স্টাফ রিপোর্টার:
হাইমচরে শিশু মারজানকে ধর্ষণ করে হত্যা মামলার আসামী সেলিম বেপারীকে (২২) আটক করে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৭জুন দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকার টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকায় অভিযোগ চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। সেলিম বেপারী নীলকমল ইউনিয়নের ঈশানবালা চরবাও, সুরুজ সরকার কান্দি এলাকার শফি উল্লাহর ছেলে।
জানা যায়, স্থানীয় মুকশেদ হাওলাদারের বড় মেয়ে মারজান স্থানীয় চর কোড়ালিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীতে পড়তো। ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ সাল। বিকাল অনুমান সাড়ে ৫টা। মারজানকে ১০০ টাকা দিয়ে ঈশান বালা বাজারে পাঠায় তার মা। বাজারে যাওয়ার পথে স্থানীয় চৌকিদার নান্নু মিয়া মারজানের মুখ চেপে ধরে জনৈক নাসির সর্দারের পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে ৪জন নরপশু জোড়পূর্বক পালা ক্রমে ধর্ষণ করে। এতে মারজানের গোপনাঙ্গে রক্তের ধারা বয়ে যায়। জ্ঞান হারায় মারজান। জ্ঞান ফিরলে ঘটনা প্রকাশ হয়ে যাবে এ কারণে ৪পাষ- নরপশু গলা টিপে হত্যা করে মারজানকে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত শুরু হলেও মারজান বাড়ি ফিরে না আসায় সবাই এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি শুরু করে। একপর্যায়ে মুকশেদ হাওলাদারের বাড়ীর অদুরে নদীর পাড়ে মারজানের উলঙ্গ প্রাণহীন দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে এলাকার একটি চক্র এবং ধর্ষক ও হত্যাকরীরা সুকৌশলে মারজানকে জ্বীনে মেরেছে বলে অপপ্রচার শুরু করে। পরে মারজানের মৃতদেহ দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে।
কিন্তু হতভাগী মারজনের মা-বাবার মন কিছুতেই মানে না। কোনো ভাবেই তারাপ বিশ্বাস করতে পারে না মারজানকে জ্বীনে মেরেছে। শেষমেষ মারজানের বাবা মুকশেদ হাওলাদার ১০ জানুয়ারী ২০১৮ সালে ঈশানবালা সাকিনের দ্বীন ইসলাম হাওলাদারের ছেলে জালাল মিয়া হাওলাদার (২১) , কাদির বেপারীর ছেলে সিদ্দীক (২২) ও শফিক উল্লাহ বেপারীর ছেলে সেলিম গংদের আসামী করে মামলা করে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চাঁদপুর এর আদালতে। আদালত ওসি হাইমচর থানাকে সরাসরি মামলা রজুর আদেশ দিলে হাইমচর থানার মামলা নং ০৪ তারিখ ১৬/০১/১৮ ইং ধারা -৩০২/৩৭৬/২০১/৩৪/১০৯ দ: বি রজু হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় এস আই সুমন মিয়াকে।
দীর্ঘ একবছরেও মামলাটির তদন্তে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি না হওয়ায় পুলিশ সুপার চাঁদপুর মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তর করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় ডিবির উপ-পরির্দক (এসআই) শামীম আহম্মদকে। এস আই শামীম বদলী সুত্রে অন্যত্র চলে গেলে ১০/০২/২০২০ ইং এস আই রেজাউলকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। একমাসের মাথায় এস আই রেজাউল মামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত এজাহার বহির্ভূত আসামী নান্নু চৌকিদারকে শরিয়তপুর থেকে গ্রেফতার করেন। জিজ্ঞাসাবাদে নান্নুসহ এজাহার নামীয় বাকী তিন আসামী মারজানকে নারকীয়ভাবে ধর্ষণ ও হত্যার লোমহর্ষক বিবরণ দেয়। বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়।
ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া ডিবি চাঁদপুরের দায়িত্ব গ্রহণের পর এ মামলাটির তদন্তকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে বিশেষ দিক নির্দেশনা দেন।
এ বিষয়ে ওসি রনজিত বড়ুয়া বলেন, মাননীয় পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপি এম (বার) এর দিক নির্দেশনা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) মিজানুর রহমানের সার্বিক পরামর্শে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মারজান হত্যা মামলার অন্যতম আসামী মোঃ সেলিম বেপারীকে আটক করা সম্ভব হয়। আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানান ওসি ডিবি।