সাগার আচার্য্য:
চাঁদপুর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। ৬ নভেম্বর শনিবার সকালে চাঁদপুর শহরের বাবুরহাটস্থ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি।
এ সময় তিনি বলেন, আজকে যে কমপ্লেক্স উদ্বোধন করা হয়েছে এসব প্রধানমন্ত্রীর অবদান। যাদের কারণে আজ বাংলাদেশ স্বাধীন, আমরা স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করছি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহীদ, বিরাঙ্গনাসহ যারা অকুতোভয়ে দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, তাদের প্রতি জানাই সশ্রদ্ধ সালাম। জীবনে ঝুঁকি নিয়ে ১৯৭১ সালে যারা যুদ্ধে নেমেছে, সেখান থেকে কেউ ফিরেছে, কেউ ফিরেনি। দেশ স্বাধীন করতে হবে, তাদের অদম্য চিন্তায় আজ আমরা স্বাধীন দেশে বাস করছি।
স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির সবাইকে প্রতিহত করতে হবে, যারা স্বাধীনতাকে বিকৃত করে তাদেরকে চিহৃত করতে হবে, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির সাথে থাকতে হবে। আজকে যে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করা হয়েছে, সেখানে যদি সপ্তাহে ১ দিন মুক্তিযোদ্ধারা নতুন প্রজন্মদের স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রী নিয়ে মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করে তাহলে তারা মুক্তিযোদ্ধকে জানবে, দেশকে জানবে, স্বাধীনতাকে জানবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময় মুক্তিযোদ্ধাদেকে সম্মান করেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ভাবেন। কিভাবে তাদেরকে ভাল রাখা যায়, সে বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনের ব্যবস্থা করেছেন, সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি করছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে, মেয়ে, নাতি নাতনীদের চাকরি দিচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের কারনেই এ দেশ স্বাধীন হয়েছে, তারা এদেশ স্বাধীন না করলে আমরা আজ এখানে বসতে পারতাম না, স্বাধীন ভাবে কথা বলতে পারতাম না। প্রধানমন্ত্রীর সঠিক নের্তৃত্বের কারনেই এগিয়ে যাচ্ছে, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, ইসলাম সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে। আমরা মুসলমান হিসেবে ধর্মকে মানতে হবে, যারা ধর্মকে ব্যবহার করে বিভিন্ন সুযোগে ফায়দা করার চেষ্টা করছে, অপরাজনীতি করছে, তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। পাকিস্তানী আদলে যারা বাংলাদেশ করতে চায়, তাদের মুখোশ উম্মোচন করতে হবে। ধর্মের অপব্যবহার করে বিভিন্ন ফায়দা নেওয়া বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীচক্র ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর স্বপরিবার হত্যা করেছে, জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করেছে। তাদেরকে হত্যা করে ঘাতকচক্র স্বাধীনতার ইতিহাসকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। ঘাতকচক্র স্বাধীনতার যেন কোন চিহৃ না থাকে সেপথে এখনো হাঁটছে। যারা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধাকে নের্তৃত্ব দিয়েছে, তাদের ইতিহাস সমাজে অম্লান হয়ে থাকবে। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীদের সবস্থান থেকে প্রতিহত করতে হবে, তাদের কোথায় ও স্থান দেওয়া যাবে না। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধে গিয়েছে, কে হিন্দু, কে মুসলিম, তা কেউ ভাবেনি। আজকে মন্দিরে আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন শরীফ রেখে দেশকে অস্থির করার চেষ্টা করেছিল। জাতির পিতা কখনো বাঙালীদেরকে আলাদা করে দেখেনি। যারা ধর্মের উপর আঘাত করে তাদেরকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। ধর্মের উপর আঘাত করা যাবে না। বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম আন্দোলনের মাধ্যমে অসংবাদিত নেতা হয়েছে। মনে রাখতে হবে, যারা ৭১ এ স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল এখনো তারা স্বাধীনতার বিপক্ষে রয়েছে। তাদের প্রজন্মও সে পথে হাঁটছে। জিয়াউর রহমান নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিত, কিন্তু সে-ই বেছে বেছে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে।
সদর উপজেলা প্রকৌশলী এ, এস,এম রাশেদুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ পিপিএম বার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইউনুছ হোসেন বিশ্বাস, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন্নাহার, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম বরকন্দাজ। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল কালাম চিশতী। এর আগে সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের ফিতা কেটে তিনি ভবনের উদ্বোধন করেন। পরে তিনি ভবনটি ঘুরে পরির্দশন করেন।
অনুষ্ঠানে জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বেপারী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আবিদা সুলতানা, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি এএইচএম আহসান উল্ল্যাহ, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর খায়রুল ইসলাম নয়ন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জহির উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন খান, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবিএম রেজওয়ানসহ আ.লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ২বারের নির্বাচিত কমান্ডার আবু কালম চিশতী, গীতাপাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা স্বাধন সরকার।