আনোয়ার হোসেন:
আমার বাবা জিন্নত আলী মাস্টার একজন মানুষ গড়ার কারিগর ছিলেন। বহু শিক্ষার্থীকে তিনি শিক্ষা দান করেছিলেন। তিনি সররাবাদ নোয়াপাড়া সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। নরসিংদী জেলার একটা অজোঁপাড়া গাঁয়ে কেটেছে আমাদের বাল্যকাল। বাবার সাথে আমি খুব ফ্রি ছিলাম। বাবা শুধু শিক্ষকই ছিলেন না, কৃষি কাজেও জড়িত ছিলেন। আমার এখনো মনে পরে যে কৃষি জমিতে হাল দিতে বাবার সাথে মাঠে যেতাম। আমাদের কৃষি জমিতে প্রচুর ধান হতো। এছাড়া সিজনে বিভিন্ন ধরণের শাক সবজিও চাষ করতাম। বাবার সাথে কৃষি কাজে লেগে পড়তাম এটি ছিল একটা আনন্দের জায়গা। চরম মিস করি এখন সেই সময়টাকে। মনে হচ্ছে যত বড় হচ্ছি ততই যেন কেমন কেমন হয়ে যাচ্ছি। পুরোনো দিনগুলো বেশ টানছে আমায়। বাবার স্বপ্ন ছিল আমি যেন শিক্ষক হই, তবে সেটা হয়ে উঠেনি। স্নাতকোত্তর পাস করার আগেই পুলিশে যোগ দেই। বাবা যেহেতু একজন শিক্ষক ছিলেন সেহেতু বাবা আমার পড়ালেখার ব্যাপারে খুবই যত্নবান ছিলেন। খারাপ ছেলেদের সাথে যেন না মিশি সে বিষয়টা খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখতেন। বাবার স্বল্প আয়ে আমাদের সবাইকে শিক্ষিত করেছেন। বড় ভাই আলমগীর হোসেন ঢাকায় ব্যবসা করেন। ছোটভাই আক্তার হোসেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত। একান্নবর্তী পরিবারেই আমাদের বসবাস। আমরা তিন ভাই চার বোন।
ব্রহ্মপুত্র নদে আমরা কত যে সাঁতার কেটেছি। আমার এখনো মনে আছে যে বাবাসহ হাঁটু জলে আমরা গাভীকে গোসল করাতাম। বলে রাখা ভাল যে বাবা বেশ কয়েকটি গাভী পালতেন। বাবা আমাদের নতুন জামা কিনে দিতেন কিন্তু নিজে কিনতেন না। আসলে তিনি তার কষ্টটা আমাদের বুঝতে দিতেন না। এটা পৃথিবীর সকল বাবারাই করে থাকে। বাবার সবচেয়ে ভাল দিকটি ছিল ছোট আর বড় হোক কাউকে দেখলেই তিনি সালাম দিতেন এবং তার এই সৌজন্যবোধ আমাকে বেশ অনুপ্রাণিত করতো। বাবার কাছেই শিখেছি সৌজন্যবোধ। বাবাকে ভালবাসার জন্য দিবস গুরুত্বপূর্ণ নয়, বাবাকে ভালবাসি এটাই গুরুত্বপূর্ণ। যেকথা বাবাকে বলা হয়নি, ভাল বেতনে চাকরি করে বাবাকে খুশি রাখতে চেয়েছিলাম। বাবা মা দুজনেই এখন নেই। তাই তাঁদের মিস করছি খুব। সমাজে অনেকে আছেন দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করেন না। এমন অনেক সংবাদই আমরা দেখি। আমি মনে করি যতই বড় হও না কেন বাবা মা কে ভাল না বাসলে মূল্য নেই।
আমাদের বাড়ি নরসীংদি জেলার রায়পুরা থানা, মাহমুদাবাদ (নীলকুঠি)। বাবা ২০০৮ সালে আমাদের ছেড়ে পরপারে পারি জমান। বাবার অভাবটা এখনো হারে হারে টের পাই। বাবা যে আসলেই সন্তানের জন্য ছাদ এটি সত্যিই এখন উপলদ্বি করছি। বাবা দিবসে একটাই প্রত্যাশা পৃথিবীর সকল বাবারা ভাল থাকুক।
লেখক: আনোয়ার হোসেন
উপ-পুলিশ পরিদর্শক, ফরিদগঞ্জ থানা।