হাইমচর প্রতিনিধি:
শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা হাইমচর এখন লোডশেডিং এর অপর নাম। কোনো প্রকার নোটিশ কিংবা মাইকিং ছাড়াই ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না উপজেলা সদর আলগী বাজার সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে। একদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সৌর বিদ্যুতের ব্যাটারী চার্জ হচ্ছে না, অন্যদিকে বিদ্যুতের মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারণে আইপিএস নিস্তেজ হয়ে আসছে। এক কথায় বর্তমানে হাইমচরবাসী বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারে সময় পার করছেন।
শতভাগ বিদ্যুৎ, আইপিএস ব্যবস্থা ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার থাকায় গ্রামের মানুষ হারিকেন বা কুপি ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছে অনেক আগেই। চাহিদা না থাকায় দোকানে মোমবাতিও পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এমনি সময় বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন অজুহাতে ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং হাইমচরের জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে।
গতকাল ১৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল থেকে হাইমচরের আকাশে ছিল ঝিরঝির বৃষ্টি। যার কারণে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের অভাবে সৌরবিদ্যুতের ব্যটারী চার্জ হয়নি। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ না থাকায় অনেকের আইপিএসও চার্জ করা সম্ভব হয়নি। এতে সন্ধ্যা ৬ থেকে সমগ্র উপজেলা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টির কারণে কোথাও বের হওয়ার সুযোগ নেই, বাড়ির বাইরে কাঁচা রাস্তায় কাঁদা-পানি, বাড়িতে অসুস্থ রোগী অন্ধকারে ঘরের বাইরে যেতে পারছেন না, নবজাতক শিশু ও মা বিছানা থেকে ঘরের বাইরে বের হওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে দুপুর ১২টা থেকে প্রায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭ঘন্টা লোডশেডিং। একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে বিদ্যুতের অত্যাচার। পুরো উপজেলা জুড়ে বিরাজ করছে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ।
অপরদিকে বিদ্যুত সমস্যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়েছে। ব্যাংকসহ বিভিন্ন অফিসের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে। বিদ্যুতের মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারণে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস সম্পূর্ণ ব্যাহত হচ্ছে।
তাহফিজুস সুন্নাহ নেছারিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মোঃ জুলফিকার হাসান মুরাদ জানান, বিদ্যুতের মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারণে মাদরাসার আবাসিক ছাত্রদের পড়াশোনায় যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি ক্ষতি হচ্ছে থাকা, খাওয়া ও দৈনন্দিন আমলের। বাড়িতে কপি বা হারিকেন না থাকায় অন্ধকারে বসে থাকতে হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে বাইরে বের হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই অভিশপ্ত ৩৩ কেবি লাইনের দোহাই দিয়ে বিদ্যুৎ লোডশেডিং কমিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।
হাইমচরে হালকা বাতাস কিংবা বৃষ্টি শুরু হওয়ার সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া একটি দুরারোগ্য ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। তার পরিবর্তন, গাছপালা কর্তণ ও ৩৩ কেবি লাইন মেরামত সহ বিভিন্ন অজুহাতে ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং এ অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে হাইমচর উপজেলা। তাই শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলায় লোডশেডিং কমিয়ে এনে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করার দাবি সচেতন মহলের।
চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি হাইমচর সাব জোনাল অফিসের এজিএম হাফিজুর রহমান বলেন, যেসব এলাকা হয়ে হাইমচর উপজেলায় বিদ্যুৎ আসছে সেসব এলাকাগুলো গাছপালায় পরিপূর্ণ। তাই গাছের ঢাল ছেঁটে দেওয়া সহ বিভিন্ন কারণে বিদ্যুতের প্রধান সংযোগটি বন্ধ রাখতে হয়। এ ছাড়াও ৩৩ কেবি লাইনে যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে হাইমচর উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে রামগঞ্জে গ্রীডের ভেতরে ২টি ঈঞ (কারেন্ট ট্রান্সফরমার) বিস্ফোরণ হয়ে যাওয়ায় লাইন বন্ধ ছিলো। বিকল্পভাবে লাইন চালু করতে হলেও অনেক সময় প্রয়োজন দেখা দেয়। আর সেজন্যই দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিলো।