ইলিশ বাড়ি চাঁদপুর। পদ্মার ইলিশ মানেই স্বাদ অতুলনীয়। আর চাঁদপুরের ইলিশের খ্যাতি বিশ্ব জুড়া। কিন্ত ইলিশের মত মহামূল্যবান সম্পদ রক্ষা করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। তবে এই মা ইলিশ মাছ সংরক্ষণে চাঁদপুরে নৌ পুলিশে ভুমিকা প্রশংসনীয়৷ এদিকে সাম্প্রতিক নদীতে তিনটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব বিষয় নিয়ে সদ্য যোগ দেওয়া নৌ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের সাথে একান্ত আলাপ করেছেন দৈনিক শপথে স্টাফ রিপোর্টার রিয়াজ শাওন।
দৈনিক শপথ; চাঁদপুরের মাটি ও মানুষ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?
মোহাম্মদ কামরুজ্জামান: আসলে চাঁদপুরের এসেছি অল্প কিছু দিন হলো। এর মধ্যে যে ধারণা হয়েছে। সেটা হলো চাঁদপুরের মানুষ অসাধারণ। কর্মঠ। খুব কোঅপারপটি। যে কোন বিপদে যখন কোন সহায়তা চাওয়া হয়। তখন তারা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কোঅপারেটিভ করে। আমাদের সহায়তাকে জন্য তারা এগিয়ে আসে।
দৈনিক শপথ: চাঁদপুরের আপনি কি কি বিষয় নিয়ে কাজ করছেন?
মোহাম্মদ কামরুজ্জামান: পুলিশের কাজ তো আসলে নির্দিষ্ট কোন বিষয়ের উপর নেই। তবে নৌ পুলিশ তো হল একটা স্পেশাল ইউনিট। তবে সাম্প্রতিক নৌ পুলিশ মা ইলিশ রক্ষায় সফলতা অর্জন করেছে। তারপরে দেখেন, নৌ-পথে ডাকতি কিংবা নৌ দূর্ঘটনা ঘটনা যাতে না ঘটে। সেই বিষয়ে নৌ পুলিশ ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। তাছাড়া নদী যাতে কেউ দখল করতে না পারে সেই বিষয়েও কাজ করছি। আবার যেখানে বালু উত্তোলনের কথা। সেখানে থেকে না উত্তোলন করে। অন্য জায়গা থেকে উত্তোলন করে। সেই বিষয়ে নিয়েও কাজ করেছি। সোজা কথা, নদী এলাকায় যত ধরণের অপরাধ সংঘটিত হয়। সেগুলো রোধে কাজ করছি।
দৈনিক শপথ: অতীতের এসপির তুলনায় আমরা আপনার কাছ থেকে ব্যতিক্রম কি ধরণের কাজ দেখবো।
মোহাম্মদ কামরুজ্জামান: আসলে অতীতের এসপিরা এখানে কিভাবে কাজ করেছে সেটা আমার দেখার সুযোগ হয়নি। তবে এক এক এসপি এক এক স্টাইলে কাজ করে। আমিও চাইবো অতীতের এসপিদের সাথে মিল রেখে একটু ব্যতিক্রম দায়িত্ব পালন করার।
দৈনিক শপথ: সাম্প্রতিক আপনার দায়িত্ব প্রাপ্ত এলাকায় তিন তিন বার নদীতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এই বিষয় কী বলবেন?
মোহাম্মদ কামরুজ্জামান: আসলে ডাকাতির ঘটনা ঘটতে পারে। এটা স্বাভাবিক। কারণ এই নদীটা কিন্তু বিশাল এলাকায় নিয়ে বিস্তৃত। আমাদের যে জনবল। সেই জনবল নিয়ে এই পুরো নদী নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব না। আর ডাকাতরা যখন ডাকাতি করে। তখন তারা খুব প্লান করে ডাকাতি করে। তারা দেখে আমাদের অবস্থান কোথায়? তার বিপরীতে গিয়ে তারা ডাকাতি করে। তবে পুলিশের সফলতা তখনই বলা যাবে। যখন ডাকাতরা সনাক্ত হবে। একটা ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ষাটনল এলাকায় সেখান থেকে কিন্তু আমারা একজনকে আটক করেছি। তার কাছ থেকে ১০-১২ জনের নাম পেয়েছি। তাদের আটক করার জন্য আমরা তৎপর রয়েছি। আর ডাকাতির ঘটনায় কিন্তু সনাক্ত করারই বড় সফলতা। এটার উপরই নির্ভর করে পুলিশ আসলে কতটা শক্তিশালী।
দৈনিক শপথ: সাম্প্রতিক এই সব ডাকাতির ঘটনায়। এক ধরণের নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে ছোট লঞ্চেগুলো। নৌ পুলিশ কি নতুন করে কোন নিরাপত্তা জোরদার করেছে?
