শরীফ মোঃ মাছুম বিল্লাহ:
হাইমচর উপজেলার চরাঞ্চলে পুনরায় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এ ভাঙ্গন কেড়ে নিচ্ছে অসহায় মানুষের ভিটেমাটি, নিঃস্ব করছে চরাঞ্চলবাসীকে। অসহায় ও নিরুপায় হয়ে সেখানকার মানুষ রাজধানী টাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাড়ি জমাচ্ছেন। পৈতৃক সম্পত্তি ও নিজের শেষ সম্বলটুকু মেঘনায় বিলীন হয়ে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন চরাঞ্চলের স্থায়ী অনেক বাসিন্দারা।
সরেজমিনে গতকাল ১ অক্টোবর শনিবার উপজেলার চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নীল কমল, হাইমচর ও গাজীপুর ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জমজমাট বাজারগুলো ভেঙে ছোট ছোট বাজারে পরিণত হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক সহ সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চরাঞ্চলের শিক্ষার্থী, রুগী ও সাধারণ মানুষের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১নং গাজীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন এখনো বিদ্যমান থাকায় ফসলি জমি ও মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে মাছ চাষি ও কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। এ ইউনিয়নের আংশিক কিছু এলাকা থাকলেও চোখ রাঙ্গাচ্ছে নদীর স্রোত।
৪নং নীলকমল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অনেক আগেই। এছাড়াও ৫, ৬, ৭নং ওয়ার্ড হুমকির মুখে। এ ওয়ার্ডগুলো যেকোনো সময় হারিয়ে যাবে নদীগর্ভে।
মেঘনার করাল গ্রাসে নিপতিত হয়ে নীলকমল ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলো আজ স্মৃতিতে রূপ নিয়েছে। এর মধ্যে মিয়ার বাজার, মাঝির বাজার উল্লেখযোগ্য। সর্বনাশা মেঘনায় সর্বস্ব হারিয়ে এখানকার হাজার হাজার পরিবার আজ নিঃস্ব। পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
উপজেলার ৫নং হাইমচর ইউনিয়ন বর্তমানে প্রায় বিলুপ্ত একটি জনপদের নাম। এ ইউনিয়নের ঐতিহাসিক বাজার (সাহেবগঞ্জ বাজার) একেবারে ভেঙে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। নতুন করে গড়া হলেও নদীর করাল স্রোত এখনও পিছু ছাড়েনি। ফলে পুনরায় হারিয়ে যেতে বসেছে বাজারটি।
নদী ভাঙ্গনের স্বীকার আব্দুল জলিল মোল্লা বলেন, সর্বনাশা মেঘনা আমাদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। কৃষি জমি চাষ করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোই চলছিল দিন। কিন্তু মেঘনার ভাঙ্গনের শিকার হয়ে ভিটেমাটি হারিয়ে এখন নিঃস্ব। অনেকেই আসে যায়, প্রতিশ্রæতিও দিয়ে যায়, কিন্তু আজও বাস্তবায়ন হয়নি মেঘনা বাঁধ।
মোশাররফ হোসেন মাঝি জানান, হাইমচরের সর্বত্র উন্নয়ন হলেও উন্নয়ন হয়নি চরাঞ্চলবাসীর। মেঘনা কেড়ে নিয়েছে এ অঞ্চলের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি। তাই নদী ভাঙ্গন রোধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কার্যকর প্রদক্ষেপ কামনা করছি।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, হাইমচরের বুক চিরে প্রবাহিত হয়েছে মেঘনা নদী। যার কড়াল গ্রাসে নিপতিত হয়েছে হাইমচরের মানুষ। শিক্ষামন্ত্রীর প্রচেষ্টায় প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে মেঘনা রক্ষা বাঁধ। ৩টি ইউনিয়ন মেঘনার পশ্চিম পাড়ে হওয়ায় এখনও বাঁধ নির্মাণ সম্ভব হয়নি। তবে হাইমচর ইউনিয়ন থেকে ঈশানবালা হয়ে কোদালপুর পর্যন্ত ৪ হাজার ৩০০ মিটার বাঁধ এর রিপোর্ট আগামী নভেম্বর বা ডিসেম্বরের মধ্যেই হাতে আসবে। এরপর প্রসেসিং কার্যক্রম শেষে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হবে।