বিল্লাল ঢালী:
আশঙ্কাজনক হারে কমছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের কৃষি জমি। মাত্র ২৫ বছরেই আবাদি জমির পরিমান কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। ১৯৯৫ সালে পরিপূর্ণভাবে চালু হওয়ার সময় কৃষি জমির পরিমান ছিলো ১৩ হাজার ৬০২ হেক্টর যা কমে কমে এখন দাঁড়িয়েছে ৬হাজার ৭শ হেক্টরে। এর ফলে স্বভাবতই ফসল উৎপাদনও কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। মূলত অপরিকল্পিত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মৎস্য খামার, ফলের বাগানের মাধ্যমে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতাধীন আবাদি জমি কমার অন্যতম কারণ। যে হারে এখানে ঘরবাড়ি তৈরি করা হচ্ছে, তাতে স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে পারে।
জানা যায়, কৃষি উৎপাদনে সেচ প্রদান, বন্যার ক্ষয় ক্ষতি থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নদী ভাঙন থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে ১৭৫ কোটি ৩লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯৮৭-১৯৮৮ অর্থ বছরে নির্মিত হয় মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প। যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ সেচ প্রকল্প। এর বৃত্তাকার ৬৪ কিঃ মিঃ। সেচ প্রকল্পের জন্য প্রায় সাড়ে ১৭ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে আবাদি জমির পরিমান ছিলো ১৩ হাজার ৬০২ হেক্টর। যা কমে কমে এখন দাঁড়িয়েছে ৬হাজার ৭শ হেক্টরে। ১৯৭৯-৮০ অর্থবছরের পূর্বে খাদ্য উৎপাদন ছিল ২৭ হাজার ১শ মেট্রিক টন। পরে ১৯৯৫-৯৬ সালে প্রকল্প শুরু হওয়ার পর বাৎসরিক খাদ্য উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৮৬ মেট্রিক টন। বর্তমানে ফসল উৎপাদন হয় ৬ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে। যা পূর্বের অর্ধেক।
প্রকল্পটির বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ফসলি জমির ভেতরে বা একাংশে একাধিক ভবন কিংবা খামার বাড়ি গড়ে উঠেছে। বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে জমি। কিছু জমি আছে মাটি ভরাট করার প্রক্রিয়াধীন। সেচ প্রকল্পের ভেতর অনেক পরিবার নদী ভাঙ্গার কারণে নিজেদের বা জমি ক্রয় করে আবাদী জমিতে বাড়ি নির্মাণ করছে। এভাবে অনিয়ন্ত্রিত বসতি গড়ে ওঠার পর চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে সড়ক। ফলে কমছে প্রকল্পের ভেতর আবাদযোগ্য কৃষিজমি।
প্রকল্প এলাকার কৃষক হারুন মিজি ও কামাল হোসেন জানান, ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে অবাধে ঘরবাড়ি, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিরাট বাংলা বাড়ি নির্মাণ করছে। তাই আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। তাছাড়া ফসল চাষের জন্য পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন। প্রয়োজন মতো পানিও পাচ্ছি না। একারণে বছর বছর লোকসান গুণতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে আবাদি জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছি।
আবাদি জমিতে ঘর নির্মাণকারী রাবেয়া খাতুন জানান, দিন দিন সংসার বড় হচ্ছে। ছেলে মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। নাতি-নাতনি হয়েছে। সবাই মিলে বসবাস করার জন্য বাড়তি ঘরের প্রয়োজন। বাড়িতে যা জায়গা ছিল তাতে তো হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে ফসলের জমিতে নতুন ঘর তুলেছি।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুন হাওলাদার জানান, কোথাও কোথাও ফসল আবাদের ধরণ পরিবর্তন হয়ে গেছে। অর্থাৎ অনেক জমিতে ধানের পদলে অন্য ফলল আবাদ হচ্ছে। যদিও বনায়ন, ঘর বাড়ি নির্মাণের কারণে ইতোমধ্যে অনেক জমি কমে গেছে। আমরা জদি আমাদের আবাদি জমি রক্ষা করতে পারতাম। তবে দেশের ধান উৎপাদনে বিরাট ভূমিকা রাখা যেতো। দেখা গেছে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে ফসল উৎপাদনে সমস্যা হয় কিন্তু এখানে বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণ বা খরাতেও সেচ দেয়ার সু ব্যবস্থা থাকায় এখানে সে ধরণের সমস্যা হয় না। সেচ প্রকল্প নিয়ে একটি ডিপিপি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। যদিও তা পুননিরিক্ষণ করে পুনরায় পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা সে মোতাবেক কাজ করছি।