রিফাত কান্তি সেন
করোনা আতংকে নিস্তব্দ গোটা বিশ্ব। প্রায় তিন’শ কোটি মানুষ এখন গৃহবন্ধী। বিত্তবানরা নিজের আখেড় ঘুছাতে পারলেও দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো পড়েছে বিপাকে। কিছু লোক, খুঁজে খাবার জোগাড় করতে পারলেও কেউ কেউ নীরবে চোখের পানি ঝড়াচ্ছে। গল্পগুলো কেমন যেনি অদ্ভুত। এই যে মহামারী রোগ করোনা সেটাকেও একদল লোক পাত্তা দিচ্ছে না। এ মহাদুর্যোগে কেউ কেউ চাল,ডাল চুরিতে ব্যস্ত।
দুর্ভাগ্য হলো কিছু ব্যবসায়ীও সে খাতায় নাম লিখিয়েছেন। পণ্যের দাম বাড়িয়ে একটু বাড়তি ফায়দা লুটছেন। সেদিন একটি গ্লাভস কিনতে একটি দোকানে গেলাম।। দোকানী ২৫ টাকার গ্লাভস বলছে ৮০ টাকা! আমি খুব হতবাক হলাম। তিনি বললেন,’ ভাই নিলে নেন,না নিলে নাই’। তার নাকি সময় নাই। এত লোভ! খুব হুঙ্কার দিয়ে বললো,যান কারে বলবেন বলেন।
আমি নিশ্চুপে বললাম,কারে আর বলবো,উপরওয়ালারে। তিনিই তো ভরসা। এর ও একটা কারণ আছে। আমার পাশবর্তী এক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য প্রশাসন মাঝে মাঝে হানা দেয়। কিছু দোকানিকে জরিমানা ও করা হয়। কিন্তু যেই লাউ সেই কধু। কিছুক্ষণ পর আবার তারা পূর্বের অবস্থানে ফিরে যায়। একজন তো সেদিন আমাকে পেয়ে বলছে,ভাই কিছু তুলে ধরেন। জানেন তো, এই যে জরিমানার টাকা এটা কিন্তু আমাদের কাছ থিকাই তারা তুলবে। মানে প্রশাসন যাওয়ার পর আগের মতই দাম বাড়াইয়া দেয়। আমার মনে হয় এদের সুযোগ না দিয়ে লাইসেন্স বাতিল করে দেয়া উচিত।
আরেকটি গল্প,এটিও বাস্তবতা থেকে তুলে আনা।
গতকাল রাতে একটি মিনিটের জন্য ঘুমাতে পারিনি। নিজের আর্থিক অবস্থা যে খুব ভাল তেমন ও না। নিজেই বেশ কষ্টে দিনাতিপাত করছি। কিন্তু মনে হলো আমার মাথার উপর তো ছায়া হিসাবে বাবা আছে।
অতি কষ্টে দিনাতিপাত করলেও তিনি তো কখনো না শব্দটি বলেন নি। যেহেতু গ্রামে থাকি সেহেতু গ্রামের মানুষের দুঃখ,কষ্ট কিছুটা হলেও আচ করতে পারি। আর পারবোই না কেন? আমি তো মানুষ। হয়তো নিন্মমধ্যেবিত্ত, তাই চুপষে থাকি।
গ্রামের স্কুলে খন্ডকালীন চাকরি করতাম বিধায় অনেক পরিবারেরই হাঁড়ির খবর আমি জানি। যখন যা পারতাম আমার সাধ্য অনুযায়ী তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করতাম। কখনো না বলিনি। কিংবা কোন কারণে কেউ নিজের অপরাগতা প্রকাশ করেছে,সেটাও আমি নিজ পকেট থেকে পূরণ করে দিয়েছি। আমার অনেক সহকর্মী সেটা ভাল জানেন। বিশেষ করে যিনি আমাদের পিয়ন,ইউসুফ ভাই ভাল করেই তা জানেন। তিনি সবই দেখতেন।
ঐ যে বল আছে আমার। মাথার উপর ছাদ, আমার বাবা।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই একটি খেটে খাওয়া,দিন মজুর পরিবারকে ফোন দেই। জানতে চাই তারা ত্রাণ পেয়েছে কী না? খুবই অবাক হলাম,বললো ‘না’!
তবে কী জানেন, যখন জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছিস? খুব অকপটে বললো,ভাল আছি। বললাম,খাবার আছে ঘরে? বললো, ‘আছে’।
কিন্তু আমি জানি,এটা মিথ্যে কথা। ফোনের ওপ্রান্ত থেকে মনে মনে ভাবলাম,নিন্মমধ্যেবিত্ত,মধ্যেবিত্তের সম্বল সম্মান।
কটা বছর বাঁচবো জানি না,কখন মৃত্যু এসে দেখা দেয়, তা ও জানি না!
কিন্তু গতরাতে মনে হলো,আমি খেলাম,আমার প্রতিবেশী খেলোনা,তবে তো খাবার হারাম হবে।
এই খাবার খেয়ে হয়তো বেঁচে থাকবো,কিন্তু তৃপ্তির ঢেকু তুলতে পারবো না!
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,কিছু লোক দিনমজুর আছে,কিন্তু কখনো মাথা নত করে না। কিছু লোক শ্রমিক আছে,কখনো শিড় নত করে না–তারাই মানুষ।
আপনি ঠিকই সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন,কিন্তু ঐ যে লিস্ট করতে দিচ্ছেন যাদের, তাঁদের কাছে ঘাপলা।
নয়তো এই মহাদুর্যোগে, চাল চোর,ডাল চোর দেখতে হতো না!
আসুন, আমরা সবাই মিলে একত্রে বাঁচি।
শুধু স্বার্থপরের মত নিজে বাঁচার কথা চিন্তা করলেই চলবে না।
ফটোসেশন না করে, গোপনে ত্রাণ উপহার হিসাবে পৌঁছে দিন তাদের কাছে যারা মুখ ফুটে বলতে পারছে না।
আবার নিজে মহান হতে গিয়ে,অন্যেকে অপমান করা ঠিক হবে না। কারণ জ্ঞানীলোক ভাল জ্ঞানপাপী ভাল নয়। বড় বড় কথা না বলে আপনার আশেপাশের মানুষগুলোর খবর নিন। মনে রাখিয়েন,আপনি মরে গেলে এ অর্থ,সম্পদ,টাকা, পয়সা কোন কাজে আসবে না।
ভাল থাকুন,সুস্থ্য থাকুন,গোপণে মানুষের মাঝে সাহায্যের হাত বাড়ান।
বিঃদ্রঃ- কারো ভাল না লাগলে কমেন্ট করবেন না। উলটা পালটা লেখার দরকার নেই। এটি একান্তই আমার ব্যক্তিগত ভাব বিনিময়।