রিয়াজ শাওন:
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের অর্থনীতি বিশেষভাবে কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। দেশের বেশিরভাগ মানুষের জীবিকার একমাত্র উৎস কৃষি খাত। সরকার এই খাতকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন সময়ে কৃষকবান্ধব নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে প্রতি বছর কোটিকোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে সরকার সার বিক্রি করছে। গত বছরের ১ আগস্ট থেকে সরকার ডিলার পর্যায়ে ইউরিয়া সারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ২০ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ২২ টাকা নির্ধারণ করেছে। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি ইউরিয়ার সারের বর্তমান দাম ৮১ টাকা। সরকারকে প্রতি কেজিতে ৫৯ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। শুধুমাত্র কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমাতে।
এই সার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা যেন সহজেই সংগ্রহ করতে পারে সেই জন্য সরকার প্রতি ইউনিয়নে একজন করে ডিলার ও কয়েকজন খুচরা সার বিক্রেতা নিয়োগ দেয়। এই সব ডিলারা সরকারের নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি করবে কৃষকের কাছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের সরকারের নিয়োগকৃত ডিলার তার চাহিদা অনুযায়ী সার বরাদ্দ পায়। সেই সারের ৫০% সার খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করবে। খুচরা বিক্রেতা কৃষকের কাছে সার বিক্রি কবে । তবে কৃষক যে কোন ডিলার থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে প্রয়োজনী সার ক্রয় করতে পারবে। এমনটাই বলা হয়েছে ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০০৯ এ ‘ কিন্তু হাজীগঞ্জ উপজেলায় এই সব নিয়ম শুধু কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ।
বাস্তবে হাজীগঞ্জ উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা সরকারের নির্ধারিত মূল্যে সার ক্রয় করতে পারছেন না। সেই সাথে ইউনিয়নে যথেষ্ট পরিমাণ সারও পাচ্ছেন না। ফলে তাদেকে সার কিনতে আসতে হচ্ছে হাজীগঞ্জ বাজারে। এতে একদিকে যেমন প্রচুর অর্থ ব্যয় হচ্ছে। অন্য নষ্ট হচ্ছে সময়, বাড়ছে ভোগান্তি। যদিও ইউনিয়নের ডিলারের কাছেই তাদের কাক্সিক্ষত সার পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বাস্তাবে অধিকাংশ ইউনিয়নে ডিলারের দোকান বা গোডাউন নাই। অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিসিআইসির সার ডিলারের কোন দোকান বা গোডাউন নাই। বিসিআইসি সার ডিলারশীপ পাওয়া এসব সার ব্যবসায়িরা হাজীগঞ্জ বাজারেই সারের ব্যবসা করছেন। ফলে হাজীগঞ্জ বাজার থেকে অধিকাংশ খুচরা সার বিক্রেতাকে সার নিতে হয়। এতে বাড়তি গুনতে হচ্ছে পরিবহন ভাড়া। আর বাড়তি এই ভাড়া সারের সাথে যোগ করে কৃষকের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে প্রতি কেজি বা বস্তাতেই কৃষকদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। অথচ কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিয়েও কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছে না প্রান্তিক কৃষক। সরজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার উত্তর সীমান্তে অবস্থিত দ্বাদশ গ্রাম ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের বিসিআইসি সারের ডিলার হলো মেসার্স লোকনাথ ভেরাইটি স্টোর নামে একটি প্রতিষ্ঠান। যার কর্নধার হলেন সমীর কুমার পাল। প্রতিষ্ঠানটি তাদের দোকানের ঠিকানায় ওই