মোঃ রাছেল:
ঢোলকলমি গ্রামাঞ্চলের প্রত্যেকটি অঞ্চলেই একটি পরিচিত নাম। সাদা ও বেগুনি রঙের পাপড়ি জড়ানো দৃষ্টিনন্দন একটি ফুলের নাম ঢোলকলমি। অঞ্চলভেদে অনেকের কাছে এ ফুল গাছটি বেড়ালতা বা বেড়াগাছ কিংবা ঢোলকলমি নামে পরিচিত। অথচ কালের বিবর্তনে সেই ঢোলকলমি বা বেড়াগাছ আজ যেন বিলুপ্তির পথে।
পাঁচটি পাপড়ির মেলবন্ধনে ফুটে ওঠা এর ফুল আর ৮-১০ ফুট লম্বা ঢোলকলমি গাছটি ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির শোভাবর্ধনে মেঠোপথের ধারে, বাড়ির আঙিনায়, মাঠের ধারে এ নিষ্প্রভ ফুল গাছটি এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। শৈশবের খেলার সঙ্গী ঢোলকলমির ডালে গড়া খেলার ঘর আর কনে সাজানো ফুলের বাহার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম।
এদিকে কচুয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বেড়ে ওঠা আগাছা হিসেবে পরিচিত বেড়ালতা বা ঢোলকলমি এখন আর দেখা যায় না। মাত্র কয়েক বছর আগেও এ উপজেলার প্রায় প্রত্যেক এলাকায় রাস্তার ধারে, বাড়ির পাশে, মাঠে-ঘাটে, জলাশয়ের ধারে, খাল-বিল সর্বত্রই চোখে পড়তো এ গাছ।
উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, ঢোলকলমি এর কান্ড দিয়ে কাগজ তৈরি করা যায়। তবে অযত্নে অবহেলায় জন্ম নেয়া ঢোলকলমি গাছের ফুল যেকোন বয়সি প্রকৃতি প্রেমিকের দৃষ্টি কাড়বে। সারা বছরই ঢোলকলমির ফুল ফোটে। তবে বর্ষার শেষে শরৎ থেকে শীতে ঢোলকলমি ফুল বেশি দেখা যায়।
উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের দুলাল মিয়া বলেন, ঢোলকলমি একটি উপকারী গাছ। এ গাছ দিয়ে বেড়া তৈরি করা, রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সবচেয়ে বড় উপকার হয় মাটি ক্ষয়রোধের কাজে।
দরিয়াহয়াপুর গ্রামের বৃদ্ধ সাদেকুর রহমান বলেন, ঢোলকলমি ফুল সারা বছরই ফোটে। এই ঢোলকলমির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো গরু ছাগলে না খাওয়ায় এটা বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তবে নানা কারণে এখন আর তেমন কলমি গাছ চোখে পড়ে না।
উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন অফিসার মো. মানিক হোসেন বলেন, ঢোলকলমি গাছ বাড়ির আঙ্গিনার পাড় ভাঙ্গা রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি অল্পদিনে ঘন জঙ্গলে পরিণত হয়। এখন আর কোথাও আগের মতো ঢোলকলমির গাছ চোখে পড়ে না।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, দেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে বেড়ালতা হিসেবে পরিচিত এই ঢোলকলমি। এটি খালপাড়ের মাটিকে শক্ত করে রাখা, ভ‚মিক্ষয় রোধ, ভাঙন রোধে গুরুত্বপূর্ন ভ‚মিকা রাখে। তাই প্রাণ ও প্রকৃতি সুরক্ষায় মূল্যবান এই উদ্ভিদকে সংরক্ষণ ও সম্প্রসারনের জন্য সকলের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।