারী শিক্ষার হার ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ। আরও দেশে বিদ্যুৎ সুবিধা আছে ৯৬ দশমিক ২ শতাংশ পরিবারের এবং স্যানিটারি টয়লেটের সুবিধা আছে ৮১ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবারে। ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনসংখ্যা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ, এর মধ্যে পুরুষ ৫২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং মহিলা ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
এ প্রসঙ্গে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, প্রতিটি উপজেলা ও পৌরসভা থেকে মাসিক সমন্বয় সভায় আমাদের কাছে জন্ম ও মৃত্যুর তথ্যর প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেই হিসাবে গত চার মাসে প্রায় ২ হাজার মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর রেকর্ড আমাদের কাছে রয়েছে।