ইউনিয়ানের চেঙ্গাতলী বাজারে তাদের দোকান আর বাকিলা বাজারে তাদের গোডাউন আছে উল্লেখ করেছে। কিন্তু বাস্তবে তেঙ্গাতলী বাজারে মের্সাস লোকনাথ ভেরাইটি স্টোর নামে কোন দোকান পাওয়া যায়নি। এমনি সমীর কুমার পাল নামে কোন ব্যাবসায়ী নাই তেঙ্গাতলী বাজারে। এ বিষয়ে স্থানীয় নবনির্বাচিত মেম্বার ও চেঙ্গাতলী বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সদস্য আউয়াল প্রধানিয়া বলেন, আমি তেঙ্গাতলী বাজারের ব্যবসায়ী। এখানে লোকনাথ ভেরাইটি স্টোর নামে কোন সারের দোকান নাই। সমীর কুমার পাল নামে কোন ব্যবসায়ীই এই বাজরে নাই । আমি জানি আমাদের বাজারে আহসান হাবিব এর সারের দোকান আছে। সেই-ই বিসিআইসি সারের ডিলার। জানা যায়, বাকিলা মধ্য বাজারে অবস্থিত মেসার্স লোকনাথ ভেরাইটি স্টোর। আর এই খানে বসেই তারা সার বিক্রি করছেন। অথচ তাদের দোকান বা গোডাউন থাকার কথা ছিলো দ্বাদশ গ্রাম ইউনিয়ানে।
এই বিষয়ে কর্ণধার সমীন কুমার পাল বলেন, চেঙ্গাতলী বাজারে লোকমান মিয়ার মার্কেটে আমার দোকান আছে। আপনি গিয়ে সেখানে দেখতে পারেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লোকমান মিয়ার মার্কেটে মূলত স্থানীয় খুচরা বিক্রেতা আহসান হাবিব-এর সারের দোকান। আর এই দোকানটিকে নিজের বলে দাবী করেছেন সমীর কুমার পাল। এছাড়াও আহসান হাবিবের সাথে যোগসাজশ করে কখনো কোন বিশেষ দরকার পড়লে এই দোকানেই মেসার্স লোকনাথ ভেরাইটি স্টোরের সাইনবোর্ড টানানো হয়। বাস্তবে দ্বাদশ গ্রাম ইউনিয়নে সমীর কুমার পালের কোন সারের দোকান বা গোডাউনে নাই বলে জানায় স্থানীয়রা।
উপজেলার ২নং বাকিলা ইউনিয়নের বিসিআইসি সারের ডিলার হলেন মেসার্স মেঘনা এজেন্সি নামে একটি প্রতিষ্ঠান যারা স্বত্বাধিকারী হলেন সেলিম মিয়া। প্রতিষ্ঠানটির দাবি বাকিলাতে তাদের দোকান রয়েছে এবং হাজীগঞ্জ বাজারে তাদের গোডাউন রয়েছে। সরজমিনে বাকিলা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, একটি বন্ধ দোকানের উপরে মেসার্স মেঘনা এজেন্সি নামে সাইনবোর্ড লাগানো আছে যদিও প্রোপাইটর মিসেস রওশন আরা একজনের নাম লেখা। তবে এই নামে কোন বিসিআইসি সারের ডিলার নাই। তবে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, মিসেস রওশন আরা হলেন সেলিম মিয়ার স্ত্রী। আর যে দোকানে উওর মেসার্স মেঘনা এজেন্সির সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। এই দোকানটি গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করছে লোকনাথ ভেরাইটি স্টোরের মালিক সমীর কুমার পাল। এই গোডাউনটি কার মেঘনা এজেন্সির নাকি লোকনাথ ভেরাইটি স্টোরের? জানতে চাইলে সমীর কুমার পালের বলেন, এটা আমার গোডাউন। তবে মেঘনা এজেন্সির সাইনবোর্ড কেন লাগালো আছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজনের সাথে আরেকজনের সাথে সম্পর্ক থাকতেই পারে। এটা স্বাভাবিক। সেলিম মিয়ার সাথে আমার ব্যবসা চলে। তিনি বছরখানেক আগে এখানে সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন। তবে তিনি হাজীগঞ্জে ব্যবসা করেন। জানা যায়, যমুনা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকও সেলিম মিয়া।
বাকিলা বাজারে মেঘনা এজেন্সি বা সেলিম মিয়া নামে কোন সারের দোকান আছে কি না? জানতে চাইলে বাকিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, বাকিলা বাজারে সেলিম মিয়ার কোন সারের দোকান বা গোডাউন আছে এমন কোন তথ্য আমার কাছে নাই।
