বিশেষ প্রতিনিধি:
চাঁদপুরে থেমে নেই বাল্য বিয়ে। হার তুলনামূলক কমলেও প্রকাশ্যে গোপনে বাল্য বিয়ে চলছেই। সাম্প্রতিক সময়েও বেশ কিছু এলাকায় বাল্য বিয়ে সংগঠিত হতে দেখা গেছে। নিয়মিতই প্রশাসন বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে সরব থাকলেও কিছু কাজীর গোপন আঁতাতের মাধ্যমে বিয়ে আটকে থাকছে না। বিশেষ করে বর বা কনের বয়স আঠারোর নিচে হলে অভিভাবকদের কৌশল বাতলে দেন যেমনি। তেমনি নিজেরাও সুনিপুন কৌশল অবলম্বন করেন। সাধারণত বিয়ের পরপরই নিকাহ্নামার অনুলিপির প্রয়োজন হয় না। তাই কিছু কিছু কাজী প্রথমে অপ্রাপ্ত বষয়স্ক বর বা কনের তথ্য একটি আলাদা কাগজে সংরক্ষণ করেন। পরে সময় মতো বা প্রয়োজনের সময় তা বালাম বইয়ে লিপিবদ্ধ করেন। এ কাজটি করতে সুবিধা হয়, কারণ নিকাহনামার বালাম বই কাজীদের কাছেই সংরক্ষণে থাকে। এসব বালাম বইয়ে সরকারি বিশেষ কোনো নজরদারি না থাকায় সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করছে কাজী সমাজের একটি পক্ষ। যদিও আইনও কাজীদের পক্ষেই রয়েছে। যে কারণে এহেন কাজ করতে তাদের সুবিধা হয়।
মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০০৯ এর ২৩ ক (১) ধারায় বলা আছে, নিকাহ রেজিস্ট্রারগণ নিকাহ রেজিস্ট্রির পূর্বে জাতীয় পরিচয়পত্র/ জন্মনিবন্ধন সনদ পরীক্ষা করে বিবাহ পড়াবেন। উক্ত আইনের ২৩(৩) ধারায় বলা আছে বিবাহ নিবন্ধনের সময় বর কনে বা অন্য কেউ কোন মিথ্যা তথ্য দিলে এবং উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে কোন বিবাহ নিবন্ধন করা হলে তার জন্য কোন নিকাহ্ রেজিস্ট্রার দায়ী হইবেন না। উল্লেখিত বিধিমালা থেকে ষ্পষ্ট বুঝা যায় যে, সরল বিশ্বাসে জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র, এফিডেফিট ও সাক্ষীদের প্রদত্ত তথ্য মতে বিবাহ রেজিস্ট্রি করলে তার জন্য নিকাহ রেজিস্ট্রার দায়ী থাকবেন না।
বাল্য বিয়ে এবং বিয়ে নিবন্ধণ বিষয়ে অভিভাবকদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, মূলত মেয়ের দিয়ে বেশিই আতঙ্কে থাকতে হয়। কখন কি হয়ে যায়। তাই যতদ্রুত সম্ভব মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতে পারলেই ভালো। এক্ষেত্রে অনেক সময় বয়স বাধ সাধে। কাজীরা জন্মনিবন্ধন বা সার্টিফিকেট চায়। তখনই তৈরি হয় সমস্যা। অবশ্য পরে একটা সমঝোতার মাধ্যমে বিয়ে কাজ সারি। কারণ বিয়ের পরপরইতো আর কাবিননামা বা নিকাহনামা প্রয়োজন হয় না। যখন প্রয়োজন হয় সুবিধামতো তথ্য বসিয়ে তা উঠিয়ে নিলেই হয়।
সম্প্রতি সাপ্তাহিক শপথ এর হাতে কিছু কাগজপত্র হাতে আসে। এতে দেখা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্ট্রারের মাধ্যমে একটি বিয়ে সম্পন্ন হয় ২০ আগস্ট ২০১৪ সালে। নিকাহনামার অনুলিপিতে দেখা যায় কনের বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ১জুন ১৯৯৬ সাল। অথচ ওই কনের প্রকৃত বয়স সার্টিফিকেট ও জন্ম নিবন্ধন খতিয়ে দেখলে পাওয়া যায় বয়স ১জুন ১৯৯৯ সাল।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্ট্রার তথা কাজী হাফেজ মাওলানা মোঃ সাইফুল ইসলামের সাথে কয়েক দফায় যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা জন্ম নিবন্ধনের উপর ভিত্তি করে বিয়ে পড়াই। এই বিয়ের ক্ষেত্রে কাগজ পত্র দেখে আমি কথা বলতে পারবো। পরে রোববার সন্ধ্যায় তিনি ফোনে যোগাযোগ করতে বলেন। রোববার রাত আটটায় কল দিলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
চাঁদপুর জেলা কাজী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবু সুফিয়ান জানানা, এক্ষেত্রে বিয়ে হয় পরিবার কর্তৃক। এখানে রেজিস্ট্রারের কোনো দায়ভার নেয়ার সুযোগ নেই। যারা বিয়ে পড়ায় তারা নিশ্চয় কোনো না কোনো কাগজ উপস্থাপন করে। কোনো কোনো অভিভাবক একাধিক জন্মনিবন্ধন উপস্থাপন করে। সেক্ষেত্রে সেই কাগজপত্রের উপর ভিত্তি করেই বিয়ে পড়ানো হয়। যা পরিবারের পক্ষ থেকে সঠিক বলে নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে কাজীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে কোনো লাভ নাই।
বাল্য বিয়ে ও কিছু কাজীর এহেন কর্মকান্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে চাঁদপুর জেলা রেজিষ্ট্রার মোহাম্মদ সেলিম মল্লিক জানান, আমরা কাজীদের ভয় পাই। মূলত তাদের সব কাজ আমরা মনিটরিং করতে পারি না। কিছুকিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেই। কিন্তু তাও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে অবহিত করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। এর পরেও এমন অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অবিহিত করবো।
প্রসঙ্গত, কাজীদের বিরুদ্ধে যেকোন অনিয়ম এর অভিযোগ মুসলিম বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন বিধিমালা ২০০৯ এর ২৪ ধারার বিধান অনুসারে জেলা রেজিস্ট্রারের নিকট কোন অভিযোগ করতে হবে। উক্ত আইনের বিধান মতে, বিবাহ নিবন্ধন সংক্রান্ত যেকোন অভিযোগ নিকাহ্ রেজিস্ট্রার কর্তৃক প্রত্যাখ্যানের ৩০ দিনের মধ্যে জেলা রেজিস্ট্রারের নিকট আপিল পেশ করতে হবে এবং এই আপিল সংক্রান্তে জেলা রেজিস্ট্রারের আপিল চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। উক্ত আইনের ২৮ ধারার বিধান মতে নিকাহ রেজিস্ট্রার কাবিননামায় স্বাক্ষর না করলে উক্ত কাবিননামা প্রত্যাখ্যান বা ফেরত/বাতিল মর্মে গণ্য হবে।
আজ,
বৃহস্পতিবার , ৫ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ , ২০ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।