সাগর আচার্য্য:
চাঁদপুরে ১দিনের নবজাতক সন্তানকে হাসপাতালে রেখেই পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হলেন এক গর্ভধারিণী মা। হাসপাতালে পরিবারের কাছে সন্তানকে রেখে নিজের এইচএসসি পরীক্ষা দিলেন। গতকাল বুধবার সকালে বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে এমন ঘটনা ঘটেছে। পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে সদর হাসপাতালে সদ্য জন্ম নেয়া দুধের শিশুকে আত্মীয়ের কাছে রেখেই পরীক্ষা দিতে চলে আসেন মা। নাম তার শান্তা আনোয়ার।
জানা যায়, ১৪ নভেম্বর মঙ্গলবার চাঁদপুর সদর হাসপাতালে রাত ৮টায় শান্তা আনোয়ারের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক মেয়ে। একদিকে প্রথম সন্তান, প্রথম মাতৃত্বের অনুভূতি। অন্যদিকে পরীক্ষা না দিলে পুরো এক বছর পিছিয়ে যাওয়ার চিন্তা। কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না এই শিক্ষার্থী। অবশেষে ঝুঁকি নিয়েই সদ্য জন্ম নেয়া দুধের সন্তানকে হাসপাতালে রেখেই চলে আসেন পরীক্ষা দিতে। সন্তান ছিলো শান্তা আনোয়ারের মায়ের কোলে। সেদিন এইচএসসি পরিক্ষার প্রথম দিন ছিলো।
এভাবে ১ দিনের বয়সী শিশুকে রেখে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কলেজের অধ্যক্ষ অনেক খুশি হন। পড়াশোনার প্রতি শান্তার একাগ্রতা দেখে সবাই তার প্রশংসা করেন। শান্তা আনোয়ার বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি এই বিদ্যালয় থেকেই ২০১৯ সালের এসএসসি পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন এ+ পেয়ে কৃতকার্য হন।
এ বিষয় জানতে চাইলে শান্তার বাবা কাজী আনোয়ার দৈনিক শপথকে বলেন, মেয়ে ও সন্তানের জীবনের বিষয়টি চিন্তা করে মেয়েকে অনেক নিষেধ করেছি যেন এ পরীক্ষাটা না দেয়। কিন্তু শান্তা কথা শুনেনি।
শান্তা আনোয়ারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, পরীক্ষাগুলো যত কষ্টই হোক আমি বেঁচে থাকলে নিশ্চই পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করবো। আমি যদি সাহস করে পরীক্ষাটা না দিতাম তাহলে একটা বছর পিছিয়ে যেতাম।
বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক মোশারেফ হোসেন দৈনিক শপথকে জানান, শান্তা আনোয়ার যে সাহস করে পরীক্ষা দিয়েছেন তাকে আমি সাধুবাদ জানাই। এভাবে ১দিন বয়সী শিশুকে রেখে শান্তার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ আমাদের প্রতিষ্ঠানের একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এমন সাহসিকতায় পরীক্ষা কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক পড়াশোনার প্রতি শান্তার একাগ্রতা দেখে ভীষণ মুগ্ধ।