আবু ইউসুফ:
হরেক রকমের পণ্য সামগ্রী নিয়ে স্থায়ী পসরা সাজিয়ে গুছিয়ে কয়েক বছর ধরে ব্যবসা করেছেন লোকটি। ব্যবসায়ীর এমন চমৎকার আঞ্জাম সত্যি বিরল। বিরল প্রতিভার এমানুষটির বসবাস কচুয়া উপজেলার হাসিমপুর মিয়ার বাজার সংলগ্ন হাসিমপুর গ্রামে। নাম মোহাম্মদ ইব্রাহিম(৩৫)। ২০১৭ সাল থেকে বাজারে ব্যবসা করে চলছেন। মা স্ত্রী এবং এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে চলছে জীবনের রঙের মেলা। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম কাজ করতেন। কাজের দায়ে পেটের দায়ে সীমানার ওপারে প্রতিবেশী দেশ ভারতে অনেকগুলি বছর কাটিয়েছেন। সে দেশে গিয়ে বৈদ্যুতিক টাওয়ারের কাজে লেগে পড়েন। একাজে দেশটির বিভিন্ন প্রদেশ প্রায় ২৬টিতেই ঘুরে বেড়িয়েছেন। শিলীগুড়ি, ভুটান, শিলীগুড়ি এসে কলকাতা, নেপাল হয়ে দিল্লি। এরপর আবার কলকাতায়। সেকান্দরাবাদ হায়দ্রাবাদ গাজিয়াবাদ মহারাষ্ট্র শেষে কর্ণাটক থেকে আবার কলকাতায়। এতসবের পর আজমীর গিয়ে শেষ হয় তার এলোমেলো এই অবৈধ নাতিদীর্ঘ প্রবাস জীবন। তবে যেখানেই গিয়েছেন সেখানকার মানুষের মাঝে ভালোবাসার ছাপ দিয়ে কুড়িয়ে নিয়েছেন সেখানে স্থানীয় মানুষদের আস্থা ও ভালোবাসা। এ ভালোবাসা শুধু ভালোবাসাই না দেশের সকল নাগরিকত্বের সনদও মিলেছে স্তরে স্তরে।
বার্থ কার্ড, রেশন কার্ড, স্কুল সার্টীফিকেট, ভোটার কার্ড, পেনকার্ড, আদার কার্ড, পঞ্চায়েত কার্ড, প্রধান কার্ড, মুখেয়া কার্ড, র্কোট এফিডেভিট, পাসপোর্ট থানা ভেরিফিকিশন, মা বাবার পরিচয় (নাম আব্দুলাহ, পিতা সিরাজউদ্দীন, মা সায়েরা।) অবস্থানের দলিল দস্তাবেজের সহযোগিতামূলক সব ডকুমেন্টস দিয়েছে সেখানকার মুখডাকা পরিবারের মা বাবা। পাসপোর্ট হয়ে যাওয়ার পর আবুধাবির পথে পাড়ি যমাতে সকল কাজ ও শেষের পথে। তখনি চলে গেলেন আজমীর শরীফ।
মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, আজমীর শরীফ জেয়ারত করার সময় আল্লাহর কাছে বলেছি আল্লাহ হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী রঃ এর উছিলায় আমার জন্য আমার মা যে দোয়া করেছেন তা আমাকে ফলিয়ে দাও। তার কয়েক দিন পর আসলাম বাড়িতে। মাকে বল্লাম মা আন্নে আমারল্লাই কি দোয়া করতেন? মা বলনে, করতাম তো। আল্লাহ আমার পোলারে আমার বুকে এনে দাও। এতসবের শেষে মায়ের দোয়ায় ঘরের ছেলে ঘরেই ফিরতে হয়েছে। আর ফেরা হলো না সেই সাজানো ভ্রমণের জীবন ফেরিতে।
এক একটা প্রদেশ টপকে যেতে আইনী জটিলতা হতো না? এমন প্রশ্নর জবাবে ইব্রাহীম বলেন, না ভাই। এমন সমস্যা হয়নি। তবে এই বিষয়টির কারনে অনেক ভারতীয় লোক আমাকে যাদুকর মনে করতো। তারা ভাবতো আমি যাদু জানি। কিন্তু আসলে আমার মায়ের দোয়ায় আমার কখনো কোন বড় ধরণের ক্ষতি হয়নি। অবৈধভাবে এতোগুলা শহর ঘুরেছি যে মায়ের দোয়ায় সে মায়ের না চাওয়াতে আর যাওয়াও হয়নি সে দেশে।
তাহলে বর্তমান সরকারের পদক্ষেপের বাস্তবতায় এখানকার মানুষেরা কি চায় বা কোন অভিযোগ এমনকি সরকার পরিবর্তনের ব্যাপারে কি ভাবেন?
না ভাই; ক্ষুদ্র জীবনে পৃথিবীর বহুজাতিক এবং বহুল জনগোষ্ঠীর দেশের যে বহুমুখী দূর্ভোগের জীবন যা আমার দেখা ভারতের ২৬টি প্রদেশের মানুষের জীবনের বাস্তবতা তা বাংলাদেশের জনগণের জীবনে এর শত ভাগের এক ভাগ ও নেই। যা আছে তা নেহাৎ নিছক। তবে কিছু ঘটনা অবশ্য খারাপ তা মানতে হবে। তবে যে পরিমাণ নিভু নিভু অনৈতিক অত্যাচার জনে জনে ঘরে ঘরে তার কানাকড়িও বাংলাদেশে মাঝে নেই।
সরকারের প্রতি মানুষ নিরবতার কারণ আমার থেকে বলাটা একেবারেই ক্ষুদ্র সেটা হলো রাজনীতির শাসনের ধরন পাল্টে যাওয়ায়, মানুষের আবেগ ও পাল্টে গেছে। যে যে যার যার মতো চলছে যদিও গণতন্ত্রের দেশ অবশ্য স্রোতের তালে ভেসে বেড়াচ্ছে তা কিন্তু অস্বীকার করবার জো নেই।