সুমন আহমেদ:
মতলব উত্তর উপজেলার বদরপুর (বেলতলী) গ্রামে শাহ্সূফী সোলেমান লেংটার মাজারে ৭ দিনব্যাপী ওরশ উপলক্ষে মেলার আয়োজন করে মাজার কমিটি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও তেমনি প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিটি। যদিও এ মেলায় পাগল ও নেশাখোরদের বসে মিলনমেলা। এমনকি মেলায় চাঁদাবাজি, জুয়া, ছিনতাই, অশ্লীলতাসহ অবাধে মাদক বিক্রি ও সেবন করতে দেখা যায়। তাই প্রতিবছরই এই মেলোকে কেন্দ্র করে মাজার কমিটির খাদেম মতিউর রহমান লাল মিয়াসহ আশপাশের লোকদের কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। এ কারনেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকসহ বিভিন্ন ভাবে লেংটার মেলা বন্ধের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
প্রতি বছর চৈত্র মাসের ১৭ তারিখের মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে প্রতিদিন ১০/১২ লক্ষাধিক ভক্ত, আশেকান ও সাধারণ জনগণ আসা যাওয়া করেন। ওরশকে কেন্দ্র করে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে মেলায় বসে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভক্তদের আস্তানা। কেউ কেউ মাদক ও অশ্লীলতার মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখে।
জানা যায়, ৭ দিনের এ মেলায় প্রতিটি দোকান থেকে ২ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। আগত ভক্তরা মাজারে মানত করে দেয় গরু, ছাগল, নগদ অর্থ, আগরবাতি ও মোমবাতি। আর এভাবেই মাজারে প্রতিদিন আয় হয় লাখ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতিবছরই লেংটার মেলায় কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। অথচ এই টাকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার। তাই সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মাজারের আয়ের কোটি কোটি টাকা যায় কোথায়?
তবে আলাপকালে জানা গেছে, এ টাকায় অনেকেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন। যদিও ইতোপূর্বে এই টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষ ও মামলার ঘটনাও ঘটেছে। অনেকে বলেন, মাজার কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় যে তারা ভাগাভাগি করে খেয়ে ফেলবে। তাই মাজারের অর্থ ও মাজারের উন্নয়ন বিষয়ে সরকারি নজরদারি প্রয়োজন এবং মাজারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত।
এদিকে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো মেলায় মাদক বিক্রি, সেবন ও অশ্লীলতার আয়োজন করা হচ্ছে। মেলা শুরুর আগেই নেশাখোররা মাজারের চারপাশে ৫ শতাধিক আস্তানা গড়ে বসেছে। জানা যায়, সকল প্রকার মাদকদ্রব্যই পাওয়া যায় এ মেলায়। নেশাখোরদের দেখলেই মনে হয় এটি মেলা প্রাঙ্গণ। দেখলে মনে হয় যেনো নেশার স্বর্গরাজ্য। দলে দলে আস্তানা বেঁধে সেবন করছে মাদকদ্রব্য। মেলা প্রাঙ্গণের বাতাসে বইছে গাঁজার গন্ধ। অথচ পুলিশ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে গেলেও মনে হয়েছে অবস্থার প্রেক্ষিতে তারা নিরুৎসাহিত।
অপরদিকে এই মেলাকে কেন্দ্র করে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে যানবাহন থামিয়ে করা হয় চাঁদাবাজি। সাদুল্লাপুর মোড় থেকে বেলতলি বেড়িবাঁধ পর্যন্ত ৩/৪ স্থানে যানবাহন থেকে টাকা তোলা হয়। পাশাপাশি মেলাপ্রাঙ্গণে বিভিন্ন ব্যানারে খেলা হয় জুয়া। যদিও সংশ্লিষ্টরা চাঁদাবাজি ও জুয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ শাহাজাহান কামাল বলেন, মেলায় সকল প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এর পাশাপাশি মাদকবিরোধী অভিযানও অব্যাহত থাকবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গাজী শরীফুল হাসান বলেন, বন্ধের জন্য কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে কোনো প্রকার অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। যদিও লটারী, মৃত্যুফাঁদ ও পুতুল নাচের অনুমোদন নেই। এরপর আমরা সর্বদিক নজরদারীতে রাখবো।