এম এ লতিফ:
‘আমাগো নৌকা মেরামতসহ সব কাজ শেষ হইয়্যা গেছে। এহন গাঙ্গে নামার অপেক্ষায় আছি। আশা করছি এবার মাছ পামু। অভিযানের সময় দেখছি যারা গাংগে নামছে তারা অনেক মাছ পাইছে। তাই আল্লাহার রহমতে আমরাও অনেক মাছ পামু। আর যদি পাই তহইলে ধারদেনা শোধ করতাম পারমু’ বলে জানান চাঁদপুরের আনন্দ বাজার এলাকার জেলে খালেক সর্দার।
তিনিসহ আরো একাধিক জেলে বলেন, এবছর আমাগো চাঁনপুরের জেলেরা ইলিশ পায় নাই। তারা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাইছে। অনেকে আবার দেনাও হইয়া গেছে। তয় আইজ রাত থেইক্কা মাছ ধরা শুরু হইবো, আর মাছ পাইলে খাইয়া-দাইয়া দেনাও শোধ করতে পারমু।
এদিকে আজ শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষায় ‘ইলিশ প্রজনন মৌসুম’। দীর্ঘ ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে অবশেষে রাত ১২টার পর থেকেই চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনার ৭০ কিলোমিটারসহ উপকূলীয় ৬টি অভয়াশ্রম এলাকায় শুরু হচ্ছে মাছ শিকার। আর দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে চাঁদপুরের ৪৪ সহ¯্রাধিক জেলে পরিবারে দেখা গেছে উৎসবের আমেজ। দেখে মনে হয় মাছ শিকারে যেন মুখিয়ে আছেন ওইসব জেলেরা।
তবে এবারের প্রজনন মৌসুমেও কতিপয় অসাধু ও মৌসুমী জেলে চষে বেরিয়েছে পদ্মা-মেঘনা। তারা প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অবাধে নিধন করেছে মা ইলিশ। তবে ওইসব জেলেদের আটক করতে নৌপুলিশ, কোষ্টগার্ড, জেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগও নদীতে দিনরাত অভিযান চালিয়েছে। আর ওইসব অভিযানেও আটক হয়েছে প্রায় সহ¯্রাধিক জেলে। ওইসব জেলেদের অনেককে জেল-জরিমানা করা হয়। আবার অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। ওইসব অভিযানে জেলে নৌকা ও প্রচুর পরিমানে ইলিশও জব্দ করে প্রশাসন।
তবে এরপরও অভিযান সফল হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর আমরা মা ইলিশকে নির্বিঘেœ ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে পেরেছি। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারনেও মা ইলিশ নির্বিঘেœ ডিম ছাড়ার একটা জলজ পরিবেশ পেয়েছে। তবে এবার প্রজনন মৌসুমে নদীতে ইলিশের পরিমান ছিল অনেক। তাই কিছু সংখ্যক জেলে ইলিশ ধরলেও আশা করছি এবার সর্বাধিক সংখ্যক ইলিশ উৎপন্ন হবে।
অপরদিকে সরকারের নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ শিকারের জন্য সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে চাঁদপুরের জেলেরা। সরেজমিন চাঁদপুর শহরের বড়স্টেশন, আনন্দবাজার, হরিণা ও বহরিয়া এলাকার জেলে পাড়াগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ওইসব জেলেরা নৌকা মেরামতের পাশাপাশি পুরনো জাল সেলাইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন।
আলাপকালে জেলেরা বলেন, অভিযানের সময় সরকার ২৫ কেজি করে চাল দিলেও আমরা পাই ২০/২২ কেজি। আর এই চাল দিয়েতো আর সংসার চলে না। তাই কেহ কেহ সুযোগ বুঝে নদীতে নামে। আবার অনেকে ধরাও খায়। তয় আমরা নদীতে না নামলেও আশা করছি শুক্রবার রাত থেকে নামবো। আল্লাহ যদি আমাগোরে দয়া করে তাহলে এবার মাছ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তবে এবারের প্রজনন মৌসুম প্রসঙ্গে চাঁদপুরের নৌপুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, নদীতে ইলিশের পরিমান বেশি থাকায় এবছর জেলেরা ছিল বেপরোয়া। এরপরও ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে আমাদের নৌপুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক নদীতে বিচরণ করেছে। সরকারের এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমরা চেষ্টা করেছি। অনেক জেলে আমাদের ভয়ে নদীতে নামেনি। তাই আশা করছি এবার আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়বে।