১১ নং হাঁটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের বিসিআইসি সারের ডিলার জামাল-ব্রাদার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান যার কর্ণধর জামাল উদ্দিন। ওই ইউনিয়নের কাঁঠালি গ্রামে নিজের দোকান আছে বলে দাবি করেন তিনি। সরজমিন কাঁঠালি গ্রামের বাদামতলী বাজারে গিয়ে জামাল বাদার্সের কোনো দোকান খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই সাথে জামাল উদ্দিন নামের কোন সার ব্যবসায়ীকে চিনেন না স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় মেম্বার হেলাল পাটোয়ারীর কাছে জানতে চাওয়া হয় জামাল উদ্দিন নামে কোন সারের ডিলার কাঁঠালি আছে কি না? তিনি জানান, আমাদের কাঁঠালিতে জামাল উদ্দিন নামে কোন সারের ব্যবসায়ী নাই। কাঁঠালী বাদামতলী বাজারে রোমান মুন্সির সারের দোকান আছে।
জানা যায়, রোমান মুন্সি মেসার্স নুসরাত এন্টারপ্রাইজের মালিক। তিনি স্থানীয় খুচরা সার বিক্রেতা। তার গোডাউনকেই জামাল উদ্দিন নিজের দোকান দাবি করেছেন। এই বিষয়ে রেমান মুন্সি বলেন, প্রায় বছর খানিক আগে উপজেলা কৃষি অফিসার প্রতি ইউনিয়নে বিসিআইসির সারের ডিলারদের ইউনিয়নে একটি করে গোডাউন বা দোকান নেওয়ার জন্য বলছে। তাই জামাল উদ্দিন আমার গোডাউনে নিজের সাইনবোর্ড টানিয়েছে। তিনি এখানে একবার সার আনছেন আর আনে না। তিনি মূলত হাজীগঞ্জে ব্যবসা করে।
এ বিষয়ে জামাল ব্রাদার্সের কর্ণধর জামাল উদ্দিন বলেন কাঁঠালীতে আমার দোকান আছে। আমি সরকারি নিয়ম মেনে ব্যবসা করি। তবে তিনি ইউনিয়নে সারের দোকান বা গোডাউন না রেখে হাজীগঞ্জ বাজারে কেন ব্যবসা করেন ? এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সব কৃষি অফিস দেখবে। আমরা তাদের সাথে কথা বলেই ব্যবসা করি। ৩নং কালচোঁ উওর ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স কাকুলি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান যার কর্ণধর হলেন শহিদুল ইসলাম মজুমদার। বিসিআইসি সার ডিলারসীপ এর তথ্য প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দিয়েছেন হাজীগঞ্জ বাজার এবং তার গোডাউনের ঠিকানা ও দিয়েছেন হাজীগঞ্জ বাজার। অথচ তার সারের দোকান বা গোডাউন থাকার কথা ছিলো বাজারের অদূরে ৩নং কালচোঁ ইউনিয়নে।
বিসিআইসি নিয়ম অনুসারে ৩নং কালচোঁ ইউনিয়নে ডিলারের একটি দোকান বা গোডাউন থাকার কথা। কিন্তু নাই কেন? এই বিষয়ে শহিদুল ইসলাম মজুমদার বলেন, কালচোঁ ইউনিয়নে আমার দোকান আছে। কিন্তু কোথায়? জানতে চাইলে তিনি তিন চারটি গ্রামের কথা বলছেন। জানা যায় ওই ইউনিয়নের তার কোন দোকানে নেই। তিনি হাজীগঞ্জ বাজারে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছেন। ৯নং গন্ধব্যপুর উওর ইউনিয়নের বিসিআইসি সারের ডিলার মেসার্স আহসান এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বিএম আহসান কলিম থাকেন ঢাকায়। তার সারের দোকান ওই ইউনিয়নের আহাম্মদপুর বাজারে আছে বলে দাবি করেন। সরজমিনে গিয়ে, মেসার্স আহসান এন্টারপ্রাইজ নামে আহাম্মদপুর বাজারে কোন সারের দোকান পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন আহাম্মদপুর বাজারে সারের দোকান হলো জয়নাল আবেদীন নামে একজন খুচরা বিক্রেতার। তারা আহসান কলিম নামে কাউকে চিনেন না। এই বিষয়ে বিসিআইসি সারের ডিলার বিএম আহসান কলিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঢাকা থাকি। ঢাকাতেই ব্যবসা-বাণিজ্য করি। আহাম্মদপুর আমার দোকান আছে। কিন্তু আহাম্মদপুর বাজারে জয়নাল আবেদীন নামে একজনের সারের দোকান রয়েছে। আহসান কলিম নামে কোন ব্যক্তির দোকান নাই। তার দোকান কোথায়? জনাতে চাইলে তিনি বলেন, জয়নাল আবেদীন আমার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। বিস্তারিত তথ্য আমি পরে জানাবো।
