হাইমচর প্রতিনিধি:
হাইমচরে জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও পূর্ব শত্রæতার জেরে প্রতিপক্ষ দুলাল আখনকে অতর্কিত হামলায় কুপিয়ে আহত করেছে উপজেলার পূর্ব চরকৃষ্ণপুর গ্রামের সোহরাফ আখনজি ও তার ভাই ফজলু আখনজি। পরে রক্তাক্ত জখম দুলাল আখনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দুলাল আখনের ছেলে রাকিব আখন (২০) বাদী হয়ে হাইমচর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
জানা যায়, আহত দুলাল আখনের ভাই রফিক আখন বাড়ির পাশের নাল জমিটি আহমাদুল্লাহ আখনের কাছে বিক্রি করে দেয়। এ ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ দুলাল আখনের সাথে সোহরাফ আখন সহ তার ভাইদের বিচার সালিশি বৈঠক ও বিরোধ চলে আসছিল। গত ২৪ সেপ্টেম্বর জমির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেড়া দিতে যায় দুলাল আখন। তখন কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আহম্মদ উল্লাহ আখনজি দলবলসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দুলাল আখনজির বাড়িতে হামলা চালায় এবং তাকে কুপিয়ে আহত করে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, দুলাল আখনজি ও আহম্মদ উল্লাহ আখনজি একই এলাকার প্রতিবেশী। দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসা জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরেই ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৮ টায় আহম্মদ উল্লাহ আখনজি ও তার ভাই সোহরাফ আখনজি, ফজলু আখনজিসহ বহিরাগত লোকজন দলবদ্ধ হয়ে দা, লোহার রড, লাঠিসোঁটা নিয়ে দুলাল আখনজির বসত ঘরে হামলা ও ভাংচুর করে। এতে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে দুলাল আখনসহ পরিবারের লোকজন বাধা দিলে তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। দা, ছেনি, লোহার রড ও লাঠিসোঁটা দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। এক পর্যায়ে সোহরাফ আখনজি তার হাতে থাকা ছেনি দিয়ে দুলাল আখনের ডান পায়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। ফজলু আখন লোহার রড দিয়ে কোমরে আঘাত করে জখম করে। আহম্মদ উল্লাহ, সবুজ, আনোয়ার বসতঘরে ঢুকে দুলাল আখনের স্ত্রী ও ছেলে শাকিলকে মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। পরে তাদের ডাক-চিৎকারে এলাকার লোকজন উপস্থিত হলে দুলাল আখনজির পরিবারকে মেরে লাশ গুম করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে পাশ্ববর্তী প্রতিবেশী লোকজন তাদের উদ্ধার করে হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে।
মামলার বাদী রাকিব হাসান জানান, আমার ছোট ভাই শাকিল এসএসসি পরীক্ষার্থী। সে পরিক্ষা কেন্দ্রে যেতে চাইলে ঘাতক ফজলু আখনজি ও উনার পরিবার তাকে বাঁধা দেয়। এরপর ৯৯৯ এ কল দিয়ে হাইমচর থানা পুলিশের সহায়তায় পরিক্ষা দেয় সে।
ঘটনার দুইদিন পর গভীর রাতে আমাদের রান্নাঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। পরে এলাকাবাসী আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। সংবাদ পেয়ে হাইমচর থানা এসআই ইয়াকুব রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
বাদী রাকিব আরো জানান, পরের দিন রাত ৯টায় পুনরায় ফজলু আখনের পক্ষ নিয়ে হাইমচর উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা ইমরান তার দলবলসহ আমাদের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায়। এমতাবস্থায় আমাদের এ নিরিহ পরিবার দফায় দফায় নির্যাতিত হয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। ভুক্তভোগী দুলাল আখনজি ও তার পরিবার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন।
আহম্মদ উল্লাহ আখনজি বলেন, আমরা এ জমিটি দীর্ঘদিন আগে দুলাল আখনের ভাই রফিকের কাছ থেকে ক্রয় করেছি। এখনও দলিল হয়নি। দলিল করার জন্য কয়েকবার সালিশি ও হয়েছে। তার মেয়ের এসএসসি পরিক্ষা শেষে বাড়িতে এসে দলিল করার কথা রয়েছে। এরমধ্যে দুলাল আখন আমাদের জমিতে বেড়া দিতে আসে। বাঁধা দিতে গেলে তারা আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
হাইমচর থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধে মারামারির ঘটনায় হাইমচর থানায় মামলা হওয়ার সাথে সাথেই পুলিশ দুজন আসামিকে আটক করে কোর্টে প্রেরণ করেছে। অন্যান্যরা কোর্টে হাজির হয়ে জামিন নিয়ে এসেছে। অন্য দুজন আসামি পলাতক রয়েছে। যারা হাইমচরের বাইরে থাকায় খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে খুব সহসাই তাদের আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।