সম্পাদকীয়:
মানুষ হিসেবে মৃত্যু আমাদের অনিবার্য। কেউ তা থামাতে পারবে না। তবে কিছু মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত, দুর্ঘটনায় মৃত্যু মেনে নেয়া কঠিন। একটি দুর্ঘটনা, একটি মৃত্যু, একটি পরিবারকে পথে বসিয়ে দেয়। স্বজন হারানোর বেদনা বয়ে বেড়াতে হয় সারা জীবন। প্রিয়জন হারানোর কষ্টের কোনো বর্ণনা হয় না। যে হারায় কেবল সেই বোঝে। স্বজন হারানো এসব মানুষের দুঃখের শেষ থাকে না যখন বিচারের নামে চলে সময়ক্ষেপণ। কার গাফিলতিতে ঘটে এসব দুর্ঘটনা তা জানা সাধারণত হয় না ।
সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনা পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নিয়ে দৈনিক শপথ গতকাল ৫ ফেব্রæয়ারি দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জেলা হিসেবে চাঁদপুর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহাসড়ককে কেন্দ্র করে উপজেলার কানেক্টিং সড়কসমূহ অত্যন্ত ব্যস্ত। আর ব্যস্ততা, মানহীন সড়ক ও অপর্যাপ্ত উন্নয়ন এই সড়ককে তৈরি করেছে মৃত্যু আতঙ্ক। সারাদেশে দুর্ঘটনায় বছরে মোট যা ক্ষয়ক্ষতি হয়, তাও জিডিপির প্রায় দুই শতাংশের মতো।
জানমালের এমন ক্ষতি খুব কম ক্ষেত্রেই ঘটে। প্রশ্ন হলো, এর প্রতিকার কী? সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না কেন? সব দায় কি সরকারের? নাকি জনগণেরও কিছু দায় আছে? কিছু ব্যবস্থা তো নেয়াই হচ্ছে। সড়ক প্রশস্ত করার জন্য গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। বড় বড় ফ্লাইওভার হচ্ছে। তারপরও কেন এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর মিছিল ছোট হচ্ছে না? কী করলে ছোট হবে সেটাই প্রশ্ন। এক্ষেত্রে সরকার ও জনগণকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দুর্ঘটনা রোধে সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে। আমরা কি তা সত্যিই মানি? অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে গাড়িতে তো আমরাই উঠি। উল্টোপথে গাড়ি আমরাই চালাই। নষ্ট চলাচলের অযোগ্য যেসব বাস, সেটার মালিক তো আমাদের মধ্যেই কেউ না কেউ। এমন বাস চলাচলে বাধা দেয়া হয় না কেন? ব্যক্তি যতক্ষণ সচেতন না হবে, ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থ যতদিন না বড় হবে, ততদিন অনেক কিছুই ভালো হবে না। হতে পারে না। হয়ও না। উন্নত বিশ্বের বুলি শোনা যায়। সেখানে কি রাষ্ট্র সবকিছু করে? নাকি জনগণ বড় ভূমিকা রাখে? সেখানকার জনগণ আইন মানে। নিয়ম মেনে চলে। তাতে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল না হলেও আইন মানতে বাধ্য করা হয়। আমরা এর কোনটাতেই নেই। না আইন মানি, না দেশের স্বার্থে কাজ করি, না জনগণকে আইন মানতে বাধ্য করা হয়। ফলে যত পদক্ষেপই নেয়া হোক না কেন, কোনটাই সুফল বয়ে আনে না। সবশেষে আমরা যেটা পারি বা করি সেটা হল সরকারের ওপর দোষারোপ। সরকারি সংস্থার ওপর দোষারোপ। গাড়ি ভাংচুরে আমাদের জুড়ি নেই। মুখে নয়, কর্মের মধ্য দিয়ে দেশকে যখন আমরা ভালোবাসব, তখন শুধু সড়ক দুর্ঘটনা নয়, আরও অনেক কিছুই কমে আসবে। সেই দিনের প্রত্যাশায় থাকা ছাড়া আর কিইবা করার আছে।