স্টাফ রিপোর্টার:
চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নে বর্তমার সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ছয়টি আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর এসব আশ্রয়ন প্রকল্পে ১হাজার পরিবারের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ স্থায়ী ভাবে বসবাস করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নে এখন পর্যন্ত ১ হাজার পরিবার আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। এর মধ্যে রামদাসদী আশ্রয়ণ প্রকল্প-১-এ ১২০ পরিবার, দোকানঘর রামদাসদী আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এ ২৬০ পরিবার, রামদাসদী মেঘনাপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৪০ পরিবার, পশ্চিম রামদাসদী মেঘনা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৮০ পরিবার, লক্ষ্মীপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২৭৫ পরিবার, রঘুনাথপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১২৫ পরিবার। এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৫ সহস্রাধিক মানুষ বসবাস করছে। মূলতঃ মোঃ সেলিম খান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তার প্রচেষ্টায় এসব আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়।
ভ‚মিহীন ও গৃহহীন অসহায় মানুষকে ভ‚মিসহ ঘর প্রদানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ‘আশ্রয়ন প্রকল্প’ সারাদেশে চলমান রয়েছে। চাঁদপুর জেলার প্রতিটি উপজেলায় কম-বেশি আশ্রয়ণ প্রকল্প থাকলেও সারা জেলার মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে মডেলে পরিণত হয়েছে চাঁদপুর সদরের ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নে জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক আশ্রয়ণ প্রকল্প স্থাপিত হয়েছে।
রেকর্ড সংখ্যক আশ্রয়ণ প্রকল্প স্থাপিত হওয়ায় লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নে লোকসংখ্যা এখন সর্বাধিক। সে কারনে চাঁদপুর সদরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার এখন এ ইউনিয়নে। বর্তমান সরকারের আমলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সহযোগিতায় ইউপি চেয়ারম্যান মো. সেলিম খানের উদ্যোগে একের পর এক আশ্রয়ণ প্রকল্প স্থাপিত হয়েছে। এ কারণে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিকাংশ মানুষ বর্তমান সরকার, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ বিগত নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের নির্বাচিত করে আসছে।
এ কারণে লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদকে এখন চাঁদপুর সদর উপজেলা তথা চাঁদপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রধান ভোট ব্যাংক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা যতো বেশি ভোটে এগিয়ে থাকে, প্রতিদ্ব›দ্বী অন্য দলের প্রার্থীরা তা আশপাশের ৪-৫ ইউনিয়নে পাশ করেও সমতা আনতে পারে না। তাই সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেও লক্ষ্মীপুর তাই প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মাথাব্যথার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ যেমন এ ইউনিয়নে তাদের ভোট ব্যাংক ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর, তেমনিভাবে অন্যদলগুলো নানা রাজনৈতিক/অন্যান্য কৌশলে সেই ভোট ব্যাংকে ভাগ বসাতে চাইছে। এমপি নির্বাচন কেন্দ্রিক সরকার দলীয় বিরোধ/বিভেদও এখন এই ইউনিয়নে প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। ওই ইউনিয়নে চালুর অপেক্ষায় থাকা চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়টিও এখন সেই রাজনৈতিক দ্বন্ধের শিকার হয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টি চালু হলে এ ইউনিয়নে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হবে এবং ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তখন ভোটার বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্তমান জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগ আরো দৃঢ় অবস্থানে থাকবে বলে আশা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সে কারণে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় এখন রাজনীতির শিকারে পরিণত হয়েছে বলে স্থানীয়রা ধারণা করছেন।
রামদাসদী আশ্রয়ণ প্রকল্প-১ এর বাসিন্দা মর্জিনা বেগম (৬০) বলেন, নদী ভাঙনে জমি-সম্পদ হারিয়ে আমি পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পে জমিসহ ঘর পাইয়া আমার পরিবার স্থায়ী ঠিকানা পাইছি। আমাগো এমপি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আপা ও লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খানের সহযোগিতায় এই ঘর পাইছি। আমার পরিবার আজীবন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।
লক্ষ্মীপুর আশ্রায়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা সেলিম পাটওয়ারী (৫৫) বলেন, আমি এতটাই গরীব ছিলাম যে বেড়ি বাঁধের পাশে টিনের ঘর বানাইয়া পরিবার (স্ত্রী) ও ছেলে-মেয়ে নিয়া থাকতাম। সেলিম চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় এ আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরির পর এখানে ঠাঁই পাইছি। আমার মতো শত শত পরিবার এখানে জায়গাসহ ঘর পাইছে। আমরা খুব খুশি। শুনছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সহযোগিতায় এ আশ্রয়ণ প্রকল্প হইছে। তাদেরকেও অনেক ধন্যবাদ।
ইউপি মেম্বার ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক মাঝি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের কারণে আমাদের ইউনিয়নে প্রায় ৩৪ হাজার ভোটার। বিগত কয়েকটি জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা অধিকাংশ ভোট পেয়েছেন। এ ইউনিয়ন এখন আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বিগত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির এমপি প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাড়ি এই ইউনিয়নে। এসব কারণে আওয়ামী লীগের সেই ভোট ব্যাংকে হানা দিতে বিএনপি-জামায়াত নেতারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে নেমেছে। তারা উছিলা বানাইছে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জমি অধিগ্রহণ। যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে তারা এখনো টাকা পায় নাই, অথচ ষড়যন্ত্রকারীরা বলে এখানে নাকি দুর্নীতি হইছে। আরো দুঃখের বিষয় আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের কিছু সংখ্যক নেতাও বিএনপি-জামায়াতের সাথে আঁতাত করে দলের সুনাম নষ্টের পাঁয়তারা করছে। এরা চায় ডা. দীপু মনি যাতে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না পায়।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরশাদ মিজি বলেন, ডা. দীপু মনি এমপির সহযোগিতায় ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের উদ্যোগে এই ইউনিয়নে রেকর্ড সংখ্যক আশ্রয়ণ প্রকল্প স্থাপিত হয়েছে। তাছাড়া এ ইউনিয়নে সারা জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। আরো অনেক উন্নয়ন অপেক্ষমান। এত এত আশ্রয়ণ প্রকল্প ও উন্নয়নের কারণে ল²ীপুর এখন আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক। এত উন্নয়ন দেখে বিএনপি-জামায়াত ও দলের কিছু নেতা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম খানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে নেমেছে। তাদের সহযোগিতা করছে দলের কতিপয় নেতা।
১নং ল²ীপুর মডেল ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ সেলিম খান বলেন, নদী ভাঙনসহ নানা কারণে গৃহহীন হাজার হাজার মানুষ আমার ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রয় পেয়েছে। চাঁদপুর সদর আসনের এমপি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি মহোদয়ের আন্তরিক সহযোগিতায় আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ এই ইউনিয়নে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আরো অনেক উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবেও আমার ইউনিয়নে এখন পর্যন্ত মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৪৬টি ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি গৃহহীনদেরকে। এ ইউনিয়নে সর্বাধিক ভোটার ও নৌকার গণজোয়ার দেখে দল ও দলের বাইরের অন্য দলের কিছু লোক ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার করছে। আগামী নির্বাচনে জনগণ ভোটের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের জবাব দেবে। এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে আমার চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘শাপলা মিডিয়া’ থেকে ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’ ও ‘আগস্ট ১৯৭৫’ নামীয় সিনেমা নির্মাণ করায় স্বাধীনতাবিরোধী চক্র আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা এখনো নানা ষড়যন্ত্র করছে আমার বিরুদ্ধে।
লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে হাজার হাজার ভ‚মিহীন ও গৃহহীন মানুষের স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে।