মোঃ রাছেল:
২১ আগষ্টের সেই ভয়াবহ দিনটির কথা মনে পড়লে আজও শিউরে উঠি। অনেক সময় ঘুমের মধ্যেও বর্বরোচিত সেই হামলার বিভৎসতা তাড়া করে বেড়ায়। অথচ রাষ্ট্রপক্ষ থেকে একটি বারের জন্যও খবর নেয়নি কেহই। মনের কষ্টে আক্ষেপ করে কথাগুলো বললেন ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় আহত চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পৌর এলাকার পাটিকর বাড়ির কৃষ্ণা পাটিকর।
তিনি শপথকে বলেন, ভয়াবহ সেই ঘটনার ১৮টি বছর পার হলেও তার শরীরে স্পিøন্টার বিদ্ধ হওয়ার দাগ আজও মুছেনি। সেই দাগ বহন করেই অভাব-অনটনের মধ্যেই চলছে আমার কষ্টের জীবন। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই হামলায় নিহত ও আহতদের অনেককেই সহযোগীতা করলেও আমার ভাগ্যে কানাকড়িও জোটেনি।
গ্রেনেড হামলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কৃষ্ণা পাটিকর বলেন, সেই দিন নেত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে আমি বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সমাবেশস্থলে ছিলাম। আমি ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আহসান হাবীব প্রাণজল, দেবীপুর গ্রামের মিজান এবং আমাদের গ্রামের গাজী কামালের বাবা আব্দুল গফুরসহ চারজন ওই সমাবেশে যোগ দেই।
তিনি বলেন, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে মঞ্চে উঠিয়ে দিয়ে মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে নেত্রীর বক্তব্য শুনছিলাম। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে হঠাৎ বিকট আওয়াজের পর দেখলাম নেতা-কর্মীরা মাটিতে ঢলে পড়ছে। কিছুক্ষণ পর দেখি আমার শরীর উষ্ণ উষ্ণ গরম লাগছে। সাথে সাথে আমি আমার শরীরে হাত দেই। চোখের সামনে হাত এনে দেখি তাজা রক্ত। জীবন বাঁচানোর তাগিদে তখন আমিও সবার মত ছুটাছুটি করা শুরু করলাম। হঠাৎ দেখি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বের হওয়ার পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তখন ড. খানকে বাঁচানোর জন্য একটি ভ্যান গাড়িতে উঠিয়ে দেই। আর আমি নিজের জীবন বাঁচাতে ঘটনাস্থলের পাশ্ববর্তী মক্কা ট্র্যার্ভেলসের মালিক জামালের দরজার সামনে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
পরে তারা আমাকে মনোয়ারা হসপিটালে নিয়ে যায়। ওইখানে গিয়ে দেখি প্রাণজল ওই হসপিটালে। পরে প্রাণজল ডাক্তারদের ডেকে এনে আমার পায়ের এবং কোমর থেকে স্পিøন্টার বের করে এবং তার নিকট আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে যায়। অবশেষে সুস্থ হওয়ার পর বাড়ি চলে আসি। পরে বাড়িতে আসলে আমার পরিবার, এলাকাবাসী ও আত্মীয়-স্বজন আমাকে দেখে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। বাড়ি থেকে পরিবারের লোকজন আমাকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। যদিও সেই সময়ে আমি সুস্থ হই কিন্তু দীর্ঘ বছর ধরে এ যন্ত্রণা সঙ্গে নিয়ে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে জীবন কাটছে আমার। শরীরে বৃদ্ধ হওয়া সেই স্পিøন্টারের দাগ আজও মুছে যায়নি।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আহসান হাবীব প্রাণজল বলেন, ওই সমাবেশে আমরা চারজন কচুয়া থেকে যোগ দেই। গ্রেনেড হামলার ঠিক আগ মুহুতেই আমি কৃষ্ণাকে বলে পানি আনতে যাই। তার কিছুক্ষণ পরেই বিকট শব্দের আওয়াজ দলীয় নেতাকর্মীরা এইদিক ওদিক ছোটাছুটি শুরু করছে। এখন মনে হয় পানি আনতে যাওয়াতে আমি প্রাণে বেঁচে গেছি। জীবনের শেষ সন্ধিক্ষণে এসে কৃষ্ণা পাটিকর চিকিৎসার অভাবে দুখে দুখে কাতরাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন কৃষ্ণার মত ত্যাগী কর্মীরা অভিমান করলেও বেইমানি করে না। চিকিৎসার অভাবে কৃষ্ণার যেন মৃত্যু না হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন চৌধুরী সোহাগ বলেন, কৃষ্ণা পৌরসভার পাটিকর পাড়ার আ.লীগের একজন ত্যাগী কর্মী। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় কৃষ্ণা পাটিকর আহত হয়েছে। পরে সে চিকিৎসা নিয়েছে। তবে বর্তমানে তার পরিবার নিয়ে চলাচল এবং চিকিৎসা খরচ যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন অসহায় ও আহত কর্মীদেরকে যেন আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।