হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি
হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জে দুই গৃহবধু আত্মহত্যা করেছে। এছাড়াও হাজীগঞ্জে এক যুবকের সহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। আত্মহননকারী দুই গ্রহবধু হচ্ছেন হাজীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাড্ডা খান বাড়ীর রাজমিস্ত্রি রিপন খানের স্ত্রী নুরুন নাহার (২৭)। নুরুননাহার ঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। অপর নারী ফরিদগঞ্জ উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের হাজী বাড়ির মোহাম্মদ মানিক হাজীর স্ত্রী বাকিরুন আক্তার (২৩)। সে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া হাজীগঞ্জ উপজেলার ৮নং হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের গঙ্গানগর গ্রামের নজরুল ইসলাম মির্জার মেঝো ছেলে মামুন মির্জার রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।
জানা যায়, হাজীগঞ্জে মামুন মির্জা নামে এক ব্যক্তির রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। রোববার ভোর রাতে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মামুন মির্জা হাজীগঞ্জ উপজেলার ৮নং হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের গঙ্গানগর গ্রামের নজরুল ইসলাম মির্জার মেজো ছেলে। গত ৭ মাস আগে শাহরাস্তির দেবকরায় সে বিয়ে করে।
এলাকাবাসী জানায়, হঠাৎ রাতে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে চিকিৎসার জন্য তাকে রাত সাড়ে ১০টায় হাজীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। চিকিৎসারত অবস্থায় ভোরে সে মুত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পুলিশে খবর দিলে লাশ উদ্ধার করে চাঁদপুর মর্গে পাঠায়। রোববার বিকালে মৃতদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
পরিবারের ধারণা, কয়েকদিন ধরে স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া চলছিল। তবে তার গলায় ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে দুজনের ঝগড়া থেকে এ ঘটনা ঘটতে পারে।
হাজীগঞ্জ থানার ওসি আলমগীর হোসেন রনি জানান, আমরা খবর পেয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। মামলা হলে তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।
অপরদিকে হাজীগঞ্জে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে নুরুন নাহার (২৭) নামে এক গৃহবধু। গৃহবধু হাজীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাড্ডা খান বাড়ীর রাজমিস্ত্রি রিপন খানের স্ত্রী। ৯ জানুয়ারি শনিবার রাতে নিজ ঘরের আড়ার সাথে রশি দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। গৃহবধুর রাসেল (১০) ও রিমা (৭) নামে দুইটি সন্তান রয়েছে। কিন্তু ঘটনার সময় তারা বাড়িতে ছিল না বলে জানা গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ রাত ১১ টায় লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসনে। পরে ময়নাতদন্তের জন্যে চাঁদপুর মর্গে পাঠানো হয়। রোববার তার লাশ পারিবারিক কবরাস্থানে দাফন করা হয়েছে।
নিহতের মা রাহিমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের পর থেকে জামাই ও শাশুড়ী ঝগড়া করে এমনকি মানুষিক যন্ত্রণা দিয়ে আসতো আমার মেয়েকে। আমরা এ ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার চাই।
শাশুড়ী বিলকিছ বেগম বলেন, আমার দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলেকে বিয়ে করিয়েছি শান্তির আশায়। ছোট ছেলে বিদেশ। কিন্তু বিয়ের পর পরই তারা আলাদা খায়। ঘটনার দিন বউ দেখি সন্ধ্যায় কোথায় থেকে এসে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। তারপর শুনি সে গলায় ফাঁসি দিয়েছে। আমি অসুস্থ মানুষ তাই বউমাকে দেখার শেষ সুযোগটি পর্যন্ত হয়নি।
স্বামী রিপন খান বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী অসুস্থতার মাঝে দিন পার করছি। ঘটনার দিন বিকাল বেলায় পাশের বাড়ীতে গেলে সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের সময় ঘরে আসে। আমি বড় ছেলেকে দোকানের কাছে খুঁজতে যাই বলে আমার স্ত্রীকে বলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে দেখি সে আত্মহত্যা করেছে।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মাসুদ হোসেন বলেন, আমরা প্রাথমিক ভাবে কোন জখমের চিহ্ন পাইনি। লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসলে জানা যাবে। তবে পরিবারের অভাব কলাহ থেকে এ ধরনের আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে বলে অনুমান হচ্ছে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে বাকিরুন আক্তার (২৩) নামে এক সন্তানের জননী বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। ১০ জানুয়ারি রোববার সকালে উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের হাজী বাড়িতে এ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। নিহত বাকিরুন আক্তার ওই বাড়ির মোহাম্মদ মানিক হাজীর স্ত্রী। দাম্পত্ত জীবনে তাদের মারিয়া নামের তিন বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
মৃত বাকিরুনের স্বজনরা জানান, গত কয়েকদিন পূর্বে বাকিরুনের সাথে পারিবারিক বিষয় নিয়ে তার স্বামীর সাথে মনোমালিন্য হয়। সে জন্য সে রাগে অভিমানে পরিবারের সবার অজান্তে রোববার সকালে কীটনাশক পান করে। স্বজনরা তাকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্মরত চিকিৎসকগণ তাকে চাঁদপুর সরকারি জানার হাসপাতালে রেফার করে। সেখানে নিলে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর কিছুক্ষণ পরেই মৃত্যু হয়।
নিহতের স্বামী মানিক হাজী জানান, গত চার বছর পূর্বে প্রেমের সম্পর্ক করে আমরা বিয়ে করি। কয়েকদিন পূর্বে ওই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তার স্ত্রী আমাকে সঞ্চয়ের কথা বলেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে সামান্য মনোমালিন্য হয়। রোববার সকালে আমি নাস্তা খেয়ে কাজে যাই। পরে জানতে পারি সে বিষ পান করেছে।