রিফাত কান্তি সেন:
আপনি ঢাকা শহর বসে যতই আন্দোলন, হুঙ্কার আর যত প্রচারণাই করেন না কেন— এসবই বৃথা যাবে যদি মিডিয়া সে খবর ফোকাস না করে। আর সে খবর যদি মিডিয়াই ফোকাস না করে তবে সে আন্দোলন ও বৃথাই যায়। সেই মিডিয়ায় কাজ করেন একঝাঁক তরুণ, প্রবীণ সাংবাদিক। যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও খবর পৌঁছে দেন বিশ্বদরবারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যতই খবর ভাইরাল হোক না কেন তার বিশ্বাস যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে। কিন্তু সাংবাদিক বিচক্ষণতার সঙ্গে খবর সংগ্রহ করে সে খবর পৌঁছে দেয় গণমানুষের নিকট। এই সাংবাদিকদেরই আবার গণমানুষরা গালাগাল দিতেও কার্পণ্যবোধ করেন না। দোষটা হলো যখন সাংবাদিক চুপ থাকে তখন আপনারা বলেন হলুদ সাংবাদিক, যখন সাংবাদিকরা তুলে ধরে তখন রাস্তায় আপনারাই লাঠিপেটা করেন। পক্ষে লেখলে দালাল, বিপক্ষে লেখলে চোগলখোর! আরো কত বিশেষণ যে আমাদের আপনারা দেন সেটারও হিসেব নেই। সাংবাদিকরা যখন অসহায়ের কথা তুলে ধরে তখন আপনারা বলেন, সহানুভূতি কিনে তারা, নিজেদের হাইলাইটস করে; আবার যখন দুর্নীতির কথা প্রকাশ করে তখন ভাবেন শত্রুতা উদ্ধার করি। তাহলে এরা যাবে কোথায়?
সাংবাদিক চুপ থাকলেও দোষ, কথা বললেও দোষ! যাবে কোথায় সাংবাদিক। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্র আন্দোলনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক সাংবাদিক আহত হয়েছেন। ছাত্রদের ভিড়ে দুর্বৃত্তরা ঢুকে সাংবাদিকদের উপর হামলা করে খায়েশ মেটাচ্ছেন। কী দোষ সাংবাদিকদের? তাদের উপর কেন বারবার হামলা করছেন? আমাদের দোষটা কোথায়?
যুগে যুগে সাংবাদিকরা অবহেলিত, নির্যাতিত। তাদের উপরই সকল আঘাত, ক্ষোভ!
সাংবাদিকরা যখন নিজেদের পরিবার, সন্তান, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে হানাহানির খবর সংগ্রহেও কৃপণতা করে না তখন তাদের বাহবা দেয়ার লোকও থাকে না।
কিন্তু কেন? ছাত্রদের আন্দোলনে ছবি তুলতে গিয়ে ফ্রিল্যান্স থেকে শুরু করে মেইনস্ট্রিম জার্নালিজমের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের রক্তাক্ত ছবি দেখলাম।
কী নিষ্ঠুর আচরণ! ক্যামেরাও ভাঙছে আবার সাংবাদিকও পেটাচ্ছে। এ যেন নিয়তির নিষ্ঠুর খেলা!
বেশ ক’বছর ধরেই বাংলাদেশে কোনো আন্দোলন, মিছিল, মিটিং হলে সেখানে যদি গণ্ডগোল হয় সবাই শুধু ঝাল ওঠায় সাংবাদিকদের উপর।
যেন তারা সমাজের অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাংবাদিকদের বলা হয় সমাজের বিবেক। অনেকটা যেন তাদের আচরণে আমরা উপলব্ধি করতে পারি দেশ থেকে বিবেক উঠে গেছে তাই আমাদের এত নিপীড়ন। হামলাকারীদের উপযুক্ত বিচার না হওয়ার কারণে লোকে সাহস পায় সাংবাদিক পেটাতে। হামলাকারী অবশ্যই চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা উচিত।
দেশের উন্নয়ন, গণতন্ত্র, সফলতা, বিফলতা সবই তুলে ধরেন একজন সাংবাদিক। আর এ সাংবাদিকরাই বিশ্বদরবারে আপনাকে, আমাকে হাইলাইটস করছে প্রতিনিয়ত। সেই মানুষগুলোর প্রতি অবিচার কখনোই কাম্য নয়। যদি ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করেন তবে দেখবেন দেশের প্রতিটি আন্দোলনেই সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম। এখনো দেশের অনেক দুর্নীতি আটকে যায় সাংবাদিকদের কারণে। মেনে নিচ্ছি কিছু কুিসত সাংবাদিকদের কারণে ভালো সাংবাদিকদের মাথা নিচু হতে হয় তবে সেটা সংখ্যায় খুবই নগণ্য!
সাংবাদিকরাই সমাজের অন্যায়,অবিচারগুলো তুলে ধরে প্রকাশ্যে। তাইতো সমাজ থেকে অন্যায় কাজগুলো করতে আতঙ্কে থাকে দুর্নীতিবাজরা। তাই আসুন, সাংবাদিকদের কাজে বাধা সৃষ্টি না করে সাংবাদিকদের কাজে সহায়তা করি। কোনো সাংবাদিক যেন আপনার ব্যক্তিগত, দলগত ক্ষোভের শিকার না হয়। চিহ্নিত অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেয়া হোক। সাংবাদিকরা ভালো থাকুক, জাতির বিবেক সম্মানে থাকুক, এটাই প্রত্যাশা।
লেখক :বিশেষ প্রতিনিধি, সাপ্তাহিক শপথ।