চাঁদপুর মাছ ঘাটে বেড়েছে ইলিশের আমদানী
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রাদুর্ভাবে সারাদেশের নদ-নদীতে বৃদ্ধি পেয়েছে পানি। তেমনি মেঘনা নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩ ফুট। এছাড়া গত দুইদিন থেমে থেমে কয়েকবার বৃষ্টি হয়েছে। এতেই নতুন স্বপ্নে বুক বাঁধতে শুরু করেছেন মেঘনার জেলেরা। পানি প্রবাহ ও নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বৃষ্টির কারণে জেলেরা আশা করছেন দীর্ঘদিনের খরা কাটিয়ে এবার তারা নদীতে কাঙ্খিত ইলিশের দেখা পাবেন। আর সে স্বপ্নে তারা মনে মনে কিছুটা উল্লাসিত।
গত মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় নদীতে নামতে পারেনি এখানকার জেলেরা। পরে দুই মাস অবসর সময় কাটিয়ে বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে নদীতে নামলেও কাক্ষিত ইলিশের দেখা পায়নি কেউই। তারা জানায়, নদীতে গিয়ে তাদের জ্বালানি খরচও উঠেনি। তাই সংসারের খরচ ও কিস্তির টাকা পরিশোধে হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের। কেউ কেউ আবার মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙেও পড়েছিলেন। অপরদিকে মৎস্য অধিদপ্তর বারবার তাদেরকে সাহস দিয়ে বলেছিলেন, নদীতে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি এবং বৃষ্টিপাত হলে ইলিশের প্রাপ্যতা বাড়বে। আর সেই স্বপ্নে এখন বিভোর তারা।
যদিও ঘূর্নিঝড়ের প্রভাব শেষে জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে নেমেছে তবে আশানুরূপ ইলিশ তাদের জালে ধরা পড়েনি। শুক্রবার বিকেল তিনটায় লক্ষ্নীপুর ও হরিণার কয়েকজন জেলের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, এখন নদীতে ইলিশ পাওয়ার বিষয়ে বেশ আশাবাদী তারা। মেঘনার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তার সাথে গত দু’দিন থেমে থেমে বৃষ্টিরও দেখা মিলেছে। তারা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, নদীতে এখন ইলিশ পাওয়া যাবে।
হরিণা ঘাট এলাকার জেলে হোসেন মিয়াজী বলেন, এতদিন তো হুনছি খালি বৃষ্টি হইলেই ইলিশ পাওয়া যাইবো। এবার দেহি কি হয়।
এদিকে সাগরে মাছ ধরা নিষেধ থাকায় দীর্ঘদিন পর চাঁদপুরের মাছ ঘাটে মাছের আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মাছ ঘাটে চাঁদপুরের লোকাল ইলিশের পরিমাণ ছিল অতি সামান্য। ঘাটে দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশের আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ভোলা ও বরিশালের উপকুলীয় অঞ্চলের ইলিশ চাঁদপুরের ইলিশ বলে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চাঁদপুর মাছ ঘাটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি মো. রাকিব জানান, মিথ্যে বা অন্য জায়গার ইলিশ চাঁদপুর বলে বিক্রি করতে হয়না আমাদের। যারা এমন করছে তারা প্রতারক। মূলত ঘাট থেকে যারা ইলিশ মাছ কিনে তারা চাঁদপুরের ও দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশের পার্থক্যটা বুঝে। তবে সরাসরি অন্য জেলা থেকে যদি কেউ চাঁদপুর মাছ ঘাটে আসে সেক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেক ক্রেতাই দুই ইলিশের পার্থক্যটা ভালোভাবে জানেন না।
শুক্রবার সকালে চাঁদপুর মাছ ঘাট ঘুরে দেখা যায়, চাঁদপুরের লোকাল ১২০০-১৫০০ গ্রামের ইলিশের দাম ২ হাজার টাকা, এক কেজির দাম ১৩০০/১৪০০ টাকা, ৬০০-৯০০ গ্রামের দাম ১০০০/১১০০ টাকা। অপরদিকে ভোলা, বরিশাল ও দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য জেলা থেকে আসা ইলিশের ১ কেজি থেকে ১২০০ গ্রামের দাম ৮০০ টাকা এবং ৬০০-৯০০ গ্রামের ইলিশের দাম ৫০০ টাকা।
নদী বন্দর চাঁদপুরের ইলিশ গবেষক ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান ইলিশের প্রাপ্যতার বিষয়ে জানান মে, জুন, জুলাই এই তিন মাস নদীতে ইলিশ কম পাওয়া যাবে সেটাই স্বাভাবিক। জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে নদীতে পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। তবে জেলেদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। নদীতে যেহেতু পানি বেড়েছে এবং বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে সেক্ষেত্রে ইলিশের প্রাপ্যতা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করি।
আজ,
বুধবার , ৪ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ , ১৯ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।