বিশেষ প্রতিনিধি :
মানুষ কাটা যখন পেশা তখন মায়া দিয়ে কি হবে? মানুষ পঁচে গেলে মানুষ মানুষকে ধরতে চায় না। অথচ মানুষতো মানুষই। আমি মানুষ আর সরকারের প্রয়োজনে কাজ করি। এ দিয়ে জীবন চলে। সংসার চলে। ফ্যামিলি চালাতে টাকা লাগে টাকার জন্যে কাজ করি। বলছিলেন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী মানুষ কাটা মানুষ বাপ্পি ডোম। বাস স্ট্যান্ড হরিজন কলোনীর মৃত গোলাপ ডোমের ছেলে সে। মা মালতি ডোম তিন ভাই এক বোনের সংসার। নিজের সংসার পাতা হয়নি এখনো। নবম শ্রেণী পাস করে আর পড়ালেখা এগুয়নি।
সম্প্রতি কথা হয় সাপ্তাহিক শপথের এ প্রতিবেদকের সাথে।
বাপ্পি ডোম বলেন, প্রতি মাসে অন্তত ১৫-২০জন মানুষের মৃতদেহ কাটাছেঁড়া করতে হয়। ডাক্তার আসার আগে মাস্ক, গ্রাউন, গ্লাভস পড়ে প্রস্তুতি নিতে হয়। ছুরি, সুঁই সুতা গুছানো হয়। মূলত মামলার ধরণ অনুযায়ী কাজ করি। যেমন বিষ খাওয়া আর গলায় ফাঁস দেয়া মৃতদেহের কাজ আলাদা আলাদা।
২০০৮সালে চাকুরি হয় বাপ্পির। সরকারি যে বেতন পান তা দিয়ে সংসার চলে। তবে পঁচা মৃতদেহের কাজ করলে মদ খেতে হয়। না হয় খাবারের প্রতি রুচি আসে না। তাই প্রতিটা কাজ শেষ করে মদ খেতে হয়। এজন্যে বেতনের টাকায় হয় না। এখানে উপরি কোনো ইনকাম নাই। তবে মরা মানুষগুলোর স্বজনরা কিছু বকশিস দেয়। তা দিয়ে অতিরিক্ত খরচ মিটাই।
মৃতের স্বজনরা যখন আসে সবাই বাপ্পির সাথে কথা বলে। বাপ্পি ডোম বলেন, অনেক সময় ভাবি ভালো কোনো চাকুরি করার। কিন্তু সে সুযোগতো আমাদের নাই। ভবিষ্যতে বাচ্চা কাচ্চাদের ভালো কোনো চাকুরি পেলে অবশ্যই যেতে বলবো। তবে আমার পেশার প্রতি আমার শতভাগ শ্রদ্ধা আছে।
বংশগত কাজ হওয়াতে কোনো ভয় লাগে না। পাঁচ নম্বর পূর্বপুরুষ হিসেবে আমি কাজ করছি। সুতরাং ভয়ের কিছু নাই। সুমন ডোম আমার বড় ভাই। এ কাজে ওনি আমার গুরু। আমরা দুই ভাই-ই একসাথে কাজ করি।
হাজীগঞ্জে অশোক হরিজন মার্ডার হয়েছিলো। তার পোস্টমর্টেম করতে হয়েছে। খুব মায়া লেগেছিলো। কিন্তু কিছু করার নাই। এটা আমার কাজ; যোগ করেন বাপ্পি। ছোট বাচ্ছাদের মৃতদেহ আসলে মায়া লাগে। প্রতিদিন আমার ভাতিজাকে আদর করে ঘর থেকে বের হই। বাসায় গিয়ে একসাথে খাই। নয়তো ভালো লাগে না। ছোট ছোট বাচ্চাদের দেখলে আদর করি। আপন মানুষও যদি কোনোদিন দুর্ঘটনা পড়ে তখন কাজ করতে হবে। মনে মায়া লাগবে তারপরেও কিছু করার নাই।
আইন অনুয়ায়ী সরকার জীবিত মানুষ কাটতে বললেও আমি কাটবো বলে জানান বাপ্পি ডোম। আমি জীবিত মানুষও কাঁটতে পারবো। মানুষ কাটাই আমার কাজ।