মোহাম্মদ কামরুজ্জামান: রাইট, ডাকাতির পর আমরা ডাকাতিপ্রবন এলাকায় যেমন ষাটনলের কাছে বিশেষ টহল জোরদার করেছি। আর তিন নদীর মোহনা যেটা। এই দুইটা জায়গা হলো ডাকাতপ্রবন এলাকা। এখানে আমরা কিন্তু প্রতিদিন টহলের ব্যবস্থা করেছি। আর এটা কিন্তু কন্টিনিউ চলতে থাকে। আর এই শীতকাল হলো ডাকাতির উপযুক্ত সময়। কুয়াশার জন্য কিছু দেখা যায় না। ফলে এই সময়টা তারা বেছে নেয়।
দৈনিক শপথ: স্পিড বোট নিয়ে ডাকাতি করতে আসে। তো এই স্পিড বোটগুলো কি লাইসেন্স করতে হয় না?
মোহাম্মদ কামরুজ্জামান: রাইট। আগে লাইসেন্স করা হয় না। তবে এখন আমরা পরিকল্পনা করেছি। প্রতিটি এলাকায় যে স্পীড বোট আছে। সেগুলোর গায়ের মালিকের নাম ফোন নাম্বার লেখা থাকবে। এবং স্পীড বোট যারা চালায় তাদেরও নাম ঠিকানা আমরা সংগ্রহ করবো। এবং রেজিস্ট্রেশনের আওতায় নিয়ে আসবো।
দৈনিক শপথ: চাঁদপুরে যোগদানের পর এখানকার কি ধরনের সমস্যা আপনার চোখে পড়েছে?
মোহাম্মদ কামরুজ্জামান: এই যে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে এটা। আবার ইলিশ মাছ রক্ষা করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
দৈনিক শপথ: ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে আপনি এবং নৌ পুলিশ কি ধরণের ভুমিকা রাখছে?
মোহাম্মদ কামরুজ্জামান: ইলিশ মাছ সংরক্ষণে নৌ পুলিশে ভুমিকা কিন্তু ব্যাপক। যখন নৌ পুলিশ ছিলোনা তখন কিন্তু ইলিশ মাছ তেমন পাওয়া যেত না। এখন অনেক বেশি পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায়।
দৈনিক শপথ: চাঁদপুরে নৌ পুলিশ নিয়ে অনেক অভিযোগ শুনা যায়। সেই বিষয়ে আপনি কি বলবেন? ঃ
মোহাম্মদ কামরুজ্জামান: হ্যাঁ। কেউ কেউ হয়তো। এই ধরণের কাজ করে। তবে এই বিষয় আমরা কিন্তু একেবারে কঠোর। যে কোন ধরণের অনিয়মের অভিযোগ আমাদের পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে উঠলে আমরা কিন্তু জিরো টলারেন্স। যে কোন অপর্মের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠোর।
দৈনিক শপথ: ইলিশ মাছ সংরক্ষণ ছাড়া নৌ পুলিশ আর কি ধরণের কাজ করছে?
মোহাম্মদ কামরুজ্জামান: এই ডাকাতির বিষয়টা আছে। নৌ পুলিশ যদি না থাকতো। তাহলে কত ডাকাতির ঘটনা যে ঘটতো। এখন তো মাসে দুই একটা ঘটে। না হয় আরো ঘটতো। এছাড়াও মাদক নিয়ে কাজ করি। নদীতে সকল ধরণের নিরাপত্তার কাজ করি৷
দৈনিক শপথ: কর্মস্থলে আপনার একটি সফলতা গল্প বলুন?
মোহাম্মদ কামরুজ্জামান: সফলতা তো অনেক আছে। তবে একটা সফলতা হলো,পুলিশ হেডকোয়ার্টারে একটি বড় প্রকল্প ছিলো ১০১টা থানা ভবন নির্মাণ। এটা অনেক বড় প্রকল্প ছিলো। এটাতে অনেক চমৎকার থানা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তো বলা চলে আমি এই প্রকল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সঙ্গে ছিলাম।
দৈনিক শপথ: কর্মস্থল হিসেবে চাঁদপুরে আপনার সফলতা কি আর ব্যর্থতা কি?
মোহাম্মদ কামরুজ্জামান: সফলতা হলো, এখানে যে তিনটা ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সবগুলোর ডাকাদের সনাক্ত করতে পেরেছি। ডাকাতির মামলায় কিন্তু সনাক্ত হওয়ার সবচেয়ে বড় সফলতা। আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েছি এবং ডাকাত সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। আর এখন একটা ডাকাত ধরা পারলেই হলো।
দৈনিক শপথ আপনার সফলতা কামনা করেছে।
মোহাম্মদ কামরুজ্জামানঃ দৈনিক শপথকে অনেক ধন্যবাদ।