এম এ লতিফ:
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে গত ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে শেষ হয়েছে ইলিশ প্রজনন মৌসুম। মৌসুম শেষে জেলেরা এখন পর্যন্ত আশানুরূপ ইলিশ না পেলেও এবছর সর্বোচ্চ সংখ্যক মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান। তবে এবার গত বছরের (সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন) তুলনায় ইলিশ উৎপাদন আরো বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, এ বছর সর্বোচ্চ ৫১ দশমিক ৭ ভাগ মা ইলিশ নদীতে ডিম ছেড়েছে। যা আগামি দিনে ইলিশ প্রাপ্তিকে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তবে সেক্ষেত্রে আসন্ন মার্চ-এপ্রিল জাটকা মৌসুমে ইলিশের পোণাকে শতভাগ সুরক্ষা দিতে হবে। পাশাপাশি ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই কিশোর ইলিশকে সাগরে অবাধে বিচরণের সুযোগ করে দিতে হবে। তাহলেই আগামীতে ইলিশের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা আশাবাদী।
জানা গেছে, আশি^নের ভরা পূর্ণিমা ও অমাবশ্যাকে কেন্দ্র করে নদীতে ডিম ছাড়ে মা ইলিশ। এ সময়টাতে ইলিশের প্রজনন মৌসুম হিসেবে মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে গত ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের ৭টি উপকূলীয় এলাকায় সকল ধরনের মাছ ধরা বন্ধ করে সরকার। এরপরও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেক অসাধু জেলে এই সময়টাতে ইলিশ নিধন করেছে।
ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান আরো বলেন, ইলিশ মাছ পরিভ্রমণ স্বভাবের। প্রজননের সময়টাতে ইলিশ সাগর ছেড়ে মোহনা ও নদ-নদীতে ছুটে আসে। প্রজননের মৌসুমে ইলিশের অভয়াশ্রম কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে প্রতিবছর দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছর সঠিক সময় ইলিশের প্রজনন মৌসুম ঘোষণা করায় এবং নদী সুরক্ষিত থাকায় ও অমবশ্যা-পূর্ণিমায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আমাদেরকে আরো আশান্বিত করে তোলে। ফলে বাস্তবেও সঠিক পরিসংখ্যানে বেরিয়ে এসেছে এ বছর সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ ডিম ছেড়েছে।
এদিকে চাঁদপুর মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট এর সুত্র মতে দেখা যায়, প্রতিবছরই মা ইলিশের ডিম ছাড়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৬ সালে ৪৩.৪৫ ভাগ, ২০১৭ সালে ৪৬.৪৭ ভাগ, ২০১৮ সালে ৪৭.৭৫ ভাগ, ২০১৯ সালে ৪৮.৯২ ও ২০২০ সালে ৫১.২ ভাগ ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। আর এ বছর ৫১.৭ ভাগ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। যা গত বছরের তুলনায় দশমিক ৫ ভাগ বেশি।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, ২২ দিনব্যাপী মা ইলিশ রক্ষায় প্রজনন মৌসুম সফল করতে জেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও পুলিশ বিভাগের সহযোগিতায় আমরা দিন-রাত নদীতে টহল দিয়েছি। তবে সম্মিলিত কার্যক্রমের ফলে এবছর অভিযান সফল হয়েছে বলে আমি মনে করি। যার সুফল ভোগ আমরাসহ এ পেশায় সম্পৃক্তরা।