মেহেদী হাসান দিপু

মহামারী করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে দিন দিন বেড়েই চলেছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। প্রতিদিনই নতুন করে মৃতের সংখ্যার রেকর্ড যেন বেড়েই চলছে।
কোভিড-১৯ এর তৃতীয় ঢেউয়ের প্রভাব শহরের পাশাপাশি গ্রামেগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ায় তা নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যেই কোভিড-১৯ এর প্রকোপ বিস্তার রোধে আগামী ১লা জুলাই (বৃহস্পতিবার) হতে ৭ দিনের জন্য সর্বোচ্চ বিধিনিষেধ আরোপ করে নতুন করে সারাদেশে লকডাউন দেওয়া হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, আরো এক সপ্তাহ আগে এই লকডাউন দিলে অবস্থার এত অবনতি ঘটতো না। অন্যদিকে নতুন লকডাউন কমপক্ষে ১৪ দিন স্থায়ী না হলে মহামারী করোনার প্রকোপ নিয়ে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে বলে শঙ্কা রয়েছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মনে।
কোরবানির ঈদ এবং অস্থায়ী পশুর হাটকে কেন্দ্র করে বিশেষ পরিকল্পনা না গঠন করতে পারলে মহামারীকরোনার ছোবল আরও শক্তিশালী হতে পারে বলেও শঙ্কা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
অধ্যাপক ডা. রিদওয়ানুর রহমান বলেন, এটা আরও এক সপ্তাহ আগে দশদিন আগে হওয়া উচিত ছিল। আমরা অনেক বিধিনিষেধ দিয়েছি। সাতদিন কোনো লকডাউন হতে পারে না। কমপক্ষে দুই সপ্তাহ দিতে হবে।
আলোচনার এক পর্যায়ে অধ্যাপক ডা বে-নজির আহমেদ মনে হতাশাজনক প্রশ্ন করে বলেন, আমাদের হাজার হাজার গ্রাম আছে, সেখানে কি এটা আদৌ সম্ভব?
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাকে দমিয়ে রাখতে টিকার কোনো বিকল্প নেই। তবে বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী মহামারী করোনার থেকে রক্ষা পেতে আক্রান্তদের চিহ্নিত করে আলাদা করার পরামর্শ দেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগন।
অন্যদিকে ১লা জুলাই (বৃহস্পতিবার) থেকে লকডাউনকে কেন্দ্র করে নানা পেশার মানুষ তাদের কর্মস্থল ত্যাগ করছে তাই বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন সহ লঞ্চ ও ফেরিঘাটেও বাড়তে শুরু করেছে মানুষের ভীড়। জনসাধারণ স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই চলাচলের দরুন বাড়তে পারে করোনার প্রকোপ।
এছাড়াও জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন ৭৭ জন। এই নিয়ে সর্বমোট মৃতের সংখ্যা দাড়ালো ১৪,০৫৩ জনে। শেষ ব্রিফিং অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়েছে ৪,৩৩৪ জন এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮,৮৩,১৩৮ জন। শনিবার (২৬ জুন) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ তথ্যটি নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ২৯৫ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৮৫৪ হাজার জন। এদিন মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১৯ হাজার ২৬২ জনের। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, শনিবার (২৬ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মারা গেছেন আরও ৮ হাজার ৫৫২ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৩৭৯ জন। এ নিয়ে বিশ্বে এখন পর্যন্ত মোট করোনায় মৃত্যু হলো ৩৯ লাখ ২৪ হাজার ৯৭২ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬১ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬১ হাজার ২৮২ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।