চাঁদপুরের তুমুল জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা ইউসুফ গাজী। রাজনীতি করেছেন দীর্ঘ ৪০ বছর। চাঁদপুর জেলা যুবলীগকে সুসংগঠিক করেছিলেন তিনি। বর্তমানে চাঁদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ঐতিহ্যবাহী চাঁদপুর পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হেরে গিয়ে রাজনীতির মাঠে কেমন যেন নিভৃতচারী হয়ে গেছেন। চাঁদপুর সু-পরিচিত মুখ রাজনীতির সুপাস্টারখ্যাত ইউসুফ গাজীর সাথে সাপ্তাহিক শপথ এর সম্প্রতি কথা হয় বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে।
সাপ্তাহিক শপথ : কেমন আছেন ?
ইউসুফ গাজী: আলহামদুল্লিাহ! ভালো আছি।
সাপ্তাহিক শপথ : ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনের পর থেকে রাজনীতির মাঠে আপনাকে খুব একটা দেখা যায় না। কারণ বলবেন?
ইউসুফ গাজী: কিছু সময় নিয়ে বললেন, এসময়ে যে রাজনীতি হয় তা আমার জন্য নয়। তারপরেও শারীরিক অবস্থা আগের মতো না হওয়ায় সেভাবে সময় দিতে পারি না। বাসায় বসেই অবসর সময় কাটাই। নিরিবিলি থাকি। দলীয় উল্লেখযোগ্য কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার চেষ্টা করি।
সাপ্তাহিক শপথ : রাজনীতি আপনার নেশা পেশা ছিলো। কিন্তু এখন ?
ইউসুফ গাজী : একদিক দিয়ে বলতে গেলে সঠিক পথেই আছি। কিছু ত্রুটি বিচ্ছ্যুতি বাদ দিলে ঠিক আছে। উল্লেখ্যযোগ্য একটি রাজনৈতিক দলের ফ্যান্ডামেন্টাল বিষয় থাকে। এবারের জাতীয় নির্বাচনে মানুষের অধিকারে ব্যত্যয় ঘটেছে। যার কারণে পরবর্তি নির্বাচনে মানুষকে আহবান করেও আনা যাচ্ছে না। একসময় আওয়ামীলীগ স্লোগান তুলেছে ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’। এ স্লোগান এখন নাই। মানুষ আলোচনা করে সেটাই যে ভালো মানুষের কাজ থেকে প্রত্যাশা করে না। অর্থাৎ ভালো লোক খারাপ কাজ করলে বেশি সমালোচিত হতে হয়। আওয়ামীলীগের কাছে মানুষ এটা প্রত্যাশা করে না। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ এমন হবে মানুষ এটাকে সহজ ভাবে নেয় না।
এখনো দলের সাথে সম্পৃক্ত আছি। কর্মসূচীতে কম যাই। যারা নেতৃত্বে আছে তাদের সাথে এডজাস্ট হতে পারছি না। মানুষ আমাদের কাছে কী চায়? আমরা কি মানুষের চাওয়া বাস্তবে রূপ দিতে পারছি? আমরা যদি ভাবি মানুষ কিছু বুঝে না; তা কিন্তু ভুল।
সাপ্তাহিক শপথ : রাজনৈতিক জীবনে কোনো আক্ষেপ আছে কি?
ইউসুফ গাজী : আক্ষেপ থাকার কথা না। নেতৃত্বের দূর্বলতা এবং গ্রহণযোগ্যতার কারণে সংগঠন আলোচিত হয় সমালোচিত হয়। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ ছিলো সাধারন মানুষের। দু’বেলা ভাত, আইনের শাষণ, দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আর এখন মানুষের আয় বাড়ছে। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু মানুষের নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে। মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে। এখন মানুষ শুধু উপরে উঠতে চায়। নিচে কি লাশ? না অন্য কিছু তা দেখার যেন ফুসরত নেই। কোথাও দূর্ঘটনা ঘটলে মানুষ এখন সেলফি তুলে। প্রয়োজনে কি করতে হবে তাই আমার ভুলতে বসেছি। মানবতাবোধ উঠে গেছে আমাদের মন থেকে।
সাপ্তাহিক শপথ : চাঁদপুরের রাজনীতি কোন দিকে?
ইউসুফ গাজী : দীপু মনি এখন চাঁদপুরের রাজনীতির কেন্দ্র বিন্দু। তিনি যদি ইচ্ছে করেন রাজনৈতিকদের সঠিক স্থানে বসাতে পারেন। তাহলে রাজনীতি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। একজন প্রকৃত দক্ষ ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব হলো যোগ্য লোককে যোগ্যস্থানে বসানো। সেটা নিশ্চয় তিনি করবেন।
সাপ্তাহিক শপথ : আগামী পৌর নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন ?
