নজরুল ইসলাম আতিক:
কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে সপ্তাহব্যাপী লকডাউনের তৃতীয় দিনে চাঁদপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ১ লাখ ২৯ হাজার ১৫০ টাকা জরিমানা আদায় করে জেলা প্রশাসন। এদিন স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব ও মাক্স পরিধাণ নিশ্চিতে কঠোর অবস্থানে ছিল জেলা প্রশাসন। এছাড়াও মানুষকে ঘরে রাখতে ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইকিং, মাক্স বিতরণ করা হয়।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের নির্দেশে ৩য় দিনে জেলার আটটি উপজেলায় ২২ টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। এসময় অভিযানে ১৬৭ টি মামলায় ১ লাখ ২৯ হাজার ১৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে সরকারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে যে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে তা প্রতিপালনে আমাদের মোবাইল কোর্ট অব্যাহত আছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার ব্যাটালিয়ন ও পুলিশের সমন্বয়ে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে এবং যেখানেই ব্যত্যয় ঘটছে সেখানেই সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে জরিমানা করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
হাইমচরে লকডাউনে বিধিনিষেধ না মানায় জরিমানা:
সারাদেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ৭দিনের কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিনে হাইমচর উপজেলা ও থানা প্রশাসন রয়েছেন কঠোর অবস্থানে। মাস্কবিহীন পথচারী ও বিভিন্ন দোকান খুলে রাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রিগ্যান চাকমা।
গতকাল শনিবার সকাল থেকে হাইমচর উপজেলা সদর আলগী বাজার, জনতা বাজার, রায়ের বাজার, হাইমচর বাজার, হাওলাদার বাজার, কালাচৌকিদার মোড় ও তেলির মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে উপজেলা ও থানা প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। এ সময় মাস্কবিহীন পথচারীদের বিভিন্ন ধারায় ৮টি মামলায় ১ হাজার ৪শত টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রিগ্যান চাকমা সর্বসাধারণের উদ্দেশ্যে বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সরকার ঘোষিত লকডাউন ও বিধিনিষেধ মেনে চলুন। ঘর থেকে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। অযথা বাহিরে ঘুরাফেরা পরিহার করে ঘরে থাকুন এবং সুস্থ্য থাকুন। কারণ, করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে ঘরে থাকার বিকল্প নেই।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য মেজর ফারহান, থানা অফিসার ইনচার্জ মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা, এসআই আবুল কালাম আজাদসহ সাংবাদিকরা।
কচুয়ায় ৪ ব্যবসায়ির জরিমানা:
লকডাউনের ৩য় দিনেও কঠোর অবস্থানে ছিল কচুয়ার প্রশাসন। অথচ সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন অমান্য করে কচুয়া উপজেলার পালাখাল বাজারে কয়েকটি দোকান খোলা রাখে কতিপয় ব্যবসায়ি। খবর পেয়ে কচুয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) একিমিত্র চাকমা ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালিয়ে ওই বাজারের ৪ ব্যবসায়িকে সাড়ে তিন হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এদিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সকাল হতেই বেরিয়ে পড়েন কচুয়ার বিভিন্ন বাজার ও গুরত্বপূর্ণ জনপদে। প্রশাসনের পাশাপাশি মাঠে ছিল সেনাবাহিনী ও পুলিশ। যদিও উপজেলার বিভিন্ন এলাকাঘুরে দেখা গেছে হাটবাজারগুলোতে ওষুধ, মুদি ও কাঁচামালের দোকানপাট ছাড়া অন্যসব দোকান বন্ধ রয়েছে।
অভিযান চলাকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একিমিত্র চাকমা বলেন, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হলেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মতলব দক্ষিণে ১৪ মামলায় ১৫ হাজার টাকা জরিমানা:
সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে তৃতীয় দিনও মতলব দক্ষিণ উপজেলায় অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। শনিবার (৩ জুলাই) বিকেলে প্রশাসনের অভিযানে ১৪ টি মামলায় ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
জানা যায়, লকডাউন কার্যকরের জন্য মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা হক ওইদিন বিকেলে অভিযানে বের হন। অভিযানে উপজেলার নারায়নপুর বাজার, নাগদা ও মতলব সদর উপজেলার টিএন্ডটি এলাকায় লকডাউন অমান্য করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার দায়ে ১৪ টি মামলায় ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
এ সময় খাদেরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মনজুর হোসেন রিপন মীর, থানার এস আই হাবিবসহ সঙ্গীয় ফোর্স, স্যানিটারী ইন্সপেক্টর গাজী খোরশেদ আলম উপস্থিত ছিলেন।
মতলব উত্তরে ৩ দিনে সাড়ে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা:
সাতদিনের কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে কঠোরভাবে কাজ করছে মতলব উত্তর উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ। গত তিন দিনে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। যদিও লকডাউনের তিন দিনই দোকানপাট বন্ধ ছিল, রাস্তাঘাটও ছিল অনেকটাই ফাঁকা। এরপরও কিছু কিছু মানুষ বিধিনিষেধ অমান্য করায় গুনতে হয়েছে জরিমানা। গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ৩ দিনে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ৩৪ জনের কাছ থেকে ৩৫ হাজার ৫শত ৫০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে।
উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার উপজেলার গালিমখাঁ বাংলা বাজার, কালির বাজার, বেলতলী বাজার, কালীপুর বাজার জীবগাঁও, গজরা বাজার, নতুন বাজার, শ্রীরায়েরগজরা বাজার, রাঢ়ীকান্দি, নবুরকান্দি, নাউরী বাজার, ইসলামিয়া মার্কেট (নতুন বাজার), আমিরাবাদ বাজার, জনতা বাজার, মতলব সেতুসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী শরিফুল হাসান। বৃহস্পতিবার লকডাউনের প্রথম দিনে ১০ জন পথচারীকে প্রায় ৯ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। শুক্রবারও বিধিনিষেধ না মানায় ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১১ হাজার ৩০০ টাকা এবং শনিবার তৃতীয় দিনেও ১৪ জন ব্যক্তির কাছ থেকে ১৪ হাজার ৭শত ৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
অভিযান প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী শরিফুল হাসান বলেন, সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে আমরা সর্বদা মাঠে আছি। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সবাইকে বিধিনিষেধ মানতে হবে। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে ও থাকবে।