সুমন আহমেদ:
মতলব উত্তর উপজেলায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ হলুদ হলুদে সয়লাব। মাঘের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষা ফুল। সরিষা ফুলের রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত যেমন মাঠ, তেমনি বাম্পার ফলনে উপজেলার কৃষকের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের ঝিলিক।
সরিষার হলুদ হাসিতে স্বপ্ন দেখছেন উপজেলার কৃষক। মৌসুমি সরিষা চাষ লাভজনক হওয়ায় চলতি মৌসুমে আবাদে মনোযোগ দিয়েছেন উপজেলার কৃষকরা। এখানকার কৃষকরা স্থানীয় জাতের পাশাপাশি বারি সরিষা-৪, ৯, ১৪ ও ১৫, বিনা-৪ ও ১১, টরি-৭, এসএম-৭৫ সরিষার আবাদ করে লাভের মুখ দেখছেন।
কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। গত বছর সরিষার আবাদ হয়েছিল ৬৪০ হেক্টরে। এবার আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় এবং বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেশি হওয়ায় সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে। সরিষা একটি লাভজনক ফসল, কৃষক সরিষা চাষে সফলতাও পেয়েছেন। তাই তাদের সব সময় সহযোগিতা করা হচ্ছে।
এ উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়ন ও ছেংগারচর পৌর এলাকায় কৃষকরা সরিষার চাষ করেছেন। সরকারের কৃষিবান্ধব নানা পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে এই অ লের জমিতে চাষ হচ্ছে তিন ফসল। আমন কাটার পর পরে থাকা জমিগুলোতে আবাদ হচ্ছে সরিষা। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।
গত বছরও সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছিল। সেই সঙ্গে বাজারে দামও ছিল সন্তোষজনক। এবারো ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষক। বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষে কৃষক লাভবান হওয়ার পাশাপাশি এলাকাতেই কর্মস্থান হয়েছে কৃষি শ্রমিকদের।
উপজেলার গজরা ইউনিয়নে মালাইরকান্দী গ্রামে ২ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন কৃষক আশাদ বেপারী (৬০)। তিনি বলেন, আগে ধান কাটার পর জমি ফেলে রাখতাম। এখন ফেলে না রেখে সরিষা চাষ করছি। এতে বাড়তি আয় হচ্ছে। সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে চলতি মৌসুমে ধান আবাদ করব।
একই গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা (৫০) বলেন, সরিষা চাষে খরচ কম। অন্য ফসলের তুলনায় ফলনও ভালো হয়। অন্য সময়ে সরিষা ঘরে তোলা যায়। সরিষা চাষে আমি বেশ লাভবান হয়েছি।
আরেক সরিষা চাষি জাহানে আলম (৪৫) জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনো ক্ষতি না হলে এবারে সরিষার ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। সরিষা তার জমির দ্বিতীয় ফসল। সরিষা তোলার পর বোরো চারা রোপণ করবেন। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলেন, উপজেলায় ভোজ্যতেলের জোগান দিতে এবং আমদানি নির্ভরশীলতা কমাতে সরিষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বলেন, বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করতে আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। ১ হাজার ৪শ কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের সরিষা বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ থেকে প্রায় দুই লাখ টাকার উন্নত জাতের সরিষার বীজ কৃষকদের কিনে দেয়া হয়েছে। এছাড়া সরিষার রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের জন্য কৃষকদের পরামর্শসহ সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে সরিষার আবাদ থেকে কৃষকরা ভালো মুনাফা করতে পারবেন।