মোঃ কবির মজুমদার:
মতলব দক্ষিণ উপজেলায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ছাড়পত্র ছাড়াই সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে অবাধে গবাদি পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করছে ব্যবসায়িরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জবাইকৃত পশুর শরীরে কোন রোগ বালাই আছে কিনা এমন কোনো ধারণাই রাখেন না ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ই। যদিও সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আইন প্রয়োগের দায়িত্ব প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট পৌর কর্তৃপক্ষের। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের কোনো তৎপরতা নেই বললেই চলে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এমন নিরবতা আর অন্যদিকে জনসচেতনতার অভাব দুইয়ে মিলেই যেন হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য এবং দিন দিন প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ ক্রেতারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মতলব সদরের বাজার, নায়েরগাঁও বাজার, নারায়ণপুর বাজার, মুন্সিরহাট বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে প্রতিদিন অন্তত ২০টি গরু এবং অন্তত ৫টি ছাগল জবাই করা হয়। তাছাড়া হাটের দিন সবচেয়ে বেশি গরু, ছাগল জবাই করা হয় বলে জানান হাট কমিটির লোকজন। সরকারি বিধিমালা মোতাবেক প্রতিটি গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একজন চিকিৎসক দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও সে নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না কোথাও।
গতকাল বুধবার উপজেলার নারায়ণপুর বাজারে জোড়পুল থেকে আসা জাবেদ, চিরায়ূ গ্রাম থেকে আসা ইব্রাহিম বকাউল বলেন, আমরা যেসব গবাদিপশুর মাংস খাচ্ছি। সে সকল গবাদিপশু সুস্থ না অসুস্থ, তাতো আমরা জানিনা। তবে শুনেছি, নিয়ম অনুযায়ী পশু জবাই করার পূর্বে পশু চিকিৎসক পশুটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছাড়পত্র এবং সীল মেরে দিবে। তারপর ব্যবসায়ীরা পশুটি জবাই করে বিক্রি করবে হাট-বাজারে।
কিন্তু বাস্তবিকভাবে দেখা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ ধরনের কোন তদারকি না থাকায়, সাধারণ জনগণ মরা গবাদিপশু, নাকি রোগাক্রান্ত গবাদিপশুর মাংস খাচ্ছে তা বুঝার কোন উপায় নেই। পাশাপাশি ধর্মীয় নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে পশুটি জবাই করা হচ্ছে কিনা, সেটাও সকলের অগোচরে।
এমতাবস্থায়, গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোন ছাড়পত্র আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মাংস ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা অনেক দিন থেকে গরুর মাংস বিক্রি করে আসছি। গরুর জবাই করার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় না। গত ২/৩ বছর আগে পশু হাসপাতাল থেকে খোঁজ রাখলেও এখন আর কেউ খোঁজখবর রাখেন না।
এদিকে উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর গাজী মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, পশু জবাই করার পূর্ব পর্যন্ত পশুটি সুস্থ কিনা, রোগাক্রান্ত কিনা, পশুটি গর্ভবর্তী কিনা, এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দায়িত্ব উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বা চিকিৎসকের। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পশু জবাই এর পরবর্তীতে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে বিক্রি হচ্ছে কিনা এবং ওজনের কারচুপি করছে কিনা, সেটা দেখশুনা করার।
তিনি আরো বলেন, পূর্বে জবাই করা রক্ত ফ্রিজে সংরক্ষণ করে পুরাতন মাংসের উপরে মিশ্রিত করে বিক্রি করায় মতলব পৌর বাজারে মো. আল আমিন নামের এক মাংস ব্যবসায়িকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর ১টার দিকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যাট সেটু কুমার বড়ুয়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এ জরিমানা করেন। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুহুম্মদ জাকির হুসাইন বলেন, জনবল সংকটের কারণে আমাদের সঠিকভাবে বাজার মনিটরিং করতে ব্যাঘাত ঘটছে। এ কারণে পশুর চিকিৎসা ছাড়াই নির্বিগ্নে পশু জবাই হয়। তবে অসুস্থ গবাদিপশুর মাংস খাওয়া অবশ্যই জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ছাড়পত্র ছাড়া পশু জবাইয়ের বিষয়ে চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন বলেন, পরীক্ষা ছাড়া যদি কোন অসুস্থ পশু জবাই করে সেটা পৌরসভা দেখবেন।