বিল্লাল ঢালী
মানুষ স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সময় পরিস্থিতি মানুষকে বদলে দেয়। আর সেই বদলটা এমনভাবে হয় যা সে কখনো কল্পনাও করেনি। ১৯৯৯ সালের কথা অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি। তখন এলাকার কিছু বড় ভাই একটি সংগঠন করল। সংগঠনের কাজ ছিলো এলাকার কিশোরদের পড়াশোনায় আগ্রহ তৈরি করা এবং কিছু অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা করা। পড়াশোনার আগ্রহ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে তারা চিন্তা করল এলাকায় একটি দেয়ালিকা তৈরী করবে। সে দেয়ালিকায় এলাকার কিশোর ছেলে মেয়েদের কিছু গল্প কবিতা আঁকা ছবি খবরের কাগজের মত সাজিয়ে সাঁটানো হবে। যেই কথা সেই কাজ দেয়ালিকা তৈরি হলো। দেয়ালিকা এলাকার কিশোর কিশোরীদের লেখাও সাঁটানো হলো। খুব আনন্দ উৎসাহ মনে হল কাজটিতে। প্রতিদিন লেখাগুলো পড়ছি। কাজটি করতে করতে আমার মনে ইচ্ছা হলো আমিও তো কিছু লিখতে পারি। শুরু করলাম দু চারটা লাইন লেখা। যথারীতি ছাপা হলো। যখন এলাকার কেউ এসে বলতো তোর লেখাটা পড়েছি, তখন মনে যে আনন্দ বয়ে যেত তা ভাষায় প্রকাশ করার মত ছিলনা। পরে দেয়ালিকাটিতে স্থানীয় পত্রিকা সাঁটানো শুরু হলো। তখন নজরে আসলো পত্রিকাগুলোতেও গল্প কবিতা ছাপা হয়। আমিও কয়েকটি লেখালিখে পত্রিকায় দিলাম। লেখাগুলো ছাপানো হলো। এবার মনের আনন্দে আরো অধিক বেড়ে গেল। ধীরে-ধীরে পত্রিকা এবং লেখার প্রতি কেমন যেন একটা ভালোবাসা জন্মে গেলো। সবেমাত্র এসএসসি পাস করেছি। লেখার আগ্রহটা এখনো তীব্র। চার বন্ধু মিলে ঠিক করলাম একটি অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করব। সহযোগিতায় পেয়ে গেলাম এক বড় ভাই। তিনি চাকরি করতেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনে। আমাদের উপদেষ্টা হিসেবে সকলর কর্মের দিকনির্দেশনা তার কাছ থেকে পাওয়া। তার সহযোগিতা এবং পরামর্শে প্রকাশিত হল নবীন প্রতিভানামে একটি অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা। পত্রিকাটির কয়েক সংখ্যা বের করলাম। চাঁদপুর শহর জুড়ে ভালোই জনপ্রিয়তা পাচ্ছিলাম। ধীরে ধীরে স্বপ্ন আরও বড় হতে লাগলো। কিন্তু বিধি ভাগ্যে হয় তো অন্য কিছু লিখে রেখেছিলেন। জীবিকার তাগিদে পড়াশোনা বন্ধ করে নামতে হলো কর্মযুদ্ধে। বন্ধ হয়ে গেল নবীন পত্রিকা এবং আমার লেখালেখি। কয়েকবছর কর্মজীবনে সফল ছিলাম। ভাগ্য তারপর সেখান থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিলো। ছোট ছোট কিছু কাজ করে চলছিল দিনকাল। একদিন দেখা হল পুরনো বন্ধু কাদের পলাশ এর সাথে। চাঁদপুরের সাংবাদিকতায় একটি পরিচিত মুখ। পুরনো বন্ধু পেয়ে অনেক কথা হলো। তখনই জানতে পারলাম সে একটি পত্রিকা প্রকাশের প্রচেষ্টা করছে। কেন জানি আমার মনেও একটা আনন্দের ফুলকানি দেখা দিলো। মনে হল তার সাথে থেকে আমি আমার পুরনো সেই স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার সুন্দর রাস্তা আমার সামনে। কারণ তার সাথে চলেছি তাকে চিনি জানি। তার সম্পর্কে একটা কথা ভালো জানি। সেটা হল যতই অপ্রতিকূল পরিবেশ হোক সে থেমে যাবার পাত্র নয়। মাথায় যখন নিয়েছে পত্রিকা প্রকাশ করবে, তবে সেটা করবেই। দিনদিন আলাপচারিতা বাড়তে থাকলো। একদিন নিজ থেকে প্রস্তাব করলাম আমি পাশে থাকতে চাই। কাজ করতে চাই। না শব্দ বা কোন বাহানা কিছুই শুনতে হলোনা আমাকে। এক শব্দে বলল আমার কোন আপত্তি নেই। শুরু করলাম আবার স্বপ্ন দেখা। অন্য একটা কাজে আমি কিছুদিন