সম্পাদকীয়
২০১৫ সালের জাতিসংঘ হিসাব অনুযায়ী, প্রতি লাখ জীবিত সন্তান জন্মে মাতৃ মৃত্যুর হার ১৭৬। দক্ষ প্রসব সেবাদানকারীর মাধ্যমে প্রসব হচ্ছে ৪২ শতাংশ। বেশির ভাগ মা হাসপাতালে এসে প্রসব করাতে চাচ্ছেন। এখানে নতুন বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে সিজার অপারেশন।
হাসপাতালগুলোর অতিরিক্ত বাণিজ্যিক চাহিদার বলি হয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সিজার ভাবিয়ে তুলেছে সংশ্লিষ্টদের। অবশেষে এ হার কমে আসছে, এটা নিশ্চয়ই সুখবর। সরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর সেবার মান ও সংশ্লিষ্টদের পেশাদারিত্ব পেলে এ হার নিশ্চয়ই আরো কমে আসবে। এ বিষয়ে দৈনিক শপথ গতকাল ২৮ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ মে, নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনের ঘোষণা দেন। এটি হলো উচ্চপর্যায় থেকে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রকাশ। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে আমরা কোন জায়গায় আছি, করণীয় কী, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কেমন পরিবেশ তৈরি হচ্ছে! মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে মা ও নবজাতক যেখানেই থাকুক, সেখানেই গুণগত মানের সেবা নিশ্চিত করতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত দুরত্বের ক্ষেত্রে হাসপাতাল থেকে দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী গিয়ে প্রসব করাতে পারেন। তবে জোর দিতে হবে হাসপাতালে প্রসব করানোর বিষয়ে। যদি জানা যায়, মায়ের পাঁচটি প্রসবজনিত বিপদ চিহ্নের যেকোনো একটি আছে, তাহলে কোথায় যাবেন? সেক্ষেত্রে হাসপাতালে প্রসব নিরাপদ। কারণ এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে সিজার। মাতৃমৃত্যুর হার আমরা অনেক কমিয়ে এনেছি। একটি সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে এমনিতেই একজন মায়ের সেক্রিফাইসের সীমা থাকে না। তার উপর সিজার অপারেশন তার জীবনে নিয়ে আসে ঘোর অমানিশা। এর প্রতিক্রিয়া তাকে বয়ে বেড়াতে হয় সারাজীবন। জরুরি ক্ষেত্রে সিজার অপারেশন হতেই পারে। প্রশ্ন উঠে যখন বিনা কারণে অযৌক্তিক অজুহাতে শূধুমাত্র বাণিজ্যিক ফায়দা হাসিলের জন্য একজন সুস্থ মানুষের শরীরে কাটাছেঁড়া করা হয়। ঠেলে দেয়া হয় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আশার কথা হচ্ছে বেড়েছে সচেতনতা, তৈরি হচ্ছে আন্তরিকতা। এসবের পাশাপাশি পর্যাপ্ত মনিটরিং হলে নিশ্চিত হবে নিরাপদ মাতৃত্ব, বেড়ে উঠবে সুস্থ শিশু, তৈরি হবে সুন্দর আগামী। এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।