তুহিন ফয়েজ:
চাঁদপুরে সর্বত্র ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিনই প্রায় ৫ শত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে বয়স্ক রোগীর সংখ্যাই বেশি। যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তিনগুন বেশি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। বিশেষ করে গত ৭ দিনে মতলব আইসিডডিআরবি হাসপাতালে ৩ হাজার ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। আর এসব রোগীর অধিকাংশই মহিলা ও শিশু। পাশাপাশি চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালেও আড়াই শতাধিক রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
তবে আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারনেই গত এক সপ্তাহ ধরে চাঁদপুরে জ¦র, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়াসহ ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তাই কয়েকদিন ধরে মতলব আইসিডিডিআরবি ও চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আউটডোর এবং ইনডোরে সব স্থানে রোগীদের প্রচন্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। যদিও এ রোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও বিশুদ্ধ পানি পানের প্রতি জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা। পাশাপাশি পঁচা-বাশি খাবার বর্জণেরও তাগিদ দিয়েছেন তারা।
আলাপকালে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের সহকারী রেজিস্টার (শিশু) ডা. মাহবুব আলী খান বলেন, প্রতিবছরই এই সময়ে (আবহাওয়া পরিবর্তন কালে) সাধারণ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় বেশি। বিশেষ করে এ রোগে মহিলা ও শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়।
তিনি বলেন, শিশুদেরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে হাতের মাধ্যমে কোন জীবানু যেন তার মুখে প্রবেশ না করে। এছাড়াও বয়স্কদের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানি পান জরুরি। পাশাপাশি যেকোন ধরনের খাবার গ্রহণে সবাইকে সর্তক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে আলাদা ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ থেকে হাসপাতালের দ্বিতীয় ও ৩য় তলায় পুরুষ ও শিশু ওয়ার্ডের পাশেই ডায়রিয়া রোগীদের জন্য বিশেষ ইউনিটে চলছে চিকিৎসাসেবা। ওইসব ইউনিটে একজন ইনচার্জ ও প্রশিক্ষিত নার্সরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।
সরেজমিন মতলব আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের ৩টি কক্ষে রোগী ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৭০। অথচ হাসপাতালে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বারান্দায় বেড বিছিয়ে প্রতিদিন ৪ শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এসব রোগীরা চাঁদপুর ছাড়াও পাশ্ববর্তী কুমিল্লা, ফেনী, কক্সবাজার, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এসে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। গত ১ এপ্রিল থেকে ৭ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত ৭ দিনে এই হাসপাতালে ২ হাজার ৯শ ৫৭ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহতলী গ্রামের নুসরাত জাহান বিথী, মতলব উত্তরের সুজাতপুর গ্রামের লিপি বেগম জানান, এ হাসপাতালের সেবার মান অনেক ভাল। ডাক্তাররা রোগীদের যতœসহকারে সেবা দিয়ে থাকে। তাই যেকোন রোগী ভাল সেবার জন্যই এ হাসপাতালে ছুটে আসে। এমনকি হাসপাতাল থেকে ওরস্যালাইন ও ট্যবলেট সরবরাহ করা হয়, যা অনেক কার্যকরী বলে জানান তারা।
তবে হাসপাতালের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. ফজল খান বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তন, পঁচা, বাশি খাবার, দুষিত পানি ব্যবহারের কারনেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন আইসিডিডিআরবিতে ৪ শতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছে। এদেকে সেবা দিতে ৫ জন ডাক্তার, ৬ জন সিনিয়র নার্স ২০ জন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োজিত রয়েছেন।
অপরদিকে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে গত ৩০ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল আড়াই শতাধিক ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। এরমধ্যে পুরুষ ৬৭ জন, মহিলা ১০৯ জন ও শিশু রোগী ৭৯ জন। এদের মধ্যে ২৮ জন পুরুষ, ৪৬ জন মহিলা ও ২১ জন শিশু রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অপর রোগীরা চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে জানা গেছে।
চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের পাইকদি এলাকার বাসিন্দা মঞ্জু রাণী দাস ও শহরতলীর বাঘড়াবাজার এলাকার বাসিন্দা হাজেরা বেগম জানান, গত মঙ্গলবার রাতে এসে শিশুদুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। এরপূর্বে তারা মতলব আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ছিল। তাদের শারীরিক অবস্থা এখন কিছুটা ভাল। আশাকরছি তাদেরকে বাসায় নিয়ে যাব।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার এ কে এম মাহবুবুর রহমান বলেন, শূণ্য থেকে ছয় মাস বয়সি শিশুদের পরিমানমত খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো, ৭ মাস থেকে ৫ বছর বয়সি শিশুদের পরিমানমত খাবার স্যালাইন, একটি করে বেবিজিংক ট্যাবলেট এবং বাড়তি খাবারের মধ্যে সুজি, খিচুড়ি, ডাবের পানি, চিড়াসহ তরল খাবার খাওয়াতে হবে। তবে ওরা ভাল থাকবে। অন্যথায় ডায়রিয়া আক্রান্তদের নিকটবর্তী স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে নিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।