মতলব দক্ষিণ প্রতিনিধি:
মতলব দক্ষিণ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নায়েরগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়টি মঞ্জুরি বাতিলের ঝুঁকিতে রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কুমিল্লা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিদ্যালয়ের নামে কাক্সিক্ষত ভ‚মি না থাকায় বার বার পত্র দেয়ার পরও মঞ্জুরির ঝুকি কাটিয়ে উঠতে পারছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের নামে ৭৫ শতাংশ ভ‚মি থাকা আবশ্যক। কিন্তু নায়েরগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে ৭৫ শতাংশ ভ‚মি না থাকায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্থানীয়ভাবে ভ‚মি সংগ্রহের জন্য পত্র প্রেরণ করে। এ পত্রের আলোকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অদ্যবদি প্রয়োজনীয় ভ‚মি সংগ্রহ করতে পারেনি। ফলে বিদ্যালয়টি সরকারি মঞ্জুরি বাতিলের ঝুকিতে রয়েছে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ জয়নাল আবেদীন জানান, মঞ্জুরি স্থগিতের জন্য বোর্ড ও মন্ত্রণালয় থেকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ৩ বার পত্র দিয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত ভ‚মি ক্রয়ের ব্যাপারে কোনো সমাধান হয়নি।
আলাপকালে গতকাল শনিবার বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, মঞ্জুরি স্থগিতের চিঠি আমার পূর্বের প্রধান শিক্ষক পেয়েছেন। কিন্তু এ ধরনের চিঠি আমাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি ও আমি কোনো চিঠি পাইনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহিম খান জানান, নায়েরগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়টি মঞ্জুরি বাতিলের ঝুঁকিতে রয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বোর্ড থেকে চিঠি পাঠিয়েছে সরকারি নিয়মানুযায়ী ভ‚মি ক্রয়ের জন্য। আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটিকে স্থানীয়ভাবে ৭৫ শতাংশ ভ‚মি ক্রয়ের জন্য পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু অদ্যবধি বিদ্যালয়ের নামে ভ‚মি ক্রয় করতে পারেনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তবে বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মোঃ হুমায়ুন কবির জানান, চিঠিতে উল্লেখ করেছে বিদ্যালয়ের কাম্য পরিমান জায়গা না থাকায় বিদ্যালয়টি স্বীকৃতি দেয়া গেলো না। জরুরি ভিত্তিতে ভ‚মি ক্রয় করে শিক্ষা বোর্ডকে অবহিত করার জন্য বলা হয়েছে।
যদিও ইতোপূর্বে বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মোঃ হুমায়ুন কবিরের নির্দেশে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ আলমগীর হোসেন, সিনিয়র শিক্ষক শাহ আলম শিকদার, স্বরূপানন্দ, শান্তি রঞ্জন মন্ডল, মোঃ নুরুদ্দিন, নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে কর্মরত শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দলিল সংগ্রহ ও ভ‚মি ক্রয়ের নামে ১ লাখ ৮২ হাজার টাকা সংগ্রহ করে। ওই টাকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক কল্যাণ ফান্ডে ও নিজেদের হাতে জমা রাখে। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবিরের নির্দেশে ওই টাকা উত্তোলণ করে বিদ্যালয়ের সভাপতি জয়নাল আবেদীনের কাছে জমা দিতে গেলে তিনি না নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে জমা রাখতে বলেন। কিন্তু সেখানে না রেখে ওই টাকা বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎসাহী সদস্য মাসুদ আলমের কাছে গচ্ছিত রাখেন বলে বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোঃ শাহ আলম শিকদার জানান।
এ নিয়ে এলাকায় অভিভাবক, সুধী সমাজ, শিক্ষক, কমিটির মাঝে জল্পনা-কল্পনা চলছে। এদিকে বর্তমান এডহক কমিটি বিদ্যালয়ের নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকা বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দেয়া হয়েছে। খসড়া ভোটার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ এনে নায়েরগাঁও পাটন, চরনায়েরগাঁও, হরিয়ন, সাহাপুর, তিতারকান্দি গ্রামের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের পক্ষে মোঃ শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করেছেন খসড়া ভোটার তালিকা, নির্বাচন বাতিল করে আগে বিদ্যালয়ের নামে মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী ৭৫ শতাংশ ভ‚মি সংগ্রহ করা হোক। এ দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করেছেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মোঃ রিপন মিয়া, ইউপি সদস্য মোঃ আলাউদ্দিন প্রধান, আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর পাটওয়ারী, ডাঃ কিশোর কুমার পাল লিটন, মালেক মিয়া, গোবিন্দ ঘোষ, ওমর ফারুক প্রধান, নিজামউদ্দিন মুন্সী, মোঃ শাজহান মুন্সী, মোঃ মিলন, মোঃ আবুল কালাম, মোঃ মনির হোসেন, মোঃ রাজ্জাক, মোঃ মামুন মিয়াসহ শতাধিক অভিভাবক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এদিকে এলাকাবাসী এ দায়িত্ব অবহেলার জন্য বিদ্যালয়ের বর্তমান কমিটিকে দায়ি করেছেন।