অনেকেই মেসেঞ্জারে বা কল করে জানতে চায়, বিসিএস এর রিটেনের প্রস্তুতি কিভাবে নিবে। আমি আসলে এই ব্যাপারে বলার জন্য নিজেকে উপযুক্ত ব্যক্তি মনে করি না এবং সে জ্ঞানও আমার নেই। তবে আমি যা বিশ্বাস করি ও উপলব্ধি করেছি তা আমি শেয়ার করছি এবং আমার এই উপলব্ধি জেনারালাইজেশনের কোন সুযোগ নেই।
১. আমার মতে, রিটেনে ফেইল করা খুবই কঠিন একটা ব্যাপার। যার চোখ-কান খোলা এবং বর্তমান বিশ্ব সম্পর্কে অল্প বিস্তর খোঁজ-খবর রাখেন, তারা অন্তত ফেইল করার কথা নয়। আমার মতে, রিটেনে পাস করা প্রিলির পাস করার পরিশ্রমের ৩০-৪০%। ২. আমার প্রথম পরামর্শ থাকবে লেখার স্টাইলের ক্ষেত্রে একটু ভিন্নতা নিয়ে আসা। বিশেষ করে ভূমিকাটা যেন গতানুগতিক না হয়। “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র ” মার্কা বাক্য দিয়ে শুরু করলে এ থেকে গতানুগতিক মার্কসই আশা করা যাবে এবং এধরণের বাক্য প্রশ্নের উত্তরে কোন ভ্যালু অ্যাড করে না। এর পরিবর্তে যদি এমন লেখা হয়, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে যে কাব্যগ্রন্থ/বইটি উৎসর্গ করেছেন…………. ” এটি নিশ্চিতভাবে পূর্বেরটির চেয়ে বেশি মার্কস ক্যারি করবে এবং পরীক্ষক পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করবে। তবে অবশ্যই বিষয়টি প্রশ্নের সাথে প্রাসঙ্গিক হতে হবে। ২. লেখার ক্ষেত্রে Abrupt Beginning করাটা খুবই কার্যকর একটা কৌশল। অর্থাৎ লেখার মাঝখান থেকে হঠাৎ শুরু করা। এটাকে Dramatic Beginning ও বলা চলে। যেমন- বাংলাদেশের শর্তসাপেক্ষে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের যথার্থতা নিয়ে একটি প্রশ্ন এসেছে। এক্ষেত্রে ভূমিকাটা শুরু করা যেতে পারে এভাবে, “রাঘব নন্দিনী আমি রক্ষকূল বধূ, আমি কি ডরাই সখি ভিখারি রাঘবে” বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়…., জিডিপি….. বাংলাদেশের এমন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় বাংলাদেশ আর কারো চোখ রাঙানোকে ভয় পায় না। ৩. ২ নম্বরে বর্ণিত কৌশলটি শুধু কবিতার লাইন দিয়ে দিতে হবে এমন নয়। কোন ঘটনা, পরিসংখ্যান, বিশেষ ব্যক্তির উদ্ধৃতি, পৌরাণিক কাহিনী, উদাহরণ ইত্যাদি দিয়ে শুরু হতে পারে। তবে যাই দিয়ে শুরু হোক না কেন তা যেন প্রাসঙ্গিক হয়। ৪. লেখায় বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ঠ টার্মগুলো ব্যবহার করলে তা লেখার মানকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে। যেমন, সাহিত্য সমালোচনার ক্ষেত্রে সাহিত্যের Figures of Speech গুলো ব্যবহার করার চেষ্টা করা যেতে পারে। Simile, Metaphor, Irony ইত্যাদি ব্যবহার করা। এমনভাবে বিষয় সংশ্লিষ্ট টার্মগুলোর ব্যবহার ভ্যালু অ্যাড করে। ৫. সাহিত্য সমালোচনার ক্ষেত্রে Freytag Pyramid টা ব্যবহার করা যেতে পারে যদি সমালোচনার বইটি উপন্যাস, নাটক, ছোট গল্প ইত্যাদি কাহিনী নির্ভর জেনরা হয়। ৬. লেখায় পরিসংখ্যান, গ্রাফ, চার্ট ইত্যাদির প্রাসঙ্গিক ব্যবহার করতে হবে। তবে এগুলো যত্রতত্র অপ্রাসঙ্গিক ব্যবহার পরীক্ষকের বিরক্তির কারণ হতে পারে। ৭. বিজ্ঞান ও কম্পিউটার এর ক্ষেত্রে ভূমিকায় বেশি সময় না দিয়ে মূল উত্তরটি সংক্ষিপ্ত ও যথার্থভাবে লিখতে হবে। প্রচুর প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। অযথা উত্তর বড় করলে সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে। ৮. ইংরেজির ক্ষেত্রে ফ্রিহ্যান্ড রাইটিং টা নিয়মিত চর্চা করতে হবে। এখানে কোন সমস্যা না থাকলে আসলে ইংরেজি পড়ার তেমন কিছু নেই। তবে, লেটার, সামারি ইত্যাদির Structure গুলো অবশ্যই দেখে নিতে হবে। একই Diction & Sentence Structure বারবার ব্যবহার না করে একটু ভিন্নতা নিয়ে আসতে হবে। গ্রামারের ভুলগুলো মিনিমাইজ করতে হবে। ৯. অনুবাদ আক্ষরিক করাটা অনুবাদের মান ও সৌন্দর্য কমিয়ে দেয় এবং তা অনেক সময় শুনতে হাস্যকর লাগে। অনুবাদ করতে হবে ভাবের। নিজে পড়ে যা বুঝা যায় তার অনুবাদ করতে হবে। তবে তা যেন প্রদত্ত টেক্সট এর সীমার ভিতরেই থাকে। সর্বোপরি, আমি বিশ্বাস করি Success of BCS written exam depends more on how to write rather than what to write. কপাল একেবারেই খারাপ না হলে ফেইল করা অসম্ভব। আরেকটি কথা যদিও বলাটা ঠিক না, তাও বলি। নিজে জ্ঞানী না হলেও লেখাতে জ্ঞানীর একটা ভাব ফুটিয়ে তুলতে পারাটাই টার্গেট করতে হবে।
লেখক: এসি ল্যান্ড (জামালগঞ্জ) সুনামগঞ্জ। (৩৬তম বিসিএস (প্রশাসন)।