মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন
আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মীদের বাদ দিয়ে আমরা কোনভাবেই এগুতে পারবো না। মহান মুক্তিযুদ্ধে সাংস্কৃতিক কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। সেখানে তারা যে গানটি গেয়েছেন ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ এবং ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’ এসব গানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের একটা স্পিড রয়েছে। গানগুলোর মাধ্যমে রক্তকে জাগ্রত করে, রক্তের কনিকাগুলোকেও জাগ্রত করে এবং তাদের প্রতিটা শিরা উপশিরা জাগ্রত করে। বর্তমানে কিন্তু আমরা অনেক ক্রাইসিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের নতুন প্রজন্মকে জাগ্রত করে তুলতে হবে। তাদেরকে যদি মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে চাই তাহলে তাদেরকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে আনতে হবে। যদি এগুলোতে না জড়াতে পারি তাহলে তারা মাদকাসক্ত হয়ে যাবে। তাদের বাবা ও মায়েরাও তাদেরকে ঘর থেকে বের করে আনতে পারছে না। কারণ তারা মোবাইল ল্যাপটপ নিয়ে সারাদিন ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। আমরা যদি তাদেরকে এগুলো থেকে বের করে আনতে পারি এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদেরকে ব্যস্ত রাখতে পারি তাহলে আমরা একটা শিক্ষিত সমাজ এবং সাংস্কৃতিক মানুষ পাবো। গতকাল রবিবার বিকাল সাড়ে তিনটায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে চাঁদপুর জেলার শিল্পকলা একাডেমী চাঁদপুরের কর্মকর্তা ও সংস্কৃতি কর্মীদের পরিচিতি ও মতবিনিময় সভায় নবাগত জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, কেউ কবিতা আবৃতি করলো, কেউ গান গাইলো, কেউ নাচলো, কেউ খেললো এবং এগুলোর মাধ্যমে তাদের একটা ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি থাকবে। যার কারণে তারা মানুষকে চিনতে পারবে এবং সমাজের মধ্যে তাদের দায়বদ্ধতা বুঝতে পারবে। সমাজে ভালো ভালো কাজগুলো তারা করতে পারবে। এখন কিন্তু তারা আইসোলেশান হয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে তাদের বাবা-মায়েরা ঘর থেকে বের করে আনতে পারছে না। এই যে তাদের এই একাকীত্ব এবং পিতা-মাতার সাথে তাদের যে একটা সেপোরশন এটা কিন্তু একটা বিরাট সমস্যা। আমরা কিন্তু ছোটবেলায় গান করেছি, নাচ করেছি এবং কবিতা আবৃত্তি করেছি। কিন্তু বর্তমানের ছেলেমেয়েদের মধ্যে এগুলো দেখা যাচ্ছে না।
অঞ্জনা খান আরো বলেন, গতকাল চাঁদপুর করোনায় তিনজন আক্রান্ত হয়েছিল এবং আজকে দুইজন। আমরা দেখতে পাচ্ছি দিন দিন অবস্থার উন্নতির দিকে যাচ্ছে এবং সেটা আমাদের জন্য একটা পজিটিভ দিক। সেজন্য আমাদেরকে সবাইকে মাক্স পড়তে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করতে হবে। যদি করোনা পরিস্থিতি আরো ভালোর দিকে যায় তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হয়তো খুলে দিবে। আশা করি সবকিছু স্বাভাবিক হবে এবং সবাই সংস্কৃতি অঙ্গনে আবার সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারবেন। জেলা প্রশাসক হিসাবে সবসময় সাংস্কৃতিক কর্মীদের আমার সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের সঞ্চালনায় অন্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন, জেলা কালচারাল অফিসার সৈয়দ মুহম্মদ আয়াজ মাবুদ, চাঁদপুর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ইয়াহিয়া কিরণ, শিল্পকলা একাডেমির এডহক সদস্য রুপালী চম্পক, শহিদ পাটওয়ারী, সম্মিলিত সাংস্কতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান কিরণ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সদস্য তপন সরকার।
মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী মাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মানিক, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী মাজিস্ট্রেট ইমরান মাহমুদ ডালিম এবং সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী মাজিস্ট্রেট মনজুরুল মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক ফোরাম, নৃত্য শিল্পী সংস্থা, খেলাঘর চাঁদপুর, স্বপ্নতরী সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন, পুনাক, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, চাঁদপুর ড্রামা, উদায়ন সংগীত বিদ্যালয়, উদায়ন কচি-কাঁচার মেলা, আনন্দধ্বনি সংগীত শিক্ষায়তন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, রংধনু চাঁদপুর, অনুপম নাট্যগোষ্টি, মেঘনা থিয়েটার, বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠী, অনন্যা নাট্যগোষ্ঠী, বন্ধবন্ধু আবৃতি পরিষদ, আনন্দধ্বনি সঙ্গীত শিক্ষায়তন, চারুকলা বিভাগ ও বর্ণচোরা নাট্য গোষ্ঠীসহ অন্যানারা।