ব্যস্ত থাকায় যোগাযোগ কম হতো। দিনটি এখনো মনে আছে ৩১জুলাই ২০১৯, সন্ধ্যায় একটা ফোন কল পেলাম। রিসিভ করতেই বলল আমার পত্রিকার ডিক্লারেশন এসে গেছে। আমরা কিছুদিনের মধ্যে পত্রিকা প্রকাশ করতে পারবো। ২৬আগস্ট ২০১৯ প্রথম প্রকাশিত হল সাপ্তাহিক শপথ পত্রিকার প্রথম সংখ্যা। পত্রিকাটি উদ্বোধন করলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মাজেদুর রহমান খান। চাঁদপুরের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সেই থেকে যাত্রা সাপ্তাহিক শপথ। প্রকাশিত হওয়ার পর আর কোনো বাধাই থামাতে পারেনি সাপ্তাহিক শপথ পত্রিকাটি। দেখতে দেখতে একটি বছর পার করলো সাপ্তাহিক শপথ। শুরু থেকে পত্রিকাটির সাথে জড়িত থাকলেও তেমন কোনো কাজ করিনি। এখন হয়তো একটু একটু লেখার চেষ্টা করি।
চাঁদপুর জেলা পাঠকনন্দিত বাংলা সংবাদপত্র সাপ্তাহিক শপথ তার প্রকাশনার দ্বিতীয় বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে-এ সংবাদটি গোটা জেলাবাসীর জন্য কতটা আনন্দের, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট একাত্তর টেলিভিশন চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি কাদের পলাশ এর উদ্যোগে যাত্রা শুরু করেছিল। তারপর এক এক করে গোটা চাঁদপুর জেলা বাসীর মন জয় করে গত এক বছর যাবৎ সমান জনপ্রিয়তা ও মান ধরে রেখে যেভাবে তার প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছে, এটি একটি সংবাদপত্রের জন্য কম কৃতিত্বের নয়।
সাপ্তাহিক শপথ নিয়ে কিছু বলতে হলে সর্বাগ্রে যে নামটি আসে তিনি হচ্ছেন এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জনাব কাদের পলাশ। জনাব কাদের পলাশ এবং সাপ্তাহিক শপথ একে অপরের পরিপূরক।
পত্রিকার আকার, গেটআপ, মেকআপ (চকচকে ছাপা) দেখে তখন থেকেই মনে হয়েছিল, পত্রিকাটির মধ্যে প্রচুর নতুনত্ব আছে। কারণ, জেলায় ট্যাবলয়েড সাইজের পত্রিকা খুব একটা দেখা যেত না। এই পত্রিকাটি পেলে মনে হতো যেন এক সপ্তাহ খুব ভালো করে কাটানো যাবে। পত্রিকাটিতে যেমন ছিল বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের সমাহার, তেমন ছিল গুণীজনদের লেখা, অনেক তথ্যবহুল সংবাদ, কলাম, ফিচার ও প্রবন্ধ; ইত্যাদি যা পড়ে সারা জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে সম্যক ধারণা পাওয়া যেত।
কালের পরিক্রমায় সাপ্তাহিক শপথ এখন আর সাধারণ কোনো সংবাদপত্র নয়, পরিণত হয়েছে একটি পরিবারের অংশ। সাপ্তাহিক শপথ এর সহযোগী পত্রিকা হিসেবে সমান্তরালে অনলাইন থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে আরেকটি অনলাইন পত্রিকা শপথ নিউজ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সাপ্তাহিক শপথ সত্য বলার যে প্রত্যয় নিয়ে শুরু করেছিল তা এখনো বহমান। সাপ্তাহিক শপথ যে সময়টিতে যাত্রা শুরু করেছিল, একই সময়ে জেলায় আরো কয়েকটি পত্রিকা বের হতো। প্রতিকূল পরিস্থিতির সাথে তাল মেলাতে ব্যর্থ হয়ে অন্যান্য সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশনা হিমশিম খেলে ও সাপ্তাহিক শপথ চলছে তার অবস্থান ধরে রেখে। এখন মুক্ত সংস্কৃতির প্রভাবে গোটা পৃথিবী পরিণত হয়েছে একটি অঞ্চলে। মুহূর্তের মধ্যেই সব কিছু পাওয়া যাচ্ছে চোখের সামনে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো এখন সমান্তরালে কাজ করে যাচ্ছে গণমাধ্যম হিসেবে। ভেবে পুলকিত হই অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও সাপ্তাহিক শপথ প্রকাশিত হচ্ছে প্রথম দিনের মতো মনোবল নিয়ে।