রিয়াজ শাওন:
‘এ কেনো পুকুর চুরি নয়, দিনে দুপুরে সাগর চুরি’। সরকারি খাস জমি লিজ নিয়ে সবার সামনে প্রকাশ্যে দিবালোকে মাটি বিক্রি করেছেন লিজ গ্রহীতা। আর এই সব ফসিল জমির মাটি কেটে রীতিমতো পুকুর তৈরি করে ফেলেছেন একদল ভূমি খেকু সিন্ডিকেট। এতে একদিকে যেমন সরকারি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে অন্য দিকে কমছে ফসিল জমি।
হাজীগঞ্জ উপজেলার ৮নং হাঁটিল পূর্ব ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড বেলঘর গ্রামের বেলঘর পূর্ব মাঠ সূত্রধর বাড়ির সামনের বিলে ২৪ শতাংশ করে দুইটি সরকারি খাস জমির ৪৮ শতাংশ জায়গার মাটি বিক্রি করে দিয়েছে লিজ গ্রহীতারা। আর সেই জমির মাটি ভ্যাকু দিয়ে রাতের আঁধারে কেটে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় শামসুল হক পাটোয়ারীর সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এসব মাটি তারা আবার বিক্রি করে দিয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বাড়িঘর নির্মাণ কাজে ও ব্রিক ফিল্ডে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাটি বিক্রি করে দেয়া একটি জমি লিজ নিয়েছেন হাজী আবুল কালাম। অপর জমি লিজ নিয়েছেন ওহাব আলী পাটোয়ারী। তার কাছ থেকে আবার লিজ নিয়েছেন দুলাল ওরফে জামাল। জামালই জমির মাটি বিক্রি করে দিয়েছে স্থানীয় ভূমি খেকু সিন্ডিকেট মূলহোতা শামসুল হক পাটোয়ারীর কাছে।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিলের মাঝে দুলাল ওরফে জামালের লিজ নেয়া ফসিল জমির উপর রাখা আছে ভ্যাকু। যদিও আনুমানিক ১৫ ফুট গভীর করে জমির চার ভাগের তিন ভাগ মাটি কেটে নিয়ে গেছে আগেই। আর এতে চরম ভাঙ্গন ঝুঁকিতে পড়ে গেছে পাশের অন্যান্য ফসলি জমি। এই জমির পাশের আরো একটি জমির পুরো ২৪ শতাংশ জায়গার মাটি কেটে নিয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন রাতে কাটা হয় মাটি। সেই মাটি ট্রাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন ব্রিক ফিল্ড ও ব্যক্তির কাছে। আর সারারাত ধরে ট্রাক চলাচলের কারণে গ্রামীর সড়কগুলো ভেঙে একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। এই গ্রামের অধিকাংশ সড়ক মাটির তৈরি। যে সব সড়ক পাকা রয়েছে। সেই সব পাকা সড়কগুলোও একেবারে ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ফলে গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। গত ৮-১০ দিন গাড়ি অনবরত চলাচলের কারণে রাস্তার দুইপাশের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ধুলাবালিতে একাকার হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এতে স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানালে তিনি ঘটনাস্থলে এসে গ্রামবাসীদের নিয়ে আলোচনা করে গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। তবে গতকাল রাতে আবার মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় গ্রামবাসী রাস্তায় গাছ ফেলে রাস্তা সাময়িক বন্ধ করে দিলে শামসুল তার দলবল নিয়ে স্থানীয়েদর উপর হামলা চালাতে এসেছে বলেও অভিযোগ করে গ্রামের নিরীহ লোকজন।
এ বিষয়ে লিজ গ্রহীতা দুলাল ওরফে জামালের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এই জমির মালিক তিনি কীভাবে হলেন? উত্তরে তিনি বলেন, এই জায়গা ৯৯ বছরের জন্য লিজ আনছি সরকারের কাছ থেকে। আমি গত ২২-২৩ বছর ধরে খাইতাছি। বছর বছর খাজনা দিতাছি। লিজ নেয়ার একটা দলিলও আছে আমার কাছে।
সরকার কাছ থেকে লিজ নেয়া জমির মাটি আপনি বিক্রি করেন কীভাবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ভুল করে ফেলেছি। আমার এটা অন্যায় হয়েছে। হেয় (শামসুল) আমারে সাথে দুই নাম্বারি করছে। আমার সাথে কথা ছিলো তিন কোপ মাটি নিবো। কিন্তু সে এখন ভ্যাকু দিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছে। হেয় (শামসুল) আমারে ২০-২৫ হাজার টাকা দিছে। আমি গরীব মানুষ।
সরকারি খাস জমির মাটি কেন কেটে নিচ্ছেন? এই বিষয়ে অভিযুক্ত শামসুল হক পাটোয়ারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মাটি কিনেছি। তাই মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছি। আর ঐ যে আমাগো ল²ণ সচিব আছে না? ল²ণ সচিবের একটা ঘর ভিটা বাঁধার জন্য আর বাড়িতে যাওয়ার রাস্তার জন্য ভ্যাকু দিয়া কাইড্ডা ১০-১২ গাড়ি মাটি নিছি। আর ব্রিক ফিল্ডে মাটি বিক্রি করার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ভাই আমি কাল আপনার সাথে একটু দেখা করি। নিউজ কইরেন না।
এই বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, আমি বিষয়টা জানি। আমি সেখানে গেছিও। আমি তাদেরকে বলছি যে রাস্তাটা ভাঙছে এই রাস্তাটা ঠিক করে দেয়ার জন্য। সে সময় এলাকার মেম্বারসহ স্থানীয় লোকজন ছিলো। এখন মেম্বার দায়িত্ব নিয়ে রাস্তা সে নিজ দায়িত্বে ঠিক করে দিবে।
তবে সরকারি খাস জমির মাটি কিনা এটা বলতে পারি না। হয়তো তারা এটা গোপন করছে। তবে আমি জানি এটা তার কিনা মাটি। তবে খাস জমি হলে তো সে এটা কাটতে পারবে না। খাসের জমি সে কেন কাটবে?
এই বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলার কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, যদি এই জায়গাটি সরকারি খাস জমি হয় তাহলে দ্রæতই আইনগত ব্যবস্থা নিবো।