ইউসুফ গাজী : আমি খুব বেশি আগ্রহী না। তবে মানুষের চাহিদা আছে। কিন্তু নির্বাচনের যে অবস্থা সেখানে কিভাবে যাই। বর্তমান সময়ে যে নির্বাচন হচ্ছে গ্রহণযোগ্যতার কোনো মূল্য থাকবে না। এখনকার যে নির্বাচন পদ্ধতি বিবেক আমাকে সায় দেয় না।
সাপ্তাহিক শপথ : লোক বলে আপনার অনেক অহংকার হয়েছে। তাই পতন…
ইউসুফ গাজী : আমাকে যারা অপছন্দ করেছে তারাই এমন কথা ছড়িয়েছে। মেয়ে মানুষের শত্রু হচ্ছে রূপ। রাজনৈতিকদের শত্রু হচ্ছে জনপ্রিয়তা। যখন মানুষ আমাকে ভালোবাসলো। তখন আমার বিরুদ্ধচারণ শুরু হলো। এখন জনপ্রিয়তার ভাটা এখন আর কেউ বিরোধীতা করবে না।
সাপ্তাহিক শপথ : এখন নির্বাচন হলেই প্রার্থীর ভিড় বাড়ে; কি বলবেন?
ইউসুফ গাজী : এখন যে সহজ পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে এভাবে অব্যাহত থাকলে প্রার্থী আরো বাড়বে। আগে জনগণের মনোভাবের উপর প্রার্থী হতো। এখন প্রভাবশালীর আর্শিবাদে প্রার্থী হয়। আমার বিরম্বনার কারন একথার জন্যেই হতে পারে। মূলত মানুষ এখন উচিত কথা সহ্য করে না। আমি দুইবার জনপ্রতিনিধি হয়েছি মানুষের ভোটে। তাদের ভালোবাসায় পেয়েছি। আমিও ভালোবেসেছি। সবসময়তো আর জোয়ার থাকে না। আবার, সবসময় বন্যাও হয় না। সবসময় সুদিনও থাকে না। এখনো এলাকার মানুষ আমায় ভালোবাসে। তার প্রমাণ পাই রাস্তায় বেরুলে।
সাপ্তাহিক শপথ : সময় কাটছে কিভাবে?
ইউসুফ গাজী : অবসর সময় কাটাচ্ছি। তবে সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত আছি। শরীর বেশি ভালো যাচ্ছে না। এই ভালো যাচ্ছে তো এই খারাপ। এ নিয়েই আছি।
সাপ্তাহিক শপথ : আপনি কি এখন রাজনীতিতে আলোহীন প্রদীপ ?
ইউসুফ গাজী : আলোহীন প্রদীপ। একটু ভেবে… প্রদীপকে জ্বলতে দিতে হবে তো। ক্ষমতার বাইরে থাকলে মানুষের আলোচনা কতোদিন চলে? কিন্তু মানুষ এখনো আমাকে ভালোবাসে। দলের বাইরে সাধারন মানুষের পছন্দ সবাই তৈরী করতে পারে না। কিন্তু আদর্শ নেতাকে দল মতের বাইরে মানুষ ভালোবাসে।
সাপ্তাহিক শপথ : প্রার্থী বা নেতা হিসেবে আপনার অযোগ্যতা কি ?
ইউসুফ গাজী : বর্তমান রাজনীতির সাথে আমি আমাকে মানতে পারছিনা। এখনকার রাজনৈতিক অধিকাংশের যে যোগ্যতা সে যোগ্যতা আমার নাই।
সাপ্তাহিক শপথ : সময়ের প্রয়োজনে একটু পরিবর্তন হলে কি এমন ক্ষতি?
ইউসুফ গাজী : আমি সেটা পারবো না। রাজনৈতিক নেতাদের যদি সততা না থাকে তাহলে তার আর কিছু অবশিষ্ট্য থাকে না। শুধু চেয়ারের জন্য নীতির বাহিরে যেতে পারবো না। আমি আমার জন্য রাজনীতি করি না। আমি আমার শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও নীতি আদর্শের মধ্যে থেকেই মানুষের পাশে থাকতে চাই।
পৌর নির্বাচনে নমিনেশন চাইবো। দল যদি মনোনয়ন দেয় তবে অবশ্যই নির্বাচন করবো। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নয়। মানুষের সেবা করতে চাই।
সাপ্তাহিক শপথ: সময় দেয়ার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ইউসুফ গাজী: সাপ্তাহিক শপথের জন্যে শুভকামনা থাকলো।
আজ,
শনিবার , ১ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ , ১৮ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।