রিয়াজ শাওন
প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব পাল্টে যাচ্ছে সমাজ। পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে জীবনযাত্রায় আধুনিক হচ্ছে মানুষ। এই প্রযুক্তি আর্শিবাদ নাকি অভিশাপ সেই বিতর্ক চলে আসছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে। তবে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর উপর নির্ভর করে আর্শিবাদ নাকি অভিশাপ?
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে প্রযুক্তির অভিশাপের প্রভাব তরুণ প্রজন্মের উপর পড়েছে। বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেজবুক ইউটিউব ইনস্টাগ্রাম এবং মোবাইল গেমসে দিনের বেশিভাগ সময় কাটায়। এতে একদিকে যেমন শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হচ্ছে। অন্য দিকে পড়াশোনা ও বাস্তব জীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ইদানিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে তরুন প্রজন্মের একটি অংশ। বিষয়টি দিন দিন উদ্বিগ্নজনক হারে বাড়ছে ।
এ-দিকে অনলাইনকে ব্যবহার করে অধিকাংশ তরুণ তরুণী এইবার জোকছে অনলাইন মোবাইল গেমসের দিকে। ২০১৭ সালে বিশ্ব ব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ব্লু হুয়েল নাম একটি অনলাইন গেমস। মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে অনেক তরুণ তরুণীকে। এর পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনলাইন মোবাইল গেমসের তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হতে থাকে। সাম্প্রতিক ক্লেশ অফ ক্লেন, পাবজি, টিনপাতি এবং ফ্রি ফায়ার নাম অনলাইন গেমস তরুণদের মাঝে ব্যবহারে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই গেমস এখন তরুণরা ছাড়াও অনেক বয়ষ্কোরাও খেলে।
ফায়সাল (১৭) নামে একজন বলেন ‘ আমি পাবজি খেলি। দৈনিক দশ থেকে বারো ঘন্টা সময় ধরে অনলাইনে থাকি। খেলা ছাড়া থাকতে পরি না। এখন শরীরে অনেক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
ফয়েজ (১৬) নামে একজন তিনি বলে ‘ আমি সারাদিন রাত ফ্রি ফায়ার খেলি। এই গেমস খেলে অনলাইন ডায়মন পাওয়া যায়। তারপরে সেইগুলো বিক্রি করি। প্রতিদিন একশো দেড়শো টাকার ডায়মন বিক্রি করি।
রিয়াদ (২৪)নামে একজন বলেন’ আমি টিনপাতি খেলি। প্রতিমাসে এই গেমসের কোর বিক্রি করে সাত থেকে আট হাজার টাকা পাই। কোর মূলত এই গেমসে একটি অনলাইন বিট কয়েন। ক্রেতারা অনলাইনে ক্রয় করে বিকাশে টাকা পরিশোধ করেন।
জানা যায়, এই সব গেমসের বিভিন্ন ধাপে ক্রেডিট কার্ড, ভিসা কার্ড, মাস্টার কার্ড দিয়ে অনলাইন বিট কয়েন কিনতে হয়। তা পরবতীতে খেলায় ব্যবহার করা হয়। আবার এই সব গেমস খেলে অনলাইন মুদ্রা বিট কয়েন অর্জন করা যায়। সেগুলো কোন গেমসে ডায়মন, কোন গেমসে কোর। এক-এক গেমস এক এক নাম দেওয়া হয়েছে। এইগুলো আবার বিক্রি করা হয় অনলাইনেই। সেই টাকা নগদ কিংবা বিকাশে পরিশোধ করা হয়।
যা একপ্রকার অনলাইন জুয়া। এইসব মোবাইল গেমসের মাধ্যমে তরুণরা এক প্রকার অনলাইন জুয়াতে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। এতে ভয়ংকর ক্ষতির মুখে ভবিষ্যত প্রজন্ম।
গবেষণারা বলেন’ ইয়াবা গাজাঁর মতই মোবাইল গেমসে আসক্ত এক প্রকার নেশা। এতে শরীর ও মানসিক অনেক ক্ষতি হয়। মাদক দ্রব্য শরীরে সরাসরি ক্ষতি করে। আর অনলাইনে বেশি সময় দেওয়া কিংবা গেমসে আসক্ত হওয়া শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে এবং আচরণে পরিবর্তন ঘটে।
বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম খেলাধুলো থেকে অনেকটা সরে যাচ্ছে। আড্ডা ঘুরাঘুরি অনেক কমিয়ে দিচ্ছে। সারাদিন তারা মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এতে তাদের মাঝে হতাশা এবং মানসিক অশান্তি বেড়ে যাচ্ছে। এই ভাবেই ভবিষ্যতে প্রজন্ম নিজে শেষ করে দিচ্ছে। যা দেশে ও জাতির জন্য অশনি সংকেত।