স্টাফ রিপোর্টার:
হাইমচরে ছলনাময়ী এক নারীর ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে যৌতুক মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন দিনমজুর ছলেমান। স্ত্রীর করা যৌতুক মামলায় এখন দিশেহারা সে। দীর্ঘ ১৩ বছরে স্ত্রীর দাবি-দাওয়ার পূরণ করতে করতে হতাশ হয়ে পড়েছেন তিনি। তার উপর ১১ বছরের ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। পূর্ব চরকৃষ্ণপুর গ্রামের আলগী বাজারের হোটেল ব্যবসায়ি কালু গাজীর অর্থলোভী মেয়ে আয়েশা আক্তারের ১০ লাখ টাকার যৌতুক মামলায় ১১ বছরের পুত্র সন্তান নিয়ে সমাধান চেয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নিরীহ দিনমজুর সেই ছলেমান।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০০৯ সালে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেন মোহরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় ছলেমান মিয়া ও আয়েশা আক্তার। তাদের ১৩ বছরের দাম্পত্য জীবনে ১১ বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। এর পূর্বে আয়েশা আক্তার ঢাকায় বোর্ড বাজারের জনৈক ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। সেই সংসারে থাকাকালীন সময়ে দেশের বাড়ির অন্য ছেলের সাথে পরকীয়ায় সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে প্রথম স্বামীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে পরকীয়া ওই ছেলের সাথে চলে যায়। পরবর্তীতে পরকীয়া ছেলের কাছ থেকেও মোটা অংকের আত্মসাৎ করে বাবার বাড়ি চলে আসে বলে জানা গেছে।
কিছুদিন পর আয়েশার খালা খালুর সাথে পরামর্শ করে খালাতো ভাই ছলেমানে সাথে তৃতীয় বিবাহ দেন কালু গাজী। তাদের দাম্পত্য জীবন চলাকালীন সময়ে আল আমীন নামক ছেলের সাথে পুনরায় পরকীয়ায় লিপ্ত হয় আয়েশা। পরকীয়ার সম্পর্কের জের ধরেই তাদের সংসারে অশান্তির সূচনা হয়। সেই থেকে আয়েশা বাবার বাড়ি চলে যায়। দীর্ঘ পাঁচ বছর পরে সন্তানের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার জন্য উকিল নোটিশ করেন তিনি। উকিলের মাধ্যমে আয়েশাকে তার স্বামীর বাড়িতে পাঠানো হলেও ঐ রাতে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে পিতা কালু গাজীর প্ররোচনায় আয়েশা পুনরায় বাবার বাড়ি চলে যায়। সেখানে গিয়েই স্বামী ছলেমানের কাছে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করেন।
ছলেমান টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আয়েশা চাঁদপুর কোর্টে তার বিরুদ্ধে ১০ লক্ষ টাকার হয়রানিমূলক যৌতুক মামলা দায়ের করে। ঐ মামলায় ছলেমান মিয়া জামিনে মুক্তি পান।
ছলেমান মিয়া জানান, অর্থলোভী এ আয়েশা আমার জীবনটাকে ছারখার করে দিয়েছে। শুধু আমার জীবন-ই নয়, আরও কয়েকটি পরিবার তার মিথ্যা প্রেমে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃশ্ব হয়েছে। আমাদের দাম্পত্য জীবন চলাকালীন সময়েও দুটি ছেলেকে মিথ্যা প্রেমের ফাঁদে ফেলেছে। তার এই অবৈধ সম্পর্কের কারণেই তার সাথে প্রায়ই বাকবিতন্ডা হতো।
তিনি বলেন, তার এমন কার্যকলাপে বাধা দেয়ায় তার বাবার বাড়ি গিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করছে। তারপরও আমার ১১ বছরের শিশু ছেলের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে তাকে পুনরায় আমার ঘরে আনতে চাই।
এ বিষয়ে স্ত্রী আয়েশা আক্তার জানান, আমি শশুর বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে প্রায় সময়ই আমাকে মারধর করতো। একদিন গভীর রাতে আমাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে মুখে বালিশ চাপা দেয় আমার স্বামী। বিষয়টি আমার বাবাকে জানালে তিনি এসে আমাকে নিয়ে যান।
পরবর্তীতে আমার স্বামী ব্যবসা করার জন্য আমার বাবার কাছে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করেন। আমি আইনি সহায়তা পাওয়ার জন্য চাঁদপুর কোর্টে মামলা দায়ের করি।
অভিযুক্ত আয়েশার ছোট বোন জামাই নাজমুল মেলকার জানান, আমার শশুর বাড়ির লোকজন অর্থলোভী অসামাজিক লোক। আমার শশুর কালু গাজীর আশ্রয় প্রশ্রয় ও ইন্দনে তার মেয়ে আয়েশা দীর্ঘদিন থেকে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছে। তাদের এ অর্থ লোভের কারণে কয়েকটি পরিবার হয়রানির শিকার হয়েছে। সর্বশেষ ছলেমান মিয়া তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। তাদের অর্থলোভের কারণে ছলেমান মিয়া আজ পথে পথে ঘুরছে। আমি মনে করি আয়েশা আক্তারের কঠোর বিচার হওয়া উচিৎ। তার বিচার হলেই তার ছলনা থেকে রক্ষা পাবে ছলেমান মিয়ার মতো অসহায় ছেলেরা।