হাসানুজ্জামান:
শাহরাস্তি মেহের উত্তর ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত বানিয়াচোঁজেবি উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ রাস্তার পাশের গাইড ওয়াল ভেঙ্গে পড়ার কারনে সরকারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এবিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে দোষারোপ করছেন এলাকাবাসী।
জানা যায়, বিদ্যালয়ের সামনে জনগণের চলাচলের জন্য একটি রাস্তা ছিলো। স্থানীয় মোল্লা বাড়ির পুকুরের কারনে রাস্তাটি ভেঙ্গে যায়। উপজেলা এলজিএসপি-৩ কর্তৃক বিগত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ও ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকাসহ মোট ৪ লাখ ১২ হাজার টাকায় নির্মাণ করা হয় এই গাইড ওয়ালটি।
এবিষয়ে ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন বলেন, দুটি অর্থ বছরে যে পরিমান আর্থিক অনুদান এসেছে তাতে ওই কাজ সঠিক ভাবে করা সম্ভব কিনা তা আমার জানা নেই। আমি নামেই মাত্র ওই প্রজেক্ট দুটির সভাপতি ছিলাম। আসলে সকল কাজই চেয়ারম্যান সাহেব করেছেন। কোথায়, কিভাবে, কত টাকা লেগেছে তাও আমি জানি না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ৪ লাখ ১২ হাজার টাকায় কি পরিমান নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করলে গাইড ওয়াল কতটা টেকসই হবে তা ইঞ্জিনিয়ার ও চেয়ারম্যান সাহেব বলতে পারেন। নিন্মমানের ইট আর স্বল্প পরিমান সিমেন্ট ব্যবহার এবং অপরিকল্পিতভাবে এই ওয়ালটি নির্মাণের কারণে সামান্যতম কারণেই ভেঙ্গে গেছে বলে তিনি মনে করেন।
মেহের উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মনির হোসেন বলেন, পুকুরের মাঝখানে গাইড ওয়াল নির্মান করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ইজিপিপি’র অর্থায়নে ওয়ালের উত্তরাংশ মাটি দ্বারা ভরাট করার কারনে গাইড ওয়ালটি ভেঙ্গে যায়। এটা একটি দূর্ঘটনা মাত্র। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওয়ালের মেয়াদ যা হয়েছে তা বেশি নয়। তবে প্রজেক্ট সভাপতি দেলোয়ার মেম্বার সাহেব ভালোভাবেই তদারকি করেছেন এবং ইঞ্জিনিয়ার সাহেব এই কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। নির্মান সামগ্রির মধ্যে ইট বা সিমেন্ট সঠিকভাবে প্রয়োগ করেছে কিনা তা আমার জানা নেই। এব্যাপারে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব ভালো বলতে পারবেন। এই প্রজেক্টে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এভাবে কত প্রজেক্টের টাকা উধাও হয়ে যায় আর এখানেতো কাজ হয়েছে। অন্য প্রজেক্ট থেকে টাকা নিয়ে ওয়ালের ভেঙ্গে যাওয়া অংশটুকু পূনঃমেরামত করবেন বলে তিনি জানান।
স্থানীয় রাজমিস্ত্রী বাবুল বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে প্রথম প্রজেক্টে ওই পুকুরের উত্তরাংশে ও স্কুলের দক্ষিনাংশের পশ্চিম দিক থেকে ৬০ ফুট গাইড ওয়াল নির্মান করা হয়। যেকাজে আমি সয়ং নিজে কাজ করেছি। ২য় প্রজেক্টে ৬৫ ফুট কাজে আমি অংশ গ্রহন করিনি। এধরনের কাজ আর সরকারের সাথে প্রতারণা করা দুটোই সমান। তবে এমন কাজের জন্য সাধারণ মানুষ দূর্ভোগের শিকার হয়েছে।
স্থানিয়রা বলেন, যারা অধিক টাকা খরচ করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তারা সরকারি বা বেসরকারী সকল কাজ থেকেই অর্থ আত্মসাত করতে চেষ্টা করেন। ১শ ২৫ ফুট গাইড ওয়ালের জন্য সরকার যেখানে ৪ লাখ ১২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন সেখানে প্রজেক্ট কর্মকর্তারা এক থেকে সোয়া লাখ টাকায় নামের উপরে নমুনা করে একটি গাইড ওয়াল নির্মান করে বাকি টাকা আত্মসাত করেছেন। জনবান্ধব এই সরকার তার নিজ দলীয় তৃণমূল নেতাদের কারনে উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তেমনি সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ জনগন। ২,৩ নাম্বার ইট আর পরিমান বিহীন সিমেন্ট দ্বারা নির্মিত এই ওয়ালটি অল্প সময়ে কেন ভেঙ্গে পড়লো? তা সঠিক এবং পক্ষপাতহীন তদন্তের মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।