এম এ লতিফ
জ্বালানি তেল বৃদ্ধির পরপরই বেড়েছে নৌ-পথে চলাচলকারী সব ধরনের লঞ্চের ভাড়া। গত একবছরের ব্যবধানে দুবার লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধি করায় ক্ষুব্ধ চাঁদপুর-ঢাকা রুটের যাত্রীরা। গত মঙ্গলবার থেকে হঠাৎ করে লঞ্চের ভাড়া ৩০ ভাগ বাড়ানোর কারণে হতাশ হয়ে পড়েছেন লঞ্চের সাধারণ যাত্রী।
চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ রুটে চলাচল করে। এছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলেরও অসংখ্য যাত্রী দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম লঞ্চঘাট চাঁদপুর ঘাট দিয়ে যাতায়াত করছে। চাঁদপুর ছাড়াও পাশর্^বর্তী নোয়াখালী, ল²ীপুর, চট্টগ্রামের হাজার হাজার যাত্রী স্বাচ্ছন্দে এরুট ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু আকস্মিক ভাড়া বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন এ রুটের ওইসব যাত্রী।
বুধবার সকালে ঈগল-৩ লঞ্চের যাত্রী মোরশেদ আলম ও কামাল গাজী বলেন, আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হওয়ায় কোনঠাসায় পড়েছি। এরমধ্যে লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধি করায় আমরা আরো বিপাকে পড়ে গেলাম। জানি না সরকার আমাদেরকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে দেশের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে সরকারের সকল পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।
এদিকে চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর-ঢাকার মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। প্রথম ১শ কিলোমিটারের মধ্যে ৩০ শতাংশ ভাড়া বাড়ার ফলে এখন ২ দশমিক ৩০ টাকার সঙ্গে দশমিক ৭০ টাকা যোগ হয়ে প্রতি কিলোমিটার ভাড়া দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা। চাঁদপুর-ঢাকার মধ্যে পূর্বে ডেকের ভাড়া ছিল ১৫০ টাকা। আর বর্তমানে তা ৫০ (৩০ শতাংশ) টাকা বাড়িয়ে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। এছাড়াও প্রথম শ্রেণি ও কেবিনগামী যাত্রীদের ভাড়াও বেড়েছে অনেক।
তবে সরকারি নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও যাত্রীদের থেকে কম নিচ্ছেন বলে জানালেন ময়ুর-৭ ও ঈগল-৩ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. আজগর আলী। তিনি বলেন, সরকারি হিসেবে ডেকের ভাড়া ২০৪ টাকা, নীচের চেয়ার ভাড়া ২৮২ টাকা। কিন্তু আমরা যাত্রীদের থেকে আমরা নিচ্ছি ২০০ টাকা ও ২৫০ টাকা। তিনি আরো বলেন, লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধি না করে মালিকদের অন্য কোন উপায় ছিল না। কিন্তু এই ভাড়া বৃদ্ধির ফলে যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে অনেক। তাই ভাড়া বাড়িয়েও লোকসান গুনতে হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রতিদিন চাঁদপুর-ঢাকা রুটে বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচল করে ২৪টি, চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটে ১৪টি এবং দক্ষিণাঞ্চল ও শরীয়তপুরের মধ্যে ৮টি লঞ্চ চলাচল করে। ওইসব লঞ্চগুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। বিশেষ করে চাঁদপুর-ঢাকা রুটে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি লঞ্চেই যাত্রীতে থাকে ভরপুর। কিন্তু দুদফা ভাড়া বৃদ্ধির কারণে এ রুটে কমতে বসেছে যাত্রী সংখ্যাও। আবার যারা চলাচল করছেন তাদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।
আলাপকালে রিপন আহমেদ ও মনির হোসেন নামে দুই ব্যবসায়ী বলেন, জরুরি কাজে ঢাকা প্রায়ই যাই। কিন্তু যেভাবে ভাড়া বাড়তে শুরু করেছে আমাদের মত ছোট খাট ব্যবসায়ীরা হিমশিম খাচ্ছি। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ আমাদের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেন। না হলে আমাদেরকে না খেয়ে মরতে হবে।
এমভি সোনার তরী ও বোগদাদিয়া-৭ লঞ্চের কেরানিদের (করণিক) সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সরকারিভাবে ৩০ ভাগ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু আমরা ডেকের ভাড়া ২০০ টাকা, প্রথম শ্রেণি এসি চেয়ার ৩৫০ টাকা, বিজনেস ক্লাস এসি চেয়ার ৪৫০ টাকা এবং নিচ তলার চেয়ার ২৭০ টাকা নিচ্ছি। তবে সরকারি হিসেবে ভাড়া আরো বেশি আসে। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষের কথা ভেবে কিছু কম নিচ্ছি।