বিশেষ প্রতিনিধি :
মোঃ আলা উদ্দীন। মাঝ বয়সী এ মানুষটাকে চাঁদপুর শহরের অনেকেই চিনেন। যারা রং চা খেতে পছন্দ করেন তারা অন্তত মামা স্টোরের মামাকে অবশ্যই চিনেন। শুধু শহরের মানুষ নয় অন্যান্য উপজেলার রং চা পিপাসুরাও মামাকে খুব ভালো ভাবেই চিনেন। গ্লাস ভর্তি রং চা। যে কেউ খেলে তৃপ্তির ঢেকুর গিলেন। সরকারি বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারাও যখন বিকেলে ঘুরতে বের হন তার দোকানে এককাপ রং চা খেয়ে ফুরফুরে মেজাজে বাসায় ফিরেন। সবাই আলা উদ্দীনকে মামা বলে ডাকেন। স্টেডিয়াম রোডের আল বারাকাহ হাসপাতালের পশ্চিম পাশে ছোট্র দোকান। সামনে সাদা গ্লাসের তাঁক। তাঁকের উপরের স্তরে বিভিন্ন প্রকারের সিগারেট। নিচের একপাশে অন্তত দুই ডজন সাদা গ্লাস। পাশেই সাজিয়ে রাখা আছে লেবু। চামড়া সরানো আদা। আপনার দেখতেও অনেক ভালো লাগবে। খুবই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। পাশেই রাখা আছে চিনি, লবন আর লিকুয়েড দুধ। যে যে রকম খেতে চান খুব যতœ সহকারে বানিয়ে হাতে তুলে দেন। যদিও তার হাতে বানানো রং চা সবার প্রিয়। অবশ্য অল্প কয়েক প্রকার মালামালে সাজানো তার ছোট্ট দোকান। তবে চিমছাম পরিপাটি। কিছু কোম্পানীর কেক, ডাল আর সাদা ও তরল পানিও পাওয়া যায় তার দোকানে।
মামা স্টোরে যেসব চা পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে রং চা দোপাট্রা ২০ টাকা, রং চা ১০ টাকা, দুধ চা ২০ টাকা, সাদা লেবু চা ২০ টাকা। নরমাল চা ১০ টাকা। এক ছেলে এক মেয়ের জনক আলাউদ্দীন এর গ্রামের বাড়ী মুন্সিগঞ্জ। চাঁদপুর শহরে আছেন অন্তত ২০ বছর ধরে। এ ছোট্র ব্যবসার পাশাপাশি তার আরো দু-একটা ব্যবসা আছে। অবশ্য ঐ ব্যবসা ফোনে ফোনে যোগাযোাগ করে পরিচালনা করেন। অবশ্য মাঝে মাঝে ওসব ব্যবসা দেখাশোনা করতে ছুটে যান দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
সম্প্রতি সাপ্তাহিক শপথের আলাউদ্দীন মামার সাথে কথা হলে তিনি জানান, ভালোই দিন কাটছে। আমার দোকানে অনেক মানুষ আসে। আমার খুব ভালো লাগে। আমার গর্ববোধ হয়। দোকান হয়তো ছোট। কিন্তু অনেক বড় বড় মানুষ আমার এ ছোট্ট দোকানে আসে। আমার চায়ের প্রশংসা করলে আমি খুশি হই। ভালো লাগে। তবে মাঝে মাঝে কিছু মানুষের আচরণে দুঃখ পাই। কিন্তু অনেক মানুষের আচরণে মন ভালো হয়ে যায়।
শহরে অনেকেই রং চা বিক্রি করে কিন্তু আপনার কাছে মানুষ কেন আসে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে মানুষ ভালোবাসে। পছন্দ করে। আমি চেষ্টা করি মানুষের সাথে সুন্দর আচরণ করতে। যতœ করে চা বানিয়ে দিতে। ভালোভাবে কথা বলতে। অনেক সময় মন মেজাজ ভালো থাকে না। মন খারাপের সময়ও চেষ্টা করি মানুষের সাথে ভালো আচরণ করতে। কাস্টমারের সাথে কখনো ক্ষেপি না। অন্তত ধর্য্য সহকারে ব্যবসা চালাতে চেষ্টা করি।
অন্য কোনো বড় ব্যবসা করতে মন চায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বড় ব্যবসা করতে অবশ্য মন চায়। অনেক টাকা নাই। তাই বড় ব্যবসা করার সাহস পাই না। তারপরে আমার আরো একটা ব্যবসা আছে সেটার আয় দিয়েই সংসার চালাই। চায়ের দোকান চালাই। এখান থেকে যা আসে কমকি? ভালোই চলছে। আমাকে কেউ চায়ের দোকানদার বলে না। সবাই মামার চা বলে। কেউ ক্ষীণ দৃষ্টিতে দেখলেও আমার খারাপ লাগে না। মানুষের টাকা মেরে খাই না। কষ্ট করে খাই। মানুষ অন্যের টাকা দিয়ে হেডাম দেখায়। বাহুদুরি করে। আমি শ্রম দেই। কষ্ট করি। কষ্ট করে খাই।