সাগর আচার্য্য:
চাঁদপুর পৌর ১৩নং ওয়ার্ডস্থ মঠখোলায় মাদক, সন্ত্রাসবাদ, বাল্যবিবাহ, নৈতিকতার অবক্ষয় ও বিপথগামীতার প্রতিরোধে এলাকাবাসীর উদ্যোগে মাদক বিরোধী জনসচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত জনু গাজীর মাদ্রাসা ও এতিমখানা মাঠ প্রাঙ্গনে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আব্দুল মন্নান ঢালীর সভাপ্রধানে ও মোঃ ওমর ফারুক মিয়াজীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আসিফ মহিউদ্দিন। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, আমরা পুলিশে চাকুরী করি। কিন্তু আমরাও এই সমাজের অংশ। মাদক, বাল্যবিবাহ, নৈতিকতার অবক্ষয় ও ইভটিজিং সহ বিপথগামীতার প্রতিরোধে সব সময় পুলিশ রয়েছে তা প্রতিরোধ করার জন্য। মাদক যে কতটা ভয়াবহ জিনিস তা আমরা সকলেই জানি। যতটুকু শুনেছি আজ থেকে ৪০-৫০ বছর আগেও যদি কোন গ্রামে কেউ মাদক সেবন করতো তবে তাকে একঘরে করে রাখা হতো। বর্তমানে সামাজিক মূল্যবোধ অবক্ষয়ের কারণেই মূলত এসব নিয়ম রক্ষা করা যাচ্ছে না। তিনি উপস্থিত অভিভাবকদের উদ্দেশ্য আরো বলেন, নগর পুড়লে কিন্তু দেবালয়ও রক্ষা পায় না। সুতরাং আপনার সন্তান কোথায় যাচ্ছে কি করছে এসব ব্যাপারে যদি নিজেরা সচেতন থাকেন তবে আপনাকে এলাকার অন্যান্য ব্যক্তি কিংবা প্রশাসনের সহোযোগিতার প্রয়োজন হবে না। আপনি নিজেই নিজের সন্তানকে এই বিপথগামী পথ থেকে রক্ষা করতে পারবেন। প্রধান বক্তার বক্তব্যে চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ বলেন, যারা মাদক সেবন করে তাদের আসলে নিজেদের উপর কন্ট্রোল থাকে না। এর প্রতিক্রিয়া এতটাই খারাপ যে সেবনকারীর মস্তিষ্কে সবসময় মাদক নিয়ে চিন্তাধারা থাকে। একজন সুস্থ মানুষের ব্যতিক্রম আচরণগত বৈশিষ্ট্য দ্বারাই বুঝা যায় সে মাদকের মত মরনব্যাধি রোগে আক্রান্ত। অভিভাবকদের সচেতনতাই পারে মাদক থেকে তার সন্তান কে বাঁচাতে। মাদকের মতো আরেকটি ভয়াবহ নেশা হচ্ছে মোবাইলের নেশা। বিশেষ করে ১৩ বছর বয়স থেকে শুরু করে ছেলে এবং মেয়েরা মোবাইলে আসক্ত হয়ে পরছে, সে দিকেও অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে। বাল্যবিবাহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে এখনো কিছু অভিভাবক আছে যারা কিনা কন্যা সন্তানের বয়স ১৩-১৪ হলেই মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে। কিন্তু এর ফলস্বরূপ শেষ হয় গর্ভবতী অবস্থায় মেয়েটার অকাল মৃত্যু কিংবা অনাগত সন্তানসহ মায়ের মৃত্যু। তিনি এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে উপস্থিত সকলের প্রতি অনুরোধ জানান। উক্ত অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক বাপন সেন, ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ আলমগীর গাজী, আওয়ামীলীগ নেতা ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক হারুন অর রশিদ হাওলাদার, চাঁদপুর আদর্শ হোমিওপ্যাথি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মােজাম্মেল হক পাটওয়ারী, বাক শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ শফিউল্ল্যাহ, ১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা যুবরাজ দাস, খালেক মিয়াজী প্রমুখ। এছাড়াও এলাকার অভিভাবক ও যুবসমাজের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন, ফিরোজ পাটওয়ারী, জওহরলাল আচার্য্য, ব্রজ গোপাল আচার্য্য, বিপ্লব আচার্য্য, রাজু বেপারী, মোঃ জামাল গাজী, লিয়াকত পাটওয়ারী, সোহাগ পাটওয়ারী, বাদল মজুমদার, হাসমত গাজী, আলমগীর হোসেন, সাগর বেপারী, বাবু খান, আবুল কাশেম, হিমেল মিয়াজী, মিলন কাজী, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু প্রমুখ। এ সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্কেল এবং উপস্থিত সকল সচেতন মানুষের মধ্যে মাদক বিরোধী লিফলেট বিতরন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক ফারুক মিজি দৈনিক শপথকে বলেন, মাদক বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার ব্যাপারে আমাদের এলাকার সকলে অনেক আগে থেকেই চেষ্টা করে গেছেন। আমরা আজকের এই অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য এলাকার সকলের প্রতি ও চাঁদপুর জেলা প্রসাশনের প্রতি বিশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমরা আজ থেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি আমাদের এলাকাতে মাদক বিরোধী আন্দোলনের যে ধারাবাহিকতা আজ থেকে শুরু হলো তা নিশ্চই অব্যাহত থাকবে।