আসলেই আহম্মদপুর বাজারে তার কোন সারের দোকান আছে কি না? এই বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী নূরুল রহমান বেলালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নে কাগজে-কলমে বিসিআইসির সারের ডিল আছে। কিন্তু বাস্তবে বিসিআইসির সারের ডিলের কোন দোকান বা গোডাউন নাই । আমি এই বিষয়ে উপজেলা মাসিক সমম্বয় সভায় জোরালো ভাবে কথা তুলছি। তারপর তারা আমার পরিষদের সামনে কাজী মফিজ উদ্দিন সুপার নামে আমারই একটা মার্কেট আছে। সেখান একটা রুম ভাড়া নেয়। এরপর তারা একবার মনে হয় অল্প কিছু সার আনছে আর আনে না। মাত্র এক মাসে তারা এখান ব্যবসা করছে। এখন কিছু সারের আছে এটা জয়নাল বিক্রি করে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএম আহসান কলিম ঢাকা থাকেন। তার বিসিআইসি ডিলারের লাইসেন্স ব্যবহার করে বরাদ্দকৃত সার উত্তোলন করেন জামাল ব্রাদার্সের কর্ণধর জামাল উদ্দিন। এই জামাল উদ্দিনই হলে একটি সিন্ডিকেটের প্রধান। তিনি ৪ টি প্রতিষ্ঠানের সার উত্তোলন করেন। এবং সেগুলো তিনি হাজীগঞ্জ বাজারে থেকেই বিক্রি করেন।
৪নং কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স ইভা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। যার স্বত্বাধিকারী হলেন মোসা: সাবিনা ইয়াসমিন। যিনি কি না জামাল-ব্রাদার্স এর স্বত্বাধিকারী জামাল উদ্দিনের স্ত্রী। বাস্তবে এই মেসার্স ইভা এন্টারপ্রাইজের কোন অস্তিত্বই নেই। স্ত্রী ডিলারশিপের নামে বরাদ্দকৃত সারও উত্তোলন করেন জামাল উদ্দিন। এছাড়াও, ১০ নং গন্ধব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার হাজী মোহাম্মদ রুহুল আমিন ট্রেডার্সের বরাদ্দকৃত সারও উত্তোলন করেন জামাল উদ্দিন। বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন।
যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জামাল উদ্দিন। তিনি দাবি করেন, এইসব প্রতিষ্ঠানের নিজেরাই নিজেদের সার উত্তোলন করে। শুধুমাত্র একসাথে সার আনেন। এছাড়াও, ৬ নং বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স ফজলুল হক, ৮নং হাঁটিলা পূর্ব ইউনিয়নের বিসিআইসি সারের ডিলের মেসার্স আব্দুল কাদের মিয়া ও যমুনা এন্টারপ্রাইজ হাজীগঞ্জ বাজারেই ব্যবসা করেন । ইউনিয়ন পর্যায়ে তাদের কোন গোডাউন বা দোকান নেই। কৃষি অফিস সূত্র জানা যায়, এই বছরের জানুয়ারিতে উপজেলার ১৩ জন বিসিআইসি সার ডিলারের জন্য ইউরিয়া সার বরাদ্দ হয়েছে ৫৮৫ মেট্রিক টন, ফেব্রুয়ারি মাসে বরাদ্দ হয়েছে ৪০০ মেট্রিক টন, মার্চ মাসে বরাদ্দ হয়েছে ৮২ মেট্রিক টন, এপ্রিল মাসে বরাদ্দ হয়েছে ১৩ মেট্রিক টন। এছাড়াও ডিএপি,টিএসপি,এসএসপি,বিএসডিসি চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার একাধিক খুচরা সার বিক্রেতা বলছেন, ডিলারদের কথা ছিল ইউনিয়ন থেকে আমাদেরকে সার দিবে। আমরা সেখান থেকে সার নিবো। কিন্তু তারা ইউনিয়নে সারই বিক্রি করে না। আমাদের সার আনতে হয় হাজিগঞ্জ থেকে। এতে আমাদের বেশি ভাড়া লাগে আর ভাড়ার এই টাকা আমরা কি নিজেদের থেকে দিবো? এই টাকা তো আমরা কৃষকের কাছ থেকেই নেই। ফলে সারের দামি এটু বেশি পড়ে। আমাদের কিছু করার নাই।
এই বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার দিলরুবা খানম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক ইউনিয়নে তাদের নিজস্ব দোকান বা গোডাউন থাকা উচিত ছিল। কিন্তু ইউনিয়নে বাস্তবে তাদের কোন গোডাউন বা দোকান নেই। তাদের অধিকাংশ হাজীগঞ্জ ব্যবসা করেন। যদিও আমি একবার তাদেরকে জোরালো নির্দেশনা দেওয়ার পর তারা ইউনিয়নে একটি করে দোকান ভাড়া নিয়েছেন। তবে তাঁরা সেখানে বেশিদিন ব্যবসা করেন না। আমি এই বিষয়ে জেলা কমিটিকে জানিয়েছি তারা ব্যবস্থা নিবেন। এ বিষয়ে জানতে হাজীগঞ্জ উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম কে একাধিকবার কল দিলেও কল রিসিভ করেননি।