ওয়াদুদ রানা
করোনায় ভীত নয় এমন লোক বিরল। পৃথিবীর সৃষ্টি লগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত যত প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মহামারী আঘাত হেনেছে সবকিছুই মানুষের অর্জিত কর্মফল। আবার প্রকৃতি তার নিজস্ব ধারণক্ষমতার সমতা (ব্যালেন্স) রক্ষার জন্য নির্দিষ্ট বিরতির পর পর ন্যাচারাল ডিজাস্টার অর্থাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগ অর্থাৎ মহামারী ঘটিয়ে থাকে। এটা প্রকৃতির চিরাচয়িত নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। পৃথিবীর কোনো জনপদ, সাধারণ অথবা শক্তিশালী দেশ এখন পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে নিজ নিজ দেশের জানমালের শতভাগ সুরক্ষা দেয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে পারেননি। পৃথিবীর সৃষ্টি লগ্ন থেকেই বুদ্ধিদীপ্ত মানবজাতি প্রতিকূল পরিবেশের সাথে লড়াই করতে করতে বর্তমান পর্যন্ত টিকে আছে। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) তেমনি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা বর্তমান বিশ্ব মোকাবিলা করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে মার্চের প্রথম থেকে যখন সারাবিশ্বের নেয় করোনাভাইরাস প্রভাব বিস্তার শুরু করে তখন থেকেই খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম। প্রতিনিয়তই আল্লাহ তায়ালার কাছে এই মহামারী থেকে নিজেকে, নিজের পরিবার, সমাজ তথা সকল মানব জাতির জন্য জন্য কল্যাণ কামনা করতাম। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় কর্মরত থাকার কারণে নিজেকে সুরক্ষিত রেখেই সংবাদ সংগ্রহে বের হতাম।
শারীরিক কিছু সমস্যা দেখায় গত ১৩ আগস্ট ২০২০ তারিখে প্রথম চাঁদপুর সদর হাসপাতালে করোনা টেস্ট এর স্যাম্পল দিলাম। একই দিন রাতে ফোনে আমাকে জানানো হল আমি করোনায় আক্রান্ত। শুনেই ভয় পেয়ে গেলাম। শুরু করলাম ভয়কে জয় করার যুদ্ধ। একে একে পরিবারের সবাই আক্রান্ত হলো। পরিবারের সবার মনোবল যাতে সবল থাকে সেজন্য নিজেকে সব সময় সুস্থ ভাব দেখাতাম এবং পরিবারের আক্রান্ত সবার মনোবল যাতে ভেঙে না পড়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতাম। অবশেষে আল্লাহর রহমতে নিজে এবং পরিবারের সবাই করণা মুক্ত হলাম। করোনামুক্ত হবার পর নিজে এবং পরিবারের সকল সদস্যসহ সবাই চালিয়ে যাচ্ছি করণা পরবর্তী দ্বিতীয় যুদ্ধ। নিজের শারীরিক অবস্থা এবং অভিজ্ঞতার আলোকে আমার মনে হচ্ছে করোনাভাইরাস একটি সিস্টেমেটিক অ্যাটাক ভাইরাস। যেটি মানবদেহের প্রত্যেকটা সিস্টেমে আঘাত হানতে সক্ষম। প্রথম প্রথম মনে হয়েছিল শ্বাসতন্ত্র এবং ব্লাড সার্কুলেশন সিস্টেম সচল রাখতে পারলেই এ ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। আক্রান্ত হবার পর নিজেকে সেভাবেই ফিট রাখার চেষ্টা চালিয়েছিলাম এবং আক্রান্ত পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উদ্ভুদ্ধ করেছিলাম। ভাইরাসের বিরুদ্ধে মনোবল অটুট রেখে প্রথম যুদ্ধে জয়ী হলেও শুরু হয়েছে এখন দ্বিতীয় যুদ্ধ। আমি এবং আমার পরিবারের সকল সদস্যই এখনো করোণা পরবর্তী নানাবিধ সমস্যায় ভুগতেছি। মানবদেহের এ্যানাটমী বিবেচনায় আমার মনে হচ্ছে আমার শরীরের নয়টি সিস্টেমের প্রত্যেকটিতেই হানা দিযে ক্ষতিগ্রস্ত করে দিয়ে গেছে এই করোনা ভাইরাস। আমি এই সিস্টেমেটিক করোনা ভাইরাসের সাথে প্রথম যুদ্ধে আল্লাহ তায়লার অশেষ রহমতে জয়ী হলেও চলছে এখন করোনা পরবর্তী দ্বিতীয় যুদ্ধ। আমার শরীরের প্রত্যেকটা সিস্টেমে এই সিস্টেমিক করোনা ভাইরাস যে ক্ষত সৃষ্টি করে গিয়েছে, মনোবল সৃদৃঢ় রেখে চেষ্টা করছি তা পুনরুদ্ধার করে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফিরে আসতে। আল্লাহ তায়ালা সহায় হলে আশা করি করোনা পরবর্তী দ্বিতীয় যুদ্ধে জয়ী হয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফিরে যেতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
আজ,
সোমবার , ২৯ মে, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